পিটি স্যার আজ খুব রেগে আছেন। রাগের কারণে তার হাতের বেত মাঝে মধ্যে দু’একজনের গায়ে পড়ছে। মাকসুরা বুঝতে পারছে না তার কী করা উচিত। গতকাল সে পিটি ক্লসে ছিল না। রোল কল হয়নি এখানো। তবে হবে। তখনই সে ধরা খেয়ে যাবে। ধরা খাওয়ার পর কী হবে- এয়ার ডন হবে, নাকি বেত! বিষয়টা চিন্তা করতে গিয়েই সে চার নম্বর পিটিতে ভুল করে ফেলল। সাথে সাথে ধরাও খেয়ে গেল।
পিটি স্যার তার দিকে এগিয়ে এসে বললেন, এখন কত নম্বর পিটি চলছে? চার নম্বর স্যার। ভয়ে ভয়ে উত্তর দেয় মাকসুরা।
তুমি কত নম্বর করছ?
স্যার, আমার ভুল হয়ে গেছে। আমি তিন নম্বর করে ফেলেছি।
তুমি কি গতকাল ক্লাসে ছিলে?
মাকসুরা বুঝে গেছে তার ভাগ্য আজ খুব একটা ভালো না। যে দিন ভাগ্য খারাপ হয় সে দিন শুধু হতেই থাকে। আজকে তার জন্য কি তাহলে ব্যাড ডে?
‘জি না, স্যার।’ ভয়ে ভয়ে বলল মাকসুরা।
ক্লাস শেষে যারা গতকাল প্রেজেন্ট ছিল না তারা মাঠে স্টে করবে। মনে থাকবে? স্যার কথাটা জোরে বলতে লাগলেন।
মাকসুরা মনে মনে বলল, জি স্যার।
নাউ স্টার্ট। নাম্বার ফাইভ। কথাটা বলে স্যার মাকসুরার সামনে থেকে চলে গেলেন।
মাকসুরা মনে মনে আল্লাহ্কে ধন্যবাদ দিলো। আজ তার শাস্তি হলেও সেটা গ্রুপ পানিশমেন্ট হবে। তার ভাগ্য কিছুটা কি ভালো হতে চলেছে! নাকি….।
দূরে তার আম্মু দাঁড়িয়ে আছেন। মাকসুরা পাঁচ নম্বর পিটি করতে করতে তার দিকে আড়চোখে তাকাল। পিটি শেষ করে সবাই লাইন ধরে ক্লাসে যাচ্ছে। কিন্তু মাকসুরার সাথে বেশ কয়েকজন ছাত্রছাত্রী মাঠে দাঁড়িয়ে আছে। এটাই নিয়ম। সবাই চলে যাওয়ার পর অবশিষ্টরা ক্লাস অনুসারে স্যারের সামনে দাঁড়িয়েছে। মাকসুরা একা দাঁড়ানো। তার লাইনে আর কেউ নেই। স্যার এক এক করে অনুপস্থিতির কারণ জানতে চাচ্ছেন। কেউ কেউ ভয়ে কেঁদে দিচ্ছে। তোমার নাম ও শ্রেণী বলো? স্যার রাগী কণ্ঠে মাকসুরাকে জিজ্ঞাসা করলেন।
মাকসুরা রাহিমা। দ্বিতীয় শ্রেণী। নিচের দিকে তাকিয়ে বলল।
-রোল কত?
-দুই।
-কেন পিটিতে ছিলে না?
পিটিতে আসতে দেরি হয়েছিল। এ জন্য ক্লাসে চলে গিয়েছি স্যার। লেট লাইনে দাঁড়ালে না কেন?
মাকসুরা কোনো উত্তর দিলো না। সে এ প্রশ্নেরও উত্তর জানে। কিন্তু বলবে না।
উত্তর দিচ্ছ না কেন? কিছুটা রাগী কণ্ঠে বললেন স্যার।
মাকসুরা এবারো কিছু বলল না। তার কান্না আসছে।
চোখে পানি এসে যাচ্ছে। তার জন্য এটা খুব লজ্জার বিষয়।
সবাই মার্চ করে প্রিন্সিপাল স্যারের রুমের সামনে যাও। সেখানে গিয়ে স্ট্যান্ডাপ হয়ে দাঁড়াবে। বুঝতে পারছ?
-সবাই একসাথে বলল, জি স্যার।
মাকসুরাও বলল, কিন্তু আস্তে বলেছে। যা সে ছাড়া আর কেউ শোনেনি। সে মনে মনে আল্লাহ্কে ডাকতে লাগল।
স্টপ! স্যার কথাটা বলার সাথে সাথে মাকসুরাসহ সবাই স্ট্যান্ডাপ হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল।
তোমরা সবাই অপেক্ষা করো। আমি প্রিন্সিপাল স্যারের সাথে তোমাদের শাস্তির বিষয়ে আলোচনা করে আসছি। সবাই যেভাবে আছো সেভাবেই থাকবে। কেউ ইজি হতে পারবে না। কথাগুলো রাগী কণ্ঠে বলে পিটি স্যার প্রিন্সিপাল স্যারের রুমের দিক চলে গেলেন।
মাকসুরাসহ সবার চেহারা পাংশুবর্ণ হয়ে গেল।
প্রিন্সিপাল স্যারের শাস্তি মানেই হার্ড পানিশমেন্ট। এটা থেকে বাঁচা অসম্ভব। সবাই মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। মাঝে মধ্যে পর্দা ঝুলানো প্রিন্সিপাল স্যারের দরজার দিকে তাকিয়ে দেখছে স্যার বের হচ্ছেন কি না।
একটু পরেই সবাই দরজা দিয়ে পিটি স্যার ও মিরাজ স্যারকে বের হতে দেখল। মাকসুরার মন ভালো হয়ে গেল। মিরাজ স্যার তাদের প্রিয় স্যার । তার পানিশমেন্টগুলো চমৎকার। পিটি স্যার তাদের দিকে তাকিয়ে বললেন; প্রিন্সিপাল স্যার আজ বিশেষ কাজে ব্যস্ত। তাই তার পক্ষ থেকে মিরাজ স্যার তোমাদের শাস্তি ঘোষণা করবেন।
মিরাজ স্যার প্রথমে সবার দিকে তাকিয়ে মিটি মিটি হাসলেন। তারপর বললেন- গত পিটি ক্লাসে তোমরা প্রেজেন্ট ছিলে না। কেন ছিলেনা?
স্যারের কথা শেষ হওয়ার সাথে সাথে মাকসুরা হাত তুলল। মিরাজ স্যার তার দিকে এগিয়ে এসে বললেন- তুমি বলবে?
-জি স্যার।
-ঠিক আছে, বলো।
মাকসুরা আগে যে কথা পিটি স্যারকে বলেনি আজ সেটা বলল। স্যার, খুব গরম। তাই পিটি করতে কষ্ট হয়। মিরাজ স্যার হেসে উঠলেন, তাই নাকি!
গরমের জন্য পিটি করোনি। এটা তো ভালো কাজ হয়নি। সবাই কি মাকসুরার সাথে একমত?
কেউ কেউ হাত তুলল। কেউ অন্য কথা বলল।
মিরাজ স্যার সবার কথা শুনে বললেন- তোমাদের কথা আমি শুনেছি। এবার আমার কথা কি তোমরা শুনবে?
শুনব, স্যার। সবাই একসাথে বলল।
তোমরা ছাত্র। এখন তোমাদের শেখার সময়।
জানার সময়। এখন শিখলে, জানলে ও মানলে আগামীতে তোমরাও অন্যদের শেখাতে, জানাতে ও মানাতে পারবে। তাই এখন কষ্ট করে হলেও তোমরা শিখবে, জানবে ও মানবে। ফাঁকি দেবে না। ঠিক আছে?
-জি স্যার। সবাই বলল।
-আমার কথাগুলো কি তোমরা মানবে?
-জি স্যার, মানব। মাকসুরা জোরে কথাটা বলল।
সাথে সাথে সে মনে মনে প্রতিজ্ঞা করল আর কখনো পিটি ক্লাস ফাঁকি দেবে না।
মিরাজ স্যার চলে যাচ্ছেন তার ক্লাসের দিকে।
মাকসুরার মন চাচ্ছে স্যারের ক্লাস করতে। কিন্তু মিরাজ স্যার তাদের কোনো ক্লাস নেন না। মাকসুরা বুঝতে পারছে না স্যার তাদের ক্লাস কেন নেন না? শুধু বড় ভাইয়াদের ক্লাস নেন কেন? তার মন আবার খারাপ হয়ে যাচ্ছে।
মিরাজ স্যার তার পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় হঠাৎ বললেন- কী, লিটল অ্যাঞ্জেল, আর গরম লাগবে? কথাটা বলে স্যার হাসতে হাসতে চলে গেলেন। মাকসুরার মন ভালো হয়ে গেল। সে খুশি মনে ক্লাসের দিকে দৌড় দিলো।