হযরত শাহজালাল (রঃ ) – পর্ব ১৭
হযরত শাহজালাল (রঃ ) – পর্ব ১৬ পড়তে এখানে ক্লিক করুন
শাহজালাল (রঃ)-এর শেষ জীবনঃ
ওলিকুলের শ্রেষ্ঠতম সত্যের মহাসাধক হযরত শাহজালাল মহাসাধনার মাধ্যমে অর্জন করেছিলেন আল্লাহর প্রেম। তাইতো মানুষ আজ ইসলাম স্মরণ করে ভক্তি করে। তিনি যেমন ছিলেন ওলিকুলের শিরমণি সত্যের মহাসাধক ও ইসলাম প্রচারক তেমনি তিনি ছিলেন একজন জনদরদী সমাজ সেবক মহামানব। জনকল্যাণমূলক কাজের জন্যই তিনি আজ সকল শ্রেণীর মানুষের কাছে স্মরণীয় বরণীয় হয়ে আছেন। তিনি একথা জানতেন সেবা করা মানেই তার সৃষ্টজীব মানুষের সেবা করা।
তাইতো তাঁর সারাটি জীবনই জন সেবার লক্ষ্যে উৎসর্গ করেছেন। এমনভাবে তিনি জনগণের কল্যাণের জন্য নিজেকে বিলীন করেছেন যে তিনি নিজের খাওয়া দাওয়ার কথা ভুলে যেতেন।
কিন্তু দুনিয়ার কোন সুখ-শান্তি থেকে তাঁর অন্তরে স্থান পায়নি। তিনি সর্বদা এ নশ্বর জগতের মায়া মোহ-লোভ-লালসা, সুখ-শান্তি থেকে নিজেকে দূরে রাখতেন যাতে করে আল্লাহর প্রেম বন্ধনের কোন ব্যাঘাত না ঘটে। তিনি এমন কোন কাজ করতেন না যাতে আল্লাহ নারাজ হয়ে যান। দিনের বেলায় তিনি অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে ইসলাম প্রচার করতেন এবং মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়ে তাদের সুখ সুবিধা দেখে তাদের মঙ্গলের জন্য উন্নয়নমূলক কাজ করতেন। অবসর সময়টুকুও তিনি আল্লাহর ইবাদতে মাধ্যমে কাটাতেন। তাইতো তিনি সকল প্রকার জ্ঞান লাভ করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তিনি যখন ধর্মের ব্যাপারে আলোচনা করতেন তখন জনগণ বুঝতো তিনিই একজন শ্রেষ্ঠ সমাজ সংস্কার ও রাজনীতিবিদ ও সুদক্ষ রাষ্ট পরিচালক। আবার যখন তিনি অর্থনীতির দিকে আলোকপাত করতেন, তখন সকলের মনে হত হযরত শাহাজালাল (রঃ) একজন অন্যতম অর্থনীতিবিদ কারণ তাঁর ঐকান্তিক ইচ্ছা ধর্ম নীতির সাথে রাজনীতি, অর্থনীতির সমাজনীতির সমন্বয়ে রাষ্ট্রকে সাধন ও প্রতিষ্ঠিত করা।
ইসলাম একটি পূনাঙ্গ জীবন বিধান তাই চলার পথে সর্বক্ষেত্রের প্রয়োজন মেটাতেই ইসলাম সক্ষম। আর এ আদর্শের বিধান জীবন চলার পথে সর্বক্ষেত্রের প্রয়োজন মেটাতেই ইসলাম সক্ষম। আর এ আর্দশের উপর প্রতিষ্ঠিত ছিলেন হযরত রাসূলে করীম (সাঃ) ও খোলাফায়ে রাশিদা। হযরত শাহাজালাল (রঃ) ছিলেন রাসূলের সুন্দরতম পূর্ণ আদর্শের উপর প্রতিষ্ঠিত সেহেতু তিনি রাসূলে ন্যায় সকল কাজ করার চেষ্টা করতেন। ইসলাম যেমন ব্যাপক তিনি তেমনি ব্যপক ভাবেই প্রচার করতেন। ইসলামকে কোন প্রতিষ্ঠিান বা সংগঠনের মধ্যে সীমিত রাখেননি। শুধু কেবল কালেমা, নামাজ, রোজা, হজ্জ, যাকাত, তাসবীহ তাহলিল, মসজিদ ও খানকার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখেনি। তিনি ইসলামের সকল নীতির উপর কড়া নজর রেখে সঠিক নীতির গুরুত্ব দান সহকারে ইসলাম প্রচার করেছেন। ইসলাম শব্দের অর্থ ব্যাপক ভাবে পর্যালোচনা করে সেই ভাবেই প্রচার করতেন। তিনি সমস্ত জীবন একেবারেই সাদাসিদের মধ্যে কাটিয়েছেন। বৃদ্ধবস্থায়ও তাঁর কোন পরিবর্তন ঘটেনি। শুধু মানুষ হিসেবে দেহিক অবস্থা একটু দুর্বল হয়েছিল। তিনি তাঁর জিবনে যাই কিছু করতেন। আল্লাহর রেজামন্দি হাসেলের জন্যই করতেন। তাইতো তিনি লাভ করেছিলেন আল্লাহর সন্তুষ্টি। হযরত শাহাজালাল (রঃ) এর বিদায়ী ভাষনঃ একথা দিবালোকের ন্যায় উজ্জ্বল যে সকল ওলি আওলিয়ার ভবিষ্যত বাণী সম্পর্কে কিছু না জানলেও ইশারা ইংগীতের মাধ্যমেও নিদের্শনের মাধ্যমে ভবিষ্যত সম্পর্কে কিছু অবগত হতে পারতেন। তাইতো হযরত শাহাজালাল (রঃ) এক সময় বুঝতে পারলেন যে তাঁর সময় শেষ হয়ে আসছে। সেজন্য তিনি সকল শিষ্য সাগরেদ, ভক্তবৃন্দ সকল অমুসলিম মুসলিমদেরকে ডেকে একত্র করে তাদের উদ্দেশ্যে বিদায়ী ভাষন দান করলেন। তিনি তাঁর ভাষনে সকলকে উদ্দেশ্যে করে বললেন, হে মানব সমাজ! তোমরা মনে প্রাণে বিশ্বাস কর যে আল্লাহ এক অদ্বিতীয় তাঁর কোন শরীক নেই। তিই কাকেও জন্ম দেননি বা কারো থেকে জন্ম নেননি।
সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া