হযরত শাহজালাল (রঃ ) – পর্ব ১৮

হযরত শাহজালাল (রঃ) – পর্ব ১৭ পড়তে এখানে ক্লিক করুন

তিনি কারো মুখাপেক্ষী নন। তিনি সারা বিশ্বকে সুন্দর করে সৃষ্টি করেছেন এবং তিনিই প্রতিপালন করেন। তিনিই আমাদের একমাত্র উপাস্য। আল্লাহ যখন ১৮ হাজার মাখলুকাত সৃষ্টি করে মানব জাতিকে আশরাফুল মাখলুকাত বলে আখ্যা দিলেন সে ভাবেই তো আমাদের জীবন যাপন করতে হবে। তোমরা মনে রাখবে মানুষ সকলের চেয়ে সম্মান্তি তাই কোন মানুষকে ঘৃণার চোখে দেখবে না। এ সম্পর্কে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পবিত্র কোরআনে এরশাদ হচ্ছে, যে ব্যক্তি কোন মানুষকে হিংসা করে ও মনে ব্যথা দিবে তাঁর ইবাদত কবুল হবে না।

এ কথাও তোমরা স্মরণ রেখ পৃথীবির মানুষ পাপ পুণ্যে বিজড়িত। সেহেতু কোন মানুষকে পাপী বলে ডাকা যাবে না। কারণ রাতের অন্ধকার যেমন আলোর পরশে বিদূরীত হতে পারে, তেমনি পাপী লোকেরাও পুণ্যবান লোকদের সংস্পর্শে এসে পুণ্যবান হতে পারে। কোন মানুষের সাথে খারাপ ব্যবহার, মানুষে মানুষে বিবাদ ও ভেদাভেদ সৃষ্টি করা ইসলামের অমার্জনীয় অপরাধ আর এসবের মূলে হল নিজের জিহবা। এসম্পক্যে রাসূলে মকবুল (সাঃ) বলেছেন যে ব্যক্তি স্বীয় জিহবা ও লজ্জাস্থান সংবরণ করবে আমি তাঁর বেহেস্তের জামিন হব। অতএব, বুঝা যায় যে, মানুষের জীবন চলার পথে লজ্জাস্থান ও জিহবাকে সংবরণ করতে হবে। নচেৎ জীবনে উন্নতির শিখরে আরোহন করা সম্ভব নয়।

কোন দুঃখী গরীব দুঃখীদের সাথে কখনও কঠোর ব্যবহার করো না। তাদের সাথে সৎ ব্যবহার করবে। এবং তাদের সাহায্যের জন্য নিজেকে আত্ম নিয়োগ কর। প্রতিবেশী অনাহারে অনিদ্রায় আর তুমি পেটপুরে খাবে এটা ইসলামে গর্হিত কাজ। কখনও ইসলাম তা পছন্দ করে না। সব সময় গরীবের প্রতি খেয়াল রাখবে। পাপ ছোট হলেও তাঁকে বড় মনে করে তা থেকে বিরত থাকবে। পক্ষান্তরে ছোট হলেও তাঁকে বড় মনে করে তা আকড়িয়ে ধরবে। হাশরের ময়দানে তোমরা দেখবে সামান্য পাপের কারণেও মানুষ দোযখে যাবে আবার সামান্য সওয়াবের কারণে মানুষ বেহেস্তে যাবে। উপস্থিত জনগণ হযরতের বানী শুনে দুঃখে কাঁন্নায় ঢলে পড়লেন বুঝতে পারলেন যে হযরত শাহাজালাল (রঃ) অতি শীঘ্রই আমাদের থেকে চির বিদায় নিবেন। শ্রীহট্টের জনগণ এবারে শোক সাগরে ভাস্তে শুরু করলেন। সে যাই হোক পরিশেষে সকলকে নিয়ে হাত তুলে দোয়া করলেন হায় আল্লাহ! আমি চলে যাচ্ছি তুমি আমার ভক্ত বৃন্দদের সৎপথে চলার তৌফিক দান কর। এরপর তিনি সকলের গুণাহের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়ে বিদায় সভা সমাপ্ত করলেন।

ইন্তেকালঃ প্রত্যেক মানুষ মৃত্যুর শরবত পান করতে হবে। এ নশ্বর কেহই অমর হতে পারেনি। কোন নবী পয়গম্বর, অলি আওলিয়া, রাজা বাদশা কেউই মৃত্যুর তুহিন পরশ থেকে রেহাই পায়নি। হযরত শাহাজালাল (রঃ) এর জীবনেও কোন বিপরীত হয়নি। এক সময় মহা তাপস হযরত শাহাজালাল (রঃ) এর ও মৃত্যুর ডাক এল। এ বিশ্বের বুক ঘোর তমসার অন্ধকার কেটে যখন আলোর দিশা পেল এ বাংলার মানুষ এহেন সন্ধিক্ষণেই সুবিশাল জীবনে মহাদায়িত্ব ভার পালন করে তাঁর জিবনেও সমাপ্তি রেখা টানলেন।

জনদরদী গরিবের বন্ধু মহাসাধক হযরত শাহাজালাল (রঃ) ১৩৮৪ সালে জিলহজ্জ মাসের ২০ তারিখ সারা বাংলার মানুষকে শোক সাগরে অতল গহবরে ডুবিয়ে দুনিয়া থেকে চির বিদায় নিয়ে চলে যান। ইন্না লিল্লাহে অইন্না ইলাইহে রাজেউন। মহা পুরুষ হযরত শাহাজালাল (রঃ) আজীবন নিষ্কাম কঠোর সাধনা সংযম ও পরিশ্রমের মধ্যেই জীবন কাটিয়েছে। দুনিয়ার আবর্তে যখন তিনি বৃদ্ধবস্থায় উপনীত হলেন, তখন কঠোর সাধনায় নিজেকে আত্মা নিয়োগ করেছেন। এত পরিশ্রম করায় শারীরিক দুর্বল হয়ে পড়াও ছিল স্বাভাবিক এক সময় তিনি তাঁর শারীরিক দুর্বলতা বেশী ভাবেই অনুধাবন করতে পারলেন এবারে আল্লাহর ওলি হযরত শাহজালাল (রঃ) বুঝতে পারলেন যে তার প্রস্থানের সময় এসে গেছে।

সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া

হযরত শাহজালাল (রঃ ) – পর্ব ১৯ পড়তে এখানে ক্লিক করুন

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।