হযরত ইসহাক ইব্রাহীম ইবনে আহমদ খাওইয়াস (রঃ) – পর্ব ৪

হযরত ইসহাক ইব্রাহীম ইবনে আহমদ খাওইয়াস (রঃ) – পর্ব ৩ পড়তে এখানে ক্লিক করুন

আর একবার এক অগ্নি উপাসক তরুণ তাঁর সফরসঙ্গী হওয়ার অনুমতি প্রার্থনা করে। তিনি তাকে বলেন, যেখানে তিনি যাচ্ছেন সেখানে যাওয়ার সাধ্য তার নেই। সে বলল, তা না হোক। মঙ্গললাভের দ্বারা উপকৃত হওয়া তো যাবে। দুজনে পথ চলতে লাগলেন। সাত দি চলে গেল। অষ্টম দিনে তরুণ সহযাত্রী কিছু খেতে চাইল। হযরত ইসহাক (রঃ) আল্লাহর কাছে খাবার প্রার্থনা করলেন। আল্লাহ মঞ্জুরও করলেন। মাছ, রুটি, কোর্মা ও নানারকম ফল, পানি। পরিতৃপ্তির সঙ্গে দুজনেই ভোজন করলেন।

আবার যাত্রা শুরু। আরও সাত দিন কেটে গেল। অষ্টম দিনে তরুণটির অলৌকিক শক্তি দেখতে চাইলেন। তরুণ লাঠির ওপর ভর দিয়ে মাথা নিচু করে কিছুক্ষণ কি যেন বলল। অমনি এসে গেল তাজা মাছ, রুটি, খোর্মা, ফলভর্তি খাঞ্জা ও পানির কলস। হযরত ইসহাক (রঃ) অবাক হয়ে গেলেন। তরুণ তাকে খেতে বলল। কিন্তু তিনি লজ্জাবশতঃ রাজি হলেন না। কিন্তু যুবকও শুনবে না। সে বলল, আসুন খান। আমি আপনাকে দুটি সুখবর দিচ্ছি। একটি হল, আমাকে কালেমা পড়িয়ে মুসলমান করে নিন বলে, কালেমা পাঠ করে সে মুসলমান হয়ে গেল।

দ্বিতীয় খবরটি হল যুবক আল্লাহর দরবারে এই বলে প্রার্থনা করেছিলেন যে, বৃদ্ধা দরবেশের শপথ, আল্লাহ যেন তাকে লজ্জিত না করেন। অতএব যা কিছু খাবার পাওয়া গেল, তা সবই হযরত ইসহাক (রঃ)-এর উসিলায় পাওয়া। এবার দুজনেই সানন্দে ভোজন করে মক্কার পথে যাত্রা শুরু করলেন। নও-মুসলিম মক্কাতেই রয়ে যায়।

একবার শাম দেশের কোন এক জায়গায় যেতে যেতে ডালিমের গাছ দেখে ডালিম খাওয়ার বড় ইচ্ছা হয় তাঁর। কিন্তু ঐ গাছের ডালিম এত টক যে, খেতে পারলেন না। চলে গেলেন মনের ইচ্ছা মনেই থেকে গেল। পথে এবার এক কুষ্ঠ রোগীর সঙ্গে দেখা। বেচারার সারা দেহে থকথকে ঘা আর পোকা। তাকে দেখে বড় মমতা হল তাঁর। বললেন, কুষ্ঠ রোগী যদি চায়, তিনি তার জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা জানাতে পারেন। লোকটির তেমন ইচ্ছা ছিল না। সে জানাল, বিপদ-আপদ আসে আল্লাহর ইচ্ছায়। আল্লাহর ইচ্ছার অধীনে সে তার ইচ্ছাকে রেখেছে। হযরত ইসহাক (রঃ) তখন তার ক্ষতস্থানের পোকা ও মাছি দূর করে দেয়ার অনুমতি চাইলেন। কিন্তু লোকটি সরাসরি বলে দিল, হে ইসহাক! আগে আপনি আপনার মন থেকে ডালিম খাওয়ার ইচ্ছা দূর করে দিন। তারপর আমার সুস্থতা কামনা করুন। আগে নিজের আত্মা নীরোগ করুন, পরে পরে ব্যথায় ব্যথিত হোন।

সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া

হযরত ইসহাক ইব্রাহীম ইবনে আহমদ খাওইয়াস (রঃ) – পর্ব ৫ পড়তে এখানে ক্লিক করুন

Written By

More From Author

হযরত ইসহাক ইব্রাহীম ইবনে আহমদ খাওইয়াস (রঃ) – পর্ব ৪

হযরত ইসহাক ইব্রাহীম ইবনে আহমদ খাওইয়াস (রঃ) – পর্ব ৩ পড়তে এখানে ক্লিক করুন

আর একবার এক অগ্নি উপাসক তরুণ তাঁর সফরসঙ্গী হওয়ার অনুমতি প্রার্থনা করে। তিনি তাকে বলেন, যেখানে তিনি যাচ্ছেন সেখানে যাওয়ার সাধ্য তার নেই। সে বলল, তা না হোক। মঙ্গললাভের দ্বারা উপকৃত হওয়া তো যাবে। দুজনে পথ চলতে লাগলেন। সাত দি চলে গেল। অষ্টম দিনে তরুণ সহযাত্রী কিছু খেতে চাইল। হযরত ইসহাক (রঃ) আল্লাহর কাছে খাবার প্রার্থনা করলেন। আল্লাহ মঞ্জুরও করলেন। মাছ, রুটি, কোর্মা ও নানারকম ফল, পানি। পরিতৃপ্তির সঙ্গে দুজনেই ভোজন করলেন।

আবার যাত্রা শুরু। আরও সাত দিন কেটে গেল। অষ্টম দিনে তরুণটির অলৌকিক শক্তি দেখতে চাইলেন। তরুণ লাঠির ওপর ভর দিয়ে মাথা নিচু করে কিছুক্ষণ কি যেন বলল। অমনি এসে গেল তাজা মাছ, রুটি, খোর্মা, ফলভর্তি খাঞ্জা ও পানির কলস। হযরত ইসহাক (রঃ) অবাক হয়ে গেলেন। তরুণ তাকে খেতে বলল। কিন্তু তিনি লজ্জাবশতঃ রাজি হলেন না। কিন্তু যুবকও শুনবে না। সে বলল, আসুন খান। আমি আপনাকে দুটি সুখবর দিচ্ছি। একটি হল, আমাকে কালেমা পড়িয়ে মুসলমান করে নিন বলে, কালেমা পাঠ করে সে মুসলমান হয়ে গেল।

দ্বিতীয় খবরটি হল যুবক আল্লাহর দরবারে এই বলে প্রার্থনা করেছিলেন যে, বৃদ্ধা দরবেশের শপথ, আল্লাহ যেন তাকে লজ্জিত না করেন। অতএব যা কিছু খাবার পাওয়া গেল, তা সবই হযরত ইসহাক (রঃ)-এর উসিলায় পাওয়া। এবার দুজনেই সানন্দে ভোজন করে মক্কার পথে যাত্রা শুরু করলেন। নও-মুসলিম মক্কাতেই রয়ে যায়।

একবার শাম দেশের কোন এক জায়গায় যেতে যেতে ডালিমের গাছ দেখে ডালিম খাওয়ার বড় ইচ্ছা হয় তাঁর। কিন্তু ঐ গাছের ডালিম এত টক যে, খেতে পারলেন না। চলে গেলেন মনের ইচ্ছা মনেই থেকে গেল। পথে এবার এক কুষ্ঠ রোগীর সঙ্গে দেখা। বেচারার সারা দেহে থকথকে ঘা আর পোকা। তাকে দেখে বড় মমতা হল তাঁর। বললেন, কুষ্ঠ রোগী যদি চায়, তিনি তার জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা জানাতে পারেন। লোকটির তেমন ইচ্ছা ছিল না। সে জানাল, বিপদ-আপদ আসে আল্লাহর ইচ্ছায়। আল্লাহর ইচ্ছার অধীনে সে তার ইচ্ছাকে রেখেছে। হযরত ইসহাক (রঃ) তখন তার ক্ষতস্থানের পোকা ও মাছি দূর করে দেয়ার অনুমতি চাইলেন। কিন্তু লোকটি সরাসরি বলে দিল, হে ইসহাক! আগে আপনি আপনার মন থেকে ডালিম খাওয়ার ইচ্ছা দূর করে দিন। তারপর আমার সুস্থতা কামনা করুন। আগে নিজের আত্মা নীরোগ করুন, পরে পরে ব্যথায় ব্যথিত হোন।

সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া

হযরত ইসহাক ইব্রাহীম ইবনে আহমদ খাওইয়াস (রঃ) – পর্ব ৫ পড়তে এখানে ক্লিক করুন

Written By

More From Author

You May Also Like

মুগীরা ইবন শু’বা (রা)

নাম আবু আবদিল্লাহ মুগীরা, পিতা শু’বা ইবন আবী আমের। আবু আবদিল্লাহ ছাড়াও আবু মুহাম্মাদ ও…

সাপের তওবা

একটি সাপের ঘটনা বর্ণনা করছি। আমার কাছে যারা তালীম গ্রহন করতে আসে প্রথমেই আমি কাউকে…

আবদুল্লাহ ইবন হুজাফাহ আস-সাহমী-(রা)

আবু হুজাফাহ আবদুল্লাহ নাম। পিতার নাম হুজাফাহ। কুরাইশ গোত্রের বনী সাহম শাখার সন্তান। ইসলামী দাওয়াতের…