শয়তান ও আমি

বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করার পর আমার মৌন স্বভাব হঠাৎ যেন পাখা মেলতে শুরু করেছে। বিষয়টি ভালোভাবে বুঝতে পারলাম যখন দেখি আমারও পাঁচ-ছয় জন ঘনিষ্ঠ বন্ধু-বান্ধব জুটে গেল। অথচ মহাবিদ্যালয়ে আমার কাছের সুহৃদ ছিল মাত্র দু’জন। অনেক বন্ধুর মেয়ে-বান্ধবী থাকলেও আমার তখনো মেয়েদের দিকে ভালো করে তাকানোর সাহস পর্যমত্ম হয়নি। আর এখন, বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার তিনজন বান্ধবী পর্যমত্ম আছে! তন্মধ্যে সাদিয়া দেখতে যেমন সুন্দরী তেমনি আধুনিক, চলাফেরা ও পোষাক-আশাকে কিছুটা বেপরোয়া। এজন্য অনেক ছেলে তাকে মনে মনে পছন্দ করত। আমার ভালো লাগত না। কিন্তু কিছু বলতাম না তাকে। দরকারটা কী, বিশ্ববিদ্যালয়ে সবাই স্বাধীন। কঠিন ভর্তি যুদ্ধে উত্তীর্ণ হয়েই মেধাবীরা এখানে আসে। সুতরাং মেধাবীদের জ্ঞান দেওয়ার আমি কে?
দ্বিতীয় বর্ষে উঠার পর বুঝলাম পড়ালেখা অনেক ভারী হয়ে যাচ্ছে। পড়ালেখার জন্য আরো সময় দিতে লাগলাম। আমরা, বন্ধু-বান্ধবরা, দলবদ্ধ হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠাগার কিংবা মাঠে বসে পড়ালেখা নিয়ে আলোচনা করতাম। যে যে বিষয়ে পারদর্শী ছিলো সে সে বিষয় অন্যদের সাথে ভাগাভাগি করত। আমি অংকে তুলনামূলক ভালো ছিলাম অর্থাৎ হিসাববিজ্ঞান ও অর্থায়নে আমার ভালো দখল ছিলো। আবার সাদিয়া ছিলো হিসাববিজ্ঞান ও অর্থায়নে দুর্বল। আমি বুঝি না এ দু’টো বিষয়ে দুর্বল কীভাবে হয়। মনোযোগ সহকারে চর্চা করলে এমন হওয়ার কথা না। সাদিয়াকে এ দু’টো বিষয়ে সাহায্য করার জন্য দায়িত্ব পড়ল আমার উপর। বিনিময়ে সাদিয়া আমাকে ব্যবস্থাপনা বিষয়ের সন্দর্ভ গুলো করে দেবে।
তৃতীয় বর্ষের মাঝামাঝি সময়। আমাদের বন্ধুদের দলটির মাঝে আমত্মরিকতা আরো জোরাল হল। এখন কোথাও গেলে আমরা দলবেঁধে যাই। কারো জন্মদিন পড়লে উপহার বিনিময় তো হয়ই আরো হয় সবাই মিলে কোথাও একত্রে বসে খাওয়া। বন্ধুমহলে আমার আবার কবি খ্যাতিও আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের দেয়ালিকা কিংবা সাহিত্যপত্রে আমার কবিতা নিয়মিতই প্রকাশ পায়। নতুন কোন কবিতা লিখলে নিয়ম হচ্ছে আগে দলের বন্ধুদের দেখাতে হবে, তারপর ছাপাখানায়। আমার সাহিত্যপ্রীতি দেখে সাদিয়া আমার জন্মদিনে কবি জীবনানন্দ দাশের কাব্যসমগ্র উপহার দেয়। আমরা যেন ছোটখাট একটি পরিবার।
একদিন দেখি সাদিয়ার মুখ ভার ভার। কারো সাথে তেমন কথাবার্তা বলছে না। উজ্জ্বল-উচ্ছ্বল মেয়েটি একেবারে নিস্প্রভ কেন হয়ে গেল? বন্ধুরা সবাই মিলে ধরলাম।
‘কিরে, কী হলো আজ তোর?’
‘আমার ভাল লাগছে না।’ গোমরা মুখে সাদিয়া বলল।
‘সে তো বুঝতে পারছি। কিন্তু কেন?’ আমাদের মধ্যে থেকে নাহিদা জিজ্ঞেস করল।
‘বাবা-মা আমার বিয়ে ঠিক করছে।’ নিস্প্রাণ মুখে সাদিয়া বলল।
‘এ তো খুশির খবর। অনেকদিন কোন বিয়ে-শাদি খাওয়া হচ্ছে না।’ আমি হেসে বললাম।
‘চুপ কর তুই। থাপ্পড় দেব তোকে ও কথা আরেকবার বললে।’ মারমুখি ভঙ্গিতে এটুকু বলে সাদিয়া কেঁদে দিল। নাহিদা আমার দিকে চোখ রাঙিয়ে দেখতে লাগল।
ঘটনার আকস্মিকতায় আমরা সবাই হতভম্ব। আমি গলায় কৃত্রিম সহানুভূতি এনে বললাম, ‘সাদিয়া, দুঃখিত।’
‘এখন আমরা তোর কোন উপকারে আসতে পারি কিনা?’ সাদিয়ার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল শায়লা।
‘নির্দ্বিধায় বলতে পারিস, আমরা সবাই তোর সাথে আছি।’ বলল সাঈদ।
‘আমি এখন বিয়ে করব না। অমত্মত বি.বি.এ. টা শেষ করি।’ ধাতস্ত হয়ে সাদিয়া বলল।
‘তাহলে তোর পক্ষ হয়ে আমরা কি তোর বাবা-মা’কে….’ নাহিদা কথা শেষ করার আগেই সাদিয়া বলল, ‘আগে আমি সামলাতে পারি কিনা দেখি, তারপর না হয় তোদের সাহায্য নেব।’
সাদিয়ার কথায় আমরা সবাই সায় দিলাম।
ঘটনাটির দশদিন পর রাত সাড়ে এগারটায় সাদিয়ার ডাক এলো আমার মুঠো আলাপনে। আমি গৃহশিক্ষকতা সেরে খেয়ে-দেয়ে এশার নামায পড়ে সবেমাত্র পড়তে বসেছি। পরশু ব্যবস্থাপনা-অর্থায়ন বিষয়ের টিউটোরিয়াল পরীক্ষা। নিশ্চয় সে আবারও অংকে বেজে গেছে। আমি সাদিয়ার ডাক গ্রহণ করলাম-
‘এতো রাতে?’
‘এতো রাতে মানে, রাত তো সবে শুরু আর তুই তো কবি, রাত জাগা পাখি….’
‘হইছে, আর তেল দিতে হবে না, কী চাইবার তাড়াতাড়ি চান, অনেক পড়া বাকি আছে।’
‘যদি বলি তোকে চাই?’
‘বুঝছি, পরীক্ষা আসলেই আপনার পাগলামি বেড়ে যায়। সাদিয়া, সত্যি বলছি, অনেক পড়া বাকি, কী বলবি তাড়াতাড়ি বল।’
‘ঈড়ংঃ ড়ভ ঈধঢ়রঃধষ এ ধরা খেয়েছি, তোকে লাগবেই। কাল বিকেলে অবশ্যই আসতে হবে, তোর অর্থায়ন বইটিও নিয়ে আসবি মনে করে, আর তোর কাজ আমি করে রেখেছি।’
‘বিকেলে কেন, সকালে আসি?’
‘দয়া করে বিকেলে আয় না, সকালে একটু কাজ আছে যে’, সাদিয়ার কণ্ঠে আবদার যেন উথলে পড়ছে।
কিছু কিছু আবদার আছে যেগুলো ফেলা যায় না। সাদিয়ার মতো সুন্দরীর আবদার আমি ফেলতে পারলাম না। যৌবনের ধর্মই হচ্ছে বিপ্রতীক্ষপের প্রতি তীব্র আকর্ষণ। একজন তরুণ হিসেবে আমার সে আকর্ষণ থাকতেই পারে কিন্তু আমি যদি সে আকর্ষণের মোহে অন্ধ হয়ে নিজেকে সঁপে দিই তবে মানুষ হিসেবে নিজেকে দাবী করার আমার আর কিছু থাকল না। পৃথিবীতে কেউ মানুষ হয়ে জন্মে না, মানুষ হতে হয় প্রতি পদে পদে চারিত্রিক উৎকর্ষতার উন্মেষ ঘটিয়ে। মানুষ হতে হয় লোকারণ্যে নিজেকে একাকী অনুভব করে।
পড়ালেখার ব্যাপারে সাহায্যের জন্যে এর আগেও বেশ ক’বার সাদিয়াদের বাসায় যেতে হয়েছে। আমি গেলে নাহিদাও এসে আমাদের সাথে যোগ দেয়। অবশ্য নাহিদাকে আমিই আসতে বলি। কারণ নাহিদাদের বাসা সাদিয়াদের কাছাকাছি। আর আমি চাই সবদিক থেকে পরিষ্কার থাকতে। সাদিয়ার বাবা-মা বেশ অমায়িক। সাদিয়ার মা বেশ ভালো নাসত্মা বানাতে পারে। আমি যতবারই গিয়েছি বিভিন্ন পদের নাসত্মা পরিবেশন করে আমায় আপ্যায়ন করিয়েছেন। আমার যে মা নেই তিনি জানতেন। হয়ত মায়ের সহজাত স্নেহ দিতে চেয়েছেন। তবে সাদিয়ার বড় ভাই আমায় খুব একটা সহনীয় চোখে দেখতেন বলে মনে হত না। সহনীয়-অসহনীয় যে চোখেই দেখেন না কেন আমার উদ্দেশ্য মহৎ। একজন বন্ধু হিসেবে সাদিয়াকে সাহায্য করা। আর এতে শুধু যে সাদিয়ারই উপকার হত তা না, উপকার আমারও হত। সাদিয়াকে বুঝানোর জন্য পাঠ্যের খুঁটিনাটি বিষয় গুলো ভালোভাবে রপ্ত করতাম, যা নিজে পড়ার জন্যে হলে কখনো করতাম না। নিজে যদি ভালোভাবে না বুঝি তো অন্যকে বুঝাবো কীভাবে?
দুই
বিকেল চারটা। আমি ১৪/এ দালানটির প্রধান ফটক পেরিয়ে দোতলাস্থ সাদিয়াদের বাসার দরজার সামনে দাঁড়ালাম। দোরঘণ্টা টিপলাম। প্রতিবারই খালাম্মা দরজা খুলে আমাকে দেখে জিজ্ঞেস করবেন, বাবা, ভালো আছো। আজ দরজা খুলল সাদিয়া। মিষ্টি হেসে কুশল জিজ্ঞেস করে আমাকে ভেতরে ঢুকিয়ে তার কক্ষে নিয়ে গেল। পরক্ষীর মতো সেজেছে সাদিয়া। এমনিতেই সে সুন্দরি। আজ তাকে আরো সুন্দর লাগছে। কয়েকদিন আগে দৈনিক পত্রিকার বিনোদন পাতায় ভারতীয় চলচ্চিত্রের এক অপূর্ব সুন্দরী নায়িকার ছবি দেখেছিলাম। নায়িকার নাম প্রিয়াঙ্কা লোপড়া না চোপড়া কোন একটা হবে।
টেনেটুনে কোনরকমে আমাদের বৃদ্ধ বাবা ও দুই ভাই এক বোনের সংসার চলে। আমিই সবার বড়।
দূরদর্শন যন্ত্র আমাদের জন্য বিলাসিতা বৈ অন্য কিছু নয়। তাই পত্রিকা আর সাহিত্যই আমার বিনোদন। সাদিয়াকে আজ যেন প্রিয়াঙ্কার মতো লাগছে!
‘খুব সেজেছিস যে, কোথাও যাবি নাকি?’
‘তোর জন্য সেজেছি, অসুবিধা আছে?’ সাদিয়া হেসে আবার বলল, ‘সেদিন তোর সাথে খুব খারাপ ব্যবহার করেছি, মাফ করে দিস।’
‘ধুর, বন্ধুতে বন্ধুতে কত কিছু হয়, আমি ওসব ভুলে গেছি।’ আমি মাথা নিচু করে বললাম। সাদিয়ার দিকে তাকাতে আমার ভয় হচ্ছে, পাছে শয়তান যদি আমায় কাবু করে সাদিয়ার প্রেমে ফেলে দেয়!
সাদিয়া শক্ত হয়ে বলল, ‘আরাব, আমি সিদ্ধামত্ম নিয়ে ফেলেছি আমি বিয়ে করব।’
আমি উৎফুল্ল হয়ে বললাম, ‘বেশ। এই তো লক্ষ্মী মেয়ের মতো ভাবতে শিখছিস। বিয়ের পরও পড়ালেখা করা যায়, একটু কষ্ট হবে আর কি। তা, জামাই বাবুটা কে, কী করে?’
‘আমার সামনে এখন যে বসে আছে।’
‘কী!’ আমি লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়ালাম, যেন হাজার ভোল্টেজের বিদ্যুৎ আমায় প্রচন্ড ঝাকুঁনি দিল। এ আমি কী শুনলাম? আমার শরীর ঘামছে, সারা শরীরে বিন্দু বিন্দু স্বেদের উপস্থিতি আমি টের পাচ্ছি। সাদিয়া এ আমায় কী বলল, মুখ দিয়ে আমার কথাও বেরোচ্ছে না। এখানে এসেছি বেশ কিছুক্ষণ হচ্ছে অথচ কারো কোন সাড়া-শব্দ পাচ্ছি না, তবে কি এ মুহূর্তে আমি আর সাদিয়া ছাড়া এ বাসায় আর কেউ নেই? ও আল্লাহ্, এ আমি কোন বিপদে পড়তে যাচ্ছি? আমার চারপাশের সবকিছু যেন ঘুরছে! না, না, আমাকে অজ্ঞান হলে চলবে না, আমাকে শক্ত থাকতে হবে। মনে মনে আমি আমার মহান প্রভুকে স্মরণ করলাম। কোনরকমে নিজেকে শক্ত করে সাদিয়াকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘বাসায় কী আর কেউ নেই?’
সাদিয়া হেসে বলল, ‘ভয় পাওয়ার কিছু নেই, বাসায় শুধু তুই আর আমি।’
নাহিদার উপর খুব রাগ হচ্ছে আমার। বেয়াদপটাকে কত করে বললাম আমি সাদিয়ার বাসায় যাচ্ছি তুইও আয়, বলে কিনা তার মাথা ব্যথা, আসতে পারবে না। নাকি সাদিয়া তাকে আগেই মানা করে দিয়েছে? যদি তাই হয় তবে ব্যাপার তো খুব গুরুতর, সাদিয়া তাহলে আগেই সব পরিকল্পনা করে রেখেছে। কিন্তু সাদিয়া কেন এমন করবে? সে তো কোনদিন আমার প্রতি আকর্ষণ প্রকাশ করেনি। আর আমি তো তাকে পছন্দও করি না, আকর্ষণ প্রকাশ তো পরের কথা। সবসময় শুধু একজন বন্ধু ভেবেই এসেছি। এমন সময় অনুভব করলাম শয়তান আমাকে প্ররোচনা দিতে উঠে-পড়ে লেগেছে। শয়তান বলছে, ‘বন্ধুকে বিয়ে করতে মানা আছে নাকি, নাকি কোথাও লেখা আছে? বরঞ্চ বিয়ের জন্য বন্ধুর চেয়ে ভালো আর কে হতে পারে? বন্ধুর সাথে চেনাশোনা থাকে, বোঝাপড়া থাকে। অপরিচিত একটা মেয়েকে বিয়ে করার চেয়ে জানাশোনা বন্ধুকে বিয়ে করা ভালো নয় কি? আর সাদিয়া কত সুন্দর একটা মেয়ে। কত ছেলে ওর জন্য পাগল আর তুমি কিনা বোকার মত আচরণ করছ। বাসায় কেউ নেই, সাদিয়াকে কিছু বলার এখনই উপযুক্ত সময়। এ সুযোগ বারবার আসে না। সাদিয়ার চেহারা দেখ যেন রাঙা আপেল; তোমাকে পাবার জন্য কী আকুলতা সেখানে, ফর্সা বাহু দেখ যেন একখন্ড সাদা মেঘ; তোমায় গ্রহণ করতে কী ব্যাকুলতা সেখানে, সাদিয়ার চোখ দেখ…।’
আমার মনে পড়ে গেল নবী করীম (সা.) এর হাদীস ‘‘যখন কোন নির্জন স্থানে কোন অপরিচিত যুবক-যুবতী একামেত্ম অবস্থান করে তখন সেখানে তৃতীয় ব্যক্তি হয় শয়তান যেন তাদের ধোঁকা দিয়ে অপকর্মে লিপ্ত করিয়ে দিতে পারে।’’
এখন আমার একটাই করণীয়, কীভাবে সাদিয়ার খপ্পর থেকে বের হওয়া যায়। মোটেই উত্তেজিত হওয়া যাবে না, মেয়েরা করতে পারে না হেন কিছু নেই। দুনিয়া মাত্রই মেয়ে পাগল। সাদিয়া এখন চিৎকার দিলে মানুষজন এসে প্রথমে আমাকে ধরবে। আমি ঠান্ডা মাথায় সাদিয়াকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘বাসার সবাই তবে কোথায় গেছে তোকে একা ফেলে?’
‘গ্রামে গেছে। আমার চাচাত ভাইয়ের বিয়ে। আমি এ বিয়েতে রাজী থাকলে আজ তোরাও আমন্ত্রিত হতি। পরীক্ষার জন্য আমি যাইনি।’
‘তোর চাচাত ভাইয়ের সমস্যা কী? কেন তাকে পছন্দ করলি না?’
‘তার কোন সমস্যা নেই। খুব ভাল ছেলে। সেও আমাকে খুব চেয়েছিল। কিন্তু আমার মন যে অন্য আরেকজনের কাছে। এ দুঃখ এ ব্যথা আমি কাকে বুঝাই?’
‘কার কাছে তোর মন?’
‘আরাব, দয়া করে আর না বুঝার ভান করিস না। তোকে আমি এমনি এমনি ডেকে আনিনি। তোকে পছন্দ করি সেই প্রথম বর্ষ থেকে কিন্তু কাউকে বুঝতে দিইনি। শুধু সুযোগের অপেক্ষায় ছিলাম কীভাবে তোর কাছে আসা যায়। তাই হিসাববিজ্ঞান ও অর্থায়ন বুঝেও না বোঝার অভিনয় করেছি শুধু তোর সঙ্গ পাবার জন্য।’
আমি ঢোক গিলে বললাম, ‘সাদিয়া, দেখ, তুই খুব আধুনিক একটা মেয়ে আর সেখানে আমাকে দেখ, তোর সম্পূর্ণ বিপরীত।’
‘আরাব, আমার কথা এখনো শেষ হয়নি। তুই আধুনিক না হতে পারিস কিন্তু তুই সৎ, সরল এবং আদর্শবান। ভন্ডামির এ বিশ্বে আমি তোর মত ছেলেকে হাতছাড়া করতে চাই না।’
আমি স্মিত হেসে বললাম, ‘আমি জানি না আমি কতটুকু সৎ, সরল এবং আদর্শবান। তোর কথামত আমার যদি সেসব গুণ থেকে থাকে তবে আমি কি সে সব গুণসম্পন্না একজন কে আশা করব না?’
‘অবশ্যই করবি। তুই আমাকে ভবিষ্যতের প্রতিশ্রুতি দে, কাল থেকে তোর মত হয়ে যাবো।’
’প্রতিশ্রুতি ছাড়া কি সৎ, সরল এবং আদর্শবান হওয়া যায় না?’
‘যায়। কিন্তু আমি যে তোকে…’
‘সাদিয়া, দেখ, পৃথিবীতে এখনো যথেষ্ট সৎ মানুষ আছে। একজন আরাব তোর জীবনে নাই বা আসল। তুই আমাকে বুঝতে চেষ্টা কর। টানাপড়েনের সংসার আমাদের। আমার কাঁধে এখন তিনজনের দায়িত্ব। আমার আগামী যেখানে অনিশ্চিত সেখানে আমি তোকে কীভাবে ভবিষ্যতের নিশ্চয়তা দিই?’
‘আমি তোর জন্য অপেক্ষা করব।’
‘সাদিয়া, পাগলামি করিস না, জীবনটা কোন চলচ্চিত্রের কাহিনী নয়। জীবনটা খুব বাসত্মব এবং কঠিন।’
হঠাৎ সাদিয়া আমার কাছে এসে আমার ডান হাত ধরে কেঁদে দিয়ে বলল, ’আরাব, দয়া করে আমাকে নিরাশ করিস না…’
আমি আবার অনুভব করলাম শয়তানের দুরভিসন্ধি। আমি সাদিয়ার হাত ছাড়িয়ে নিতে চেষ্টা করছি কিন্তু পারছি না কেন? আমার সমসত্ম শক্তি একত্রিত করেও পারলাম না। একটি মেয়ের কব্জা থেকে মুক্ত হওয়ার মতো সামর্থ্যও কি আমার নেই? নিজের উপর আমার খুব রাগ হচ্ছে। তাহলে কি শয়তানটিও সাদিয়ার সাথে যোগ দিয়েছে?
আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল। দূরের মসজিদ থেকে ভেসে আসা আযানের ধ্বনি আমার কর্ণগোচর হচ্ছে। ‘আল্লাহু আকবর’ বলে আমি শোয়া হতে উঠে বসলাম। থিতু হলাম। তাহলে এতোক্ষণ এতোসব কিছু আমি স্বপ্নেই দেখেছি?
স্বপ্ন কি কোন ভবিষ্যৎ ইঙ্গিতের আলো হতে পারে? কিংবা হতে পারে সতর্কবাণী? আমি জানি না। আমার কেন জানি মনে হচ্ছে বিপ্রতীক্ষপের প্রতি তীব্র আকর্ষণ যৌবনের ধর্ম নয়, এ ধর্মান্ধতা। বিকেল চারটা বাজতে আর কয়েক মিনিট বাকি। আমি মুঠো আলাপনটি হাতে নিলাম। এ প্রথম আমি সম্ভবত উপেক্ষা করতে যাচ্ছি কোন প্রবল আকর্ষণকে।

"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভানুধ্যায়ী এবং সম্মানিত অবদানকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

দুঃখিত!