ভদ্র ছেলে এমদাদুল। জনমস্থান গ্রামে। তার বাবা একজন কৃষক। এমদাদুল গ্রামেই এক কিন্ডারগার্টেনে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত অধ্যয়ন করেছে।
তার সমাপনী রেজাল্ট ভালো। সমাপণী রেজাল্ট দেখে তার বাবা আগ্রহী হয়ে উঠলেন ছেলেটিকে মানুষের মত মানুষ করে গড়ে তোলার জন্য। তার বড় চাচার বাড়ি শহরে। ছেলেটির বাবা তার চাচার সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিলেন নিজে কষ্ট করে হলেও ছেলেটির পড়াশোনার খরচ চালাবেন। যাতে করে তিনি গ্রামে দশজনের মাঝে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারেন। তাই তার চাচার পরামর্শে শহরে এক ভালো স্কুলে ভর্তি করালেন।
এমদাদ তার চাচার বাসায় থেকে পড়াশোনা করে। দেখতে দেখতে প্রথম সাময়িক পরীক্ষা এগিয়ে এলো। ক্লাসের সহপাঠীরা আনন্দ উল্লাসে ক্লাসটিকে মাতিয়ে তোলে। কিন্তু এমদাদুল নামে সেই ছেলেটি ক্লাস রুমের এক কোণে চুপটি করে বসে থাকে। আর ভাবে, আমার যদি তাদের মতো বন্ধু থাকত। তাহলে আমিও তাদের মতো আনন্দ করতে পারতাম। কিন্তু মায়ের নির্দেশ, বাজে ছেলেদের সাথে বন্ধুতব করবি না।
এমদাদুল এখন মায়ের কাছ থেকে দূরে। এরপরও সে মায়ের কথাটির অবাধ্য হয়নি। সবাই তাকে নিয়ে সমালোচনা করে। এতে এমদাদুলের খুব কষ্ট লাগে। কেউ তাকে কোনো সহযোগিতা করে না। বরং কষ্ট দেয়। প্রথম সাময়িক পরীক্ষার রেজাল্ট দেখা গেল এমদাদুল প্রত্যেক বিষয়েই ফেল। তখন তার মনে হলো, আমার মত এ অপদার্থ সুন্দর এই পৃথিবীতে থাকার যোগ্যতা রাখে না। এমন কোথাও চলে যাব যেখানে আমি ছাড়া আর কেউ থাকবে না। এসব কিছু ভাবতে ভাবতে এক সময় সে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল। তার এই হৃদয়বিদারক কান্না দেখে তার চাচা তাকে সান্ত্বনা দিয়ে বললেন, চেষ্টা চালিয়ে যাও। সফলতা আসবেই। কবি বলেছেন, ‘পারিব না এ কথাটি বলিও না আর/ একবার না পারিলে দেখ শতবার’।
এমদাদুলকে তার চাচা ভালো কোচিংয়ে ভর্তি করিয়ে দিলেন। তাতেই কি তার রেজাল্ট ভালো হবে।’ তা কেমন করে? তার মনেই তো শান্তি নেই। কষ্টগুলো ভুলে থাকতে চাইলেও তা পারে না। এভাবেই কষ্টকে বরণ করে নিয়ে বছরের বাকি দিনগুলো পার করল।
সামনে বার্ষিক পরীক্ষা। বার্ষিক পরীক্ষায় ভালো করার লক্ষ্যে এমদাদ সবকিছু ভুলে ভালোভাবে পড়তে চায়। কিন্তু কষ্টগুলো সব তার ওপর আক্রমণ করতে লাগল। ৬ষ্ঠ শ্রেণী কোনরকম পাশ করে ৭ম শ্রেণীতে পদার্পণ করে। ৭ম শ্রেণীতে ওঠার পর সে কঠোর অঙ্গিকার করে। ওরা পারলে আমি পারব না কেন? আমাকে পারতেই হবে। এ চিন্তা মাথায় রেখে সে খুব মনোযোগ সহকারে পড়তে লাগল। প্রথম সাময়িক পরীক্ষার পর দেখা গেল তার প্রত্যেকটি বিষয়েই পঞ্চাশের উর্ধ্বে নম্বর। সে তখন আত্মবিশ্বাসী হয়। এরপর সাফল্যই তার পিছু নেয়। ৭ম শ্রেণীতে বার্ষিক পরীক্ষার পর ঘটল এক অবাক কান্ড! সবাইকে অবাক করে এমদাদুল ১ম স্থান দখল করেছে। অর্থাৎ ৮ম শ্রেণীতে সে প্রথম। দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অবস্থানকারী সোহাগ ও ইমামুল তার সাথে- বন্ধুতব করল। এমদাদুলও এখন আনন্দ করতে পারছে।
একদিন সোহাগ এমদাদুলকে ডেকে বলল, আমরা কেউ ভাবতে পারিনি তুমি সবাইকে পেছনে ফেলে ১ম স্থান দখল করবে। তখন এমদাদুল হেসে উত্তর দেয়, এটা আমার চেষ্টার ফল ও আল্লাহ্তা’য়ালার অপার মেহেরবানি। তুমিও যদি চেষ্টা কর তাহলে আবার তোমার হারানো স্থান ফিরে পাবে। এরপর থেকে সবাই এমদাদুলকে ভালোবাসে। ফার্স্ট বয় এমদাদুলকে ক্লাসে না দেখলে শিক্ষকেরা তার বাড়িতে লোক পাঠিয়ে খোঁজ নিতেন। এমদাদুলের মনে কোনো অহংকার নেই। এই এমদাদুল তো আর সেই এমদাদুল নয়। এ যেন সাত রাজার ধন। এখন তার মনে কোনো কষ্ট নেই। এখন সে মনের আনন্দে পড়াশোনা করে। এখন তার পড়ার মাঝে কোনো অবহেলা নেই। এই চেষ্টার ফলেই সে ৯ম শ্রেণীতে প্রথম স্থান অধিকার করে নেয়। জে এস সি পরীক্ষায় সে গোল্ডেন এ+ পায়।
স্কুলজুড়ে এমদাদুলের সুনাম ছড়িয়ে গেছে। এমদাদুল যেমন চেষ্টা করে সাফল্য পেয়েছে ঠিক তোমরাও চেষ্টা করলে অবশ্যই সাফল্য পেয়ে যাবে। আর চেষ্টাটা তো এমনই যে, সবাইকে সাফল্যের শীর্ষস্থানে পৌঁছে দেয়, যার জ্বলন্ত প্রমাণ এমদাদুল নিজেই।
"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভাকাংখী এবং সম্মানিত আবেদনকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।