হযরত আবু হাফস হাদ্দাদ খোরাসানী (রঃ) – পর্ব ১

খোরাসানের এক কামার। দারুণ আসক্ত এক রূপসী যুবতীর প্রেমে। তাকে না পেলে কামার বুঝি প্রাণেই মারা যান। ছুটলেন নিশাপুরের এক ইহুদী জাদুকরের কাছে। প্রেমিকাকে পেতেই হবে। জাদুকর বলল, ঠিক আছে। তাকে পাওয়া যাবে। তবে একটা শর্ত আছে। তা হল, চল্লিশ দিন ধরে কামার কোন এবাদত বা কোন রকমের সৎ কাজ করতে পারবেন না।

এর আর এমন কথা কী! কামার রাজি হয়ে গেলেন। প্রেমিকার জন্য তিনি সর্বস্ব ত্যাগ করতেও প্রস্তুত। বন্ধ হয়ে গেল তাঁর এবাদত। কোন ভালো কাজ করাই ইচ্ছাও মূলতবি রইল। এভাবে চল্লিশ দিন কাটানোর পর তিনি জাদুকরের শরণাপন্ন হলেন আবার। কিন্তু জাদুকর তাঁর ওপর জাদুবিদ্যা প্রয়োগ করে বিন্দুমাত্র ফলও পেল না? কারণ কি? জাদুকর সন্দেহ করল, ঐ চল্লিশ দিনের মধ্যে নিশ্চয়ই কামার এমন কিছু করেছেন, যা সৎ কাজ বলে গণ্য হতে পারে। কিন্তু কামারও খুব ভালো করে ভেবে দেখলেন, না, তেমন কিছুই করেননি। তবে হ্যাঁ হঠাৎ মনে হল, একদিন পথ চলতে চলতে পথের ওপর পড়ে থাকা পাথর পা দিয়ে সরিয়ে দিয়েছেন এই ভেবে যে, হয়তো বা কোন পথচারীর পা ফসকে যেতে পারে।

তা হল এই! জাদুকর ধরে ফেলল ব্যাপারটা। দীর্ঘ চল্লিশ দিন ধরে কামার মানুষের জন্য করণীয় আল্লাহর নির্দেশ অগ্রাহ্য করেছেন। তবুও দয়াময় আল্লাহ সামান্য একটা সৎ কাজের বিনিময়ে তাঁকে পাপাচারে লিপ্ত হতে দেননি। জাদুকর বললেন, এরপরও কি মহান আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করে তাঁর নিষিদ্ধ কাজগুলিই তিনি করে যাবেন?

চেতনার ওপর যেন চাবুক পড়ে। ছি! ছি! সত্যিই তো! এ তিনি কী করছেন। একটি নারীর লোভে ডুবে গেছেন পাপের গভীরে? জাদুকরের হাতে হাত রেখে কর্মকার বললেন, আপনি সাক্ষী থাকুন আমি প্রতিজ্ঞা করছি, জীবনে আর কোনদিন কোন রকমের কুকাজে লিপ্ত হবো না।

অতঃপর শুরু হল পরিশ্রুত জীবন। কর্মকারের কাজে প্রতিদিন এক দীনার রোজগার করে তিনি দান করে দেন। আর দান করেন গোপনে। যেন দানের খবর প্রকাশ না হয়। এশার নামাজের পর মানুষের ফেলে দেওয়া শাকপাতা সংগ্রহ করে রান্না করে তাই দিয়ে রুটি খান। আর এইভাবে দেখতে দেখতে এক বছর কেটে যায়।

একদিন এক অন্ধ তাঁর কামারশালার পাশ দিয়ে যেতে যেতে কুরআন পাকের একটি আয়াত পাঠ করছিল- রোজ কিয়ামতে তারা যা ধারণাও করতো না, আল্লাহ পাকের তরফ থেকে তা বের হয়ে পড়বে।

সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া

হযরত আবু হাফস হাদ্দাদ খোরাসানী (রঃ) – পর্ব ২   পড়তে এখানে ক্লিক করুন   

Written By

More From Author

হযরত আবু হাফস হাদ্দাদ খোরাসানী (রঃ) – পর্ব ১

খোরাসানের এক কামার। দারুণ আসক্ত এক রূপসী যুবতীর প্রেমে। তাকে না পেলে কামার বুঝি প্রাণেই মারা যান। ছুটলেন নিশাপুরের এক ইহুদী জাদুকরের কাছে। প্রেমিকাকে পেতেই হবে। জাদুকর বলল, ঠিক আছে। তাকে পাওয়া যাবে। তবে একটা শর্ত আছে। তা হল, চল্লিশ দিন ধরে কামার কোন এবাদত বা কোন রকমের সৎ কাজ করতে পারবেন না।

এর আর এমন কথা কী! কামার রাজি হয়ে গেলেন। প্রেমিকার জন্য তিনি সর্বস্ব ত্যাগ করতেও প্রস্তুত। বন্ধ হয়ে গেল তাঁর এবাদত। কোন ভালো কাজ করাই ইচ্ছাও মূলতবি রইল। এভাবে চল্লিশ দিন কাটানোর পর তিনি জাদুকরের শরণাপন্ন হলেন আবার। কিন্তু জাদুকর তাঁর ওপর জাদুবিদ্যা প্রয়োগ করে বিন্দুমাত্র ফলও পেল না? কারণ কি? জাদুকর সন্দেহ করল, ঐ চল্লিশ দিনের মধ্যে নিশ্চয়ই কামার এমন কিছু করেছেন, যা সৎ কাজ বলে গণ্য হতে পারে। কিন্তু কামারও খুব ভালো করে ভেবে দেখলেন, না, তেমন কিছুই করেননি। তবে হ্যাঁ হঠাৎ মনে হল, একদিন পথ চলতে চলতে পথের ওপর পড়ে থাকা পাথর পা দিয়ে সরিয়ে দিয়েছেন এই ভেবে যে, হয়তো বা কোন পথচারীর পা ফসকে যেতে পারে।

তা হল এই! জাদুকর ধরে ফেলল ব্যাপারটা। দীর্ঘ চল্লিশ দিন ধরে কামার মানুষের জন্য করণীয় আল্লাহর নির্দেশ অগ্রাহ্য করেছেন। তবুও দয়াময় আল্লাহ সামান্য একটা সৎ কাজের বিনিময়ে তাঁকে পাপাচারে লিপ্ত হতে দেননি। জাদুকর বললেন, এরপরও কি মহান আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করে তাঁর নিষিদ্ধ কাজগুলিই তিনি করে যাবেন?

চেতনার ওপর যেন চাবুক পড়ে। ছি! ছি! সত্যিই তো! এ তিনি কী করছেন। একটি নারীর লোভে ডুবে গেছেন পাপের গভীরে? জাদুকরের হাতে হাত রেখে কর্মকার বললেন, আপনি সাক্ষী থাকুন আমি প্রতিজ্ঞা করছি, জীবনে আর কোনদিন কোন রকমের কুকাজে লিপ্ত হবো না।

অতঃপর শুরু হল পরিশ্রুত জীবন। কর্মকারের কাজে প্রতিদিন এক দীনার রোজগার করে তিনি দান করে দেন। আর দান করেন গোপনে। যেন দানের খবর প্রকাশ না হয়। এশার নামাজের পর মানুষের ফেলে দেওয়া শাকপাতা সংগ্রহ করে রান্না করে তাই দিয়ে রুটি খান। আর এইভাবে দেখতে দেখতে এক বছর কেটে যায়।

একদিন এক অন্ধ তাঁর কামারশালার পাশ দিয়ে যেতে যেতে কুরআন পাকের একটি আয়াত পাঠ করছিল- রোজ কিয়ামতে তারা যা ধারণাও করতো না, আল্লাহ পাকের তরফ থেকে তা বের হয়ে পড়বে।

সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া

হযরত আবু হাফস হাদ্দাদ খোরাসানী (রঃ) – পর্ব ২   পড়তে এখানে ক্লিক করুন   

Written By

More From Author

You May Also Like

মুগীরা ইবন শু’বা (রা)

নাম আবু আবদিল্লাহ মুগীরা, পিতা শু’বা ইবন আবী আমের। আবু আবদিল্লাহ ছাড়াও আবু মুহাম্মাদ ও…

সাপের তওবা

একটি সাপের ঘটনা বর্ণনা করছি। আমার কাছে যারা তালীম গ্রহন করতে আসে প্রথমেই আমি কাউকে…

আবদুল্লাহ ইবন হুজাফাহ আস-সাহমী-(রা)

আবু হুজাফাহ আবদুল্লাহ নাম। পিতার নাম হুজাফাহ। কুরাইশ গোত্রের বনী সাহম শাখার সন্তান। ইসলামী দাওয়াতের…