হযরত হুসাইন মানসুর হাল্লাজ (রঃ) – পর্ব ৩

হযরত হুসাইন মানসুর হাল্লাজ (রঃ) – পর্ব ২ পড়তে এখানে ক্লিক করুন

তশতরবাসী তাঁকে সাদরে গ্রহণ করেন এবং তিনি এক বছরেরও ওপর সেখানে স-সম্মানে বাস করেন। কিন্তু তার সঙ্গে মতানৈক্য হতে খুব বেশী দেরী হল না। কারও মন যুগিয়ে চলা ছিল তাঁর স্বভাব বিরুদ্ধ। বিশেষ করে আলেম সমাজকে তিনি তেমন আমল দিতেন না। তার ওপর ছিল হযরতের আমর ইবনে ওসমান মক্কী (রঃ)-এর প্ররোচনা। তিনি তাঁর ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন। তিনি মক্কা থেকে তাঁর বিরুদ্ধে খোরাসানবাসীদের উত্তেজিত করে তোলেন। ফলে মর্মাহত মানসুর (রঃ) দরবেশী পোশাক ছেড়ে সাধারণ বেশে সমাজের সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশে গেলেন। এ যেন এক অজ্ঞাতবাস। আর এভাবে কাটল পাঁচ বছর।

তিনি কখনও খোরাসানে, কখনও মাওরান্নহরে, কখনও বা নীমরোজে, সিন্তানে, কেরামানে- ইত্যাদি নানা স্থানে ঘুরে বেড়ান। শেষে গেলেন পারস্যে। আর এখানে রচনা করলেন বহু মূল্যবান গ্রন্থ। তাছাড়া আহওয়াজবাসীদের উপদেশ দিয়ে তাদের অনুকূল্য লাভ করলেন। তাঁর বক্তৃতা, উপদেশ সব কিছুই ছিল গূঢ় রহস্যপূর্ণ। এ জন্য স্থানীয় জনগণ তাঁর নাম দেন হাল্লাজুল আসরার। হাল্লাজ আরবী শব্দ যার অর্থ হল ধুনকার, ধানুকী, যে তুলা ধুনে।

শোনা যায়, একবার তুলার স্তূপের দিকে ইশারা করামাত্র সেগুলি খুব সুন্দরভাবে ধুনা হয়ে যায়। আর তখন থেকেই তিনি হাল্লাজ নামে অভিহিত হন।

পাঁচ বছর আত্মগোপনের পর তিনি বসরায় ফিরে আসেন। আর আবারও সুফী পোশাক পরিধান করেন। সেখানে কিছুদিন থাকার পর তিনি যান মক্কায়। কিন্তু সেখানে উপস্থিত হওয়া মাত্রই হযরত ইয়াকুব নাহারজুরী (রঃ) তাঁকে জাদুকর বলে আখ্যা দেন। বাধ্য হয়ে তিনি আবার ফিরে এলেন বসরায়। ওখানে এক বছর কাটিয়ে আহওয়াজ হয়ে তিনি চলে আসেন হিন্দুস্থানে। হিন্দুস্থান থেকে খোরাসান, মাওরাউন্নহর প্রভৃতি দেশ ঘুরে ঘুরে চলে যান চীনে তারপর আবার মক্কা শরীফে। এবার সেখানে দু’বছর কাটান। তারপর মক্কা থেকে বিদায় নেবার সময় তাঁর মধ্যে দারুণ পরিবর্তন আসে। তখন তাঁর কথাবার্তা সম্পূর্ণ দুর্বোধ্য হয়ে পড়ে।

কাজেই এরপর তিনি যখনই যে দেশে গেছেন তখনই মানুষের কাছে লাঞ্ছিত ও বিতাড়িত হয়েছেন। এক এক সময় তিনি এত বেশী দুঃখ-কষ্ট, যন্ত্রণা ও উৎপীড়ন সহ্য করেন যে, আর কোন সাধক-দরবেশকে তা কখনও সহ্য করতে হয়নি। শোনা যায়, তাঁর গূঢ় রহস্যপূর্ণ, দুর্বোধ্য কথা ও আচরণের কারণে তিনি অন্তত পঞ্চাশটি দেশ থেকে বিতাড়িত হন। অথচ ইনিই যখন আগের দফায় বিভিন্ন দেশ পরিভ্রমণ করেন, তখন তাঁর জ্ঞান মুগ্ধ মানুষ তাঁকে নানা সম্মানে ও উপাধিতে ভূষিত করেছেন। ভারতবাসী তাঁকে বলতেন আবুল মুগীস, চীনারা বলতেন আবুল মুঈন, খোরাসানীরা বলতেন আবুল মনীর, পারস্যবাসীরা বলতেন আবু আবদুল্লাহ যাহিদ, খুজিস্তানবাসীরা বলতেন, হাল্লাজুল আসরার, বাগদাদ ও বসরার মানুষ তাঁকে মুগবের নামে সম্মানিত করেন।

সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া

হযরত হুসাইন মানসুর হাল্লাজ (রঃ) – পর্ব ৪ পড়তে এখানে ক্লিক করুন

Written By

More From Author

হযরত হুসাইন মানসুর হাল্লাজ (রঃ) – পর্ব ৩

হযরত হুসাইন মানসুর হাল্লাজ (রঃ) – পর্ব ২ পড়তে এখানে ক্লিক করুন

তশতরবাসী তাঁকে সাদরে গ্রহণ করেন এবং তিনি এক বছরেরও ওপর সেখানে স-সম্মানে বাস করেন। কিন্তু তার সঙ্গে মতানৈক্য হতে খুব বেশী দেরী হল না। কারও মন যুগিয়ে চলা ছিল তাঁর স্বভাব বিরুদ্ধ। বিশেষ করে আলেম সমাজকে তিনি তেমন আমল দিতেন না। তার ওপর ছিল হযরতের আমর ইবনে ওসমান মক্কী (রঃ)-এর প্ররোচনা। তিনি তাঁর ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন। তিনি মক্কা থেকে তাঁর বিরুদ্ধে খোরাসানবাসীদের উত্তেজিত করে তোলেন। ফলে মর্মাহত মানসুর (রঃ) দরবেশী পোশাক ছেড়ে সাধারণ বেশে সমাজের সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশে গেলেন। এ যেন এক অজ্ঞাতবাস। আর এভাবে কাটল পাঁচ বছর।

তিনি কখনও খোরাসানে, কখনও মাওরান্নহরে, কখনও বা নীমরোজে, সিন্তানে, কেরামানে- ইত্যাদি নানা স্থানে ঘুরে বেড়ান। শেষে গেলেন পারস্যে। আর এখানে রচনা করলেন বহু মূল্যবান গ্রন্থ। তাছাড়া আহওয়াজবাসীদের উপদেশ দিয়ে তাদের অনুকূল্য লাভ করলেন। তাঁর বক্তৃতা, উপদেশ সব কিছুই ছিল গূঢ় রহস্যপূর্ণ। এ জন্য স্থানীয় জনগণ তাঁর নাম দেন হাল্লাজুল আসরার। হাল্লাজ আরবী শব্দ যার অর্থ হল ধুনকার, ধানুকী, যে তুলা ধুনে।

শোনা যায়, একবার তুলার স্তূপের দিকে ইশারা করামাত্র সেগুলি খুব সুন্দরভাবে ধুনা হয়ে যায়। আর তখন থেকেই তিনি হাল্লাজ নামে অভিহিত হন।

পাঁচ বছর আত্মগোপনের পর তিনি বসরায় ফিরে আসেন। আর আবারও সুফী পোশাক পরিধান করেন। সেখানে কিছুদিন থাকার পর তিনি যান মক্কায়। কিন্তু সেখানে উপস্থিত হওয়া মাত্রই হযরত ইয়াকুব নাহারজুরী (রঃ) তাঁকে জাদুকর বলে আখ্যা দেন। বাধ্য হয়ে তিনি আবার ফিরে এলেন বসরায়। ওখানে এক বছর কাটিয়ে আহওয়াজ হয়ে তিনি চলে আসেন হিন্দুস্থানে। হিন্দুস্থান থেকে খোরাসান, মাওরাউন্নহর প্রভৃতি দেশ ঘুরে ঘুরে চলে যান চীনে তারপর আবার মক্কা শরীফে। এবার সেখানে দু’বছর কাটান। তারপর মক্কা থেকে বিদায় নেবার সময় তাঁর মধ্যে দারুণ পরিবর্তন আসে। তখন তাঁর কথাবার্তা সম্পূর্ণ দুর্বোধ্য হয়ে পড়ে।

কাজেই এরপর তিনি যখনই যে দেশে গেছেন তখনই মানুষের কাছে লাঞ্ছিত ও বিতাড়িত হয়েছেন। এক এক সময় তিনি এত বেশী দুঃখ-কষ্ট, যন্ত্রণা ও উৎপীড়ন সহ্য করেন যে, আর কোন সাধক-দরবেশকে তা কখনও সহ্য করতে হয়নি। শোনা যায়, তাঁর গূঢ় রহস্যপূর্ণ, দুর্বোধ্য কথা ও আচরণের কারণে তিনি অন্তত পঞ্চাশটি দেশ থেকে বিতাড়িত হন। অথচ ইনিই যখন আগের দফায় বিভিন্ন দেশ পরিভ্রমণ করেন, তখন তাঁর জ্ঞান মুগ্ধ মানুষ তাঁকে নানা সম্মানে ও উপাধিতে ভূষিত করেছেন। ভারতবাসী তাঁকে বলতেন আবুল মুগীস, চীনারা বলতেন আবুল মুঈন, খোরাসানীরা বলতেন আবুল মনীর, পারস্যবাসীরা বলতেন আবু আবদুল্লাহ যাহিদ, খুজিস্তানবাসীরা বলতেন, হাল্লাজুল আসরার, বাগদাদ ও বসরার মানুষ তাঁকে মুগবের নামে সম্মানিত করেন।

সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া

হযরত হুসাইন মানসুর হাল্লাজ (রঃ) – পর্ব ৪ পড়তে এখানে ক্লিক করুন

Written By

More From Author

You May Also Like

মুগীরা ইবন শু’বা (রা)

নাম আবু আবদিল্লাহ মুগীরা, পিতা শু’বা ইবন আবী আমের। আবু আবদিল্লাহ ছাড়াও আবু মুহাম্মাদ ও…

সাপের তওবা

একটি সাপের ঘটনা বর্ণনা করছি। আমার কাছে যারা তালীম গ্রহন করতে আসে প্রথমেই আমি কাউকে…

আবদুল্লাহ ইবন হুজাফাহ আস-সাহমী-(রা)

আবু হুজাফাহ আবদুল্লাহ নাম। পিতার নাম হুজাফাহ। কুরাইশ গোত্রের বনী সাহম শাখার সন্তান। ইসলামী দাওয়াতের…