হযরত আবু হামজা খোরাসানী (রঃ) – শেষ পর্ব

একদা হযরত জুনায়েদ (রঃ) দেখলেন, ইবলিস নগ্ন অবস্থায় মানুষের মাথার ওপর চড়ে আসছে। তিনি তাকে বললেন, তুমি কি লজ্জা-শরমের মাথা খেয়েছ? ইবলিস বলল, এরা তো মানুষ নয় যে, এদের সামনে শরম করতে হবে। যার সাথে শরম করতে হয়, সে তো ঐ মসজিদে বসে আছে। হযরত জুনায়েদ (রঃ) মসজিদে গিয়ে দেখলেন, ওখানে বসে আছেন হযরত আবু হামজা (রঃ)। তাঁকে দেখে শয়তানের কথার জবাবে হযরত আউ হামজা (রঃ) বললেন, তুমি কোন চর্চা করেছ। যার সম্পর্কে কথাটা বললে, তিনি এমন পর্যায়ের সাধক যে, তাঁর সম্পর্কে কোন কথা বলাই তোমার শোভনীয় নয়।

হযরত আবু হামজা (রঃ)-এর শিষ্যদের তাঁর উপদেশঃ

১. আল্লাহর প্রতি যার অনুরাগ সৃষ্টি হয়, তিনি আর মানুষের সঙ্গে মিলেমিশে থাকতে রাজি নন।

২. আল্লাহর সঙ্গে মিলন ঘটিয়ে আত্মীয়-স্বজনের মায়াজালে আবদ্ধ রয়েছে, এমন মানুষ দুনিয়াতে নেই।

৩. সকালে যে সন্ধ্যার কথা স্মরণ করে না এবং রাতে যে ভোরের কথা ভাবে না, সে-ই প্রকৃত তাওয়াক্কুলকারী।

৪. তোমার সামনে রয়েছে মহাযাত্রা, অতএব, পাথেয় সংগ্রহ কর।

৫. প্রকৃত দরবেশ তিনিই, যিনি আল্লাহর সঙ্গে প্রেম করেন আর মান-সম্মান অপছন্দ করেন।

৬. তোমরা সকলেই পরকালের সম্বল অবলম্বন কর।

যিনি সম্পদকে ঝামেলা এবং দারিদ্র্য ও অভাব-অভিযোগকে আরামদায়ক মনে করেন, তিনি প্রকৃত দরবেশ। তিনি আরও বলেন, আল্লাহভীতি মানুষের জন্য এমন এক মহান বন্ধুতুল্য, যে মারাত্মক বিপদ্গামীকেও সত্য ও সৎ দিকে নিয়ে আসে। তিনি আরও বলেন, যে ব্যক্তি নিজের কর্মকে সাধারণ ও অনুপযুক্ত মনে করে, তার কর্মই অসাধারণ ও উপযুক্ত হয়ে থাকে।

হযরত আবু হামজা (রঃ) একশ ত্রিশ বছর জীবিত ছিলেন। একদিন এশার নামাজের সময় হযরত আজরাইল (আঃ) এসে উপস্থিত। তিনি বললেন, আল্লাহ আপানকে ক্ষমা করুন। আপনি একটু দাড়ান। আমার কাজটি সেরে নিই। তারপর আপনি আপনার কাজ সম্পন্ন করবেন। আমরা উভয়েই আল্লাহর বান্দা। এই মুহূর্তে আপনার প্রতি আদেশ হয়েছে আমার প্রাণ নেবার। আর আমার প্রতি আদেশ হয়েছে এশার নামাজ আদায় করার। আপনি সে আদেশ অমান্য করবেন না, আমি করি কি করে? কাজেই একটু অপেক্ষা করলে দুজনেরই আল্লাহর নির্দেশ পালন করা হয়। এই বলে ওযু করে তিনি নামাজ পড়লেন। আর হযরত আজরাইল (আঃ)-ও তাঁর প্রাণ হরণ করলেন।

মৃত্যুর পর স্বপ্নযোগে তাঁকে এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করেন, আল্লাহ আপনার সাথে কিরূপ ব্যবহার করেছেন? তিনি বললেন, তোমরা আমার নিকট এ প্রশ্ন করো না। আল্লাহ আমাকে অপবিত্র দুনিয়া থেকে মুক্তি দিয়েছেন। অর্থাৎ এর চেয়ে ভালো ব্যবহার আর কী হতে পারে?

হযরত আবু হামজা (রঃ)-এর মৃত্যু হয় খোরাসানের নিশাপুরে। হযরত আবু হাফস (রঃ)-এর কবরের পাশেই তাঁকে সমাহিত করা হয়।

সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া

Written By

More From Author

হযরত আবু হামজা খোরাসানী (রঃ) – শেষ পর্ব

একদা হযরত জুনায়েদ (রঃ) দেখলেন, ইবলিস নগ্ন অবস্থায় মানুষের মাথার ওপর চড়ে আসছে। তিনি তাকে বললেন, তুমি কি লজ্জা-শরমের মাথা খেয়েছ? ইবলিস বলল, এরা তো মানুষ নয় যে, এদের সামনে শরম করতে হবে। যার সাথে শরম করতে হয়, সে তো ঐ মসজিদে বসে আছে। হযরত জুনায়েদ (রঃ) মসজিদে গিয়ে দেখলেন, ওখানে বসে আছেন হযরত আবু হামজা (রঃ)। তাঁকে দেখে শয়তানের কথার জবাবে হযরত আউ হামজা (রঃ) বললেন, তুমি কোন চর্চা করেছ। যার সম্পর্কে কথাটা বললে, তিনি এমন পর্যায়ের সাধক যে, তাঁর সম্পর্কে কোন কথা বলাই তোমার শোভনীয় নয়।

হযরত আবু হামজা (রঃ)-এর শিষ্যদের তাঁর উপদেশঃ

১. আল্লাহর প্রতি যার অনুরাগ সৃষ্টি হয়, তিনি আর মানুষের সঙ্গে মিলেমিশে থাকতে রাজি নন।

২. আল্লাহর সঙ্গে মিলন ঘটিয়ে আত্মীয়-স্বজনের মায়াজালে আবদ্ধ রয়েছে, এমন মানুষ দুনিয়াতে নেই।

৩. সকালে যে সন্ধ্যার কথা স্মরণ করে না এবং রাতে যে ভোরের কথা ভাবে না, সে-ই প্রকৃত তাওয়াক্কুলকারী।

৪. তোমার সামনে রয়েছে মহাযাত্রা, অতএব, পাথেয় সংগ্রহ কর।

৫. প্রকৃত দরবেশ তিনিই, যিনি আল্লাহর সঙ্গে প্রেম করেন আর মান-সম্মান অপছন্দ করেন।

৬. তোমরা সকলেই পরকালের সম্বল অবলম্বন কর।

যিনি সম্পদকে ঝামেলা এবং দারিদ্র্য ও অভাব-অভিযোগকে আরামদায়ক মনে করেন, তিনি প্রকৃত দরবেশ। তিনি আরও বলেন, আল্লাহভীতি মানুষের জন্য এমন এক মহান বন্ধুতুল্য, যে মারাত্মক বিপদ্গামীকেও সত্য ও সৎ দিকে নিয়ে আসে। তিনি আরও বলেন, যে ব্যক্তি নিজের কর্মকে সাধারণ ও অনুপযুক্ত মনে করে, তার কর্মই অসাধারণ ও উপযুক্ত হয়ে থাকে।

হযরত আবু হামজা (রঃ) একশ ত্রিশ বছর জীবিত ছিলেন। একদিন এশার নামাজের সময় হযরত আজরাইল (আঃ) এসে উপস্থিত। তিনি বললেন, আল্লাহ আপানকে ক্ষমা করুন। আপনি একটু দাড়ান। আমার কাজটি সেরে নিই। তারপর আপনি আপনার কাজ সম্পন্ন করবেন। আমরা উভয়েই আল্লাহর বান্দা। এই মুহূর্তে আপনার প্রতি আদেশ হয়েছে আমার প্রাণ নেবার। আর আমার প্রতি আদেশ হয়েছে এশার নামাজ আদায় করার। আপনি সে আদেশ অমান্য করবেন না, আমি করি কি করে? কাজেই একটু অপেক্ষা করলে দুজনেরই আল্লাহর নির্দেশ পালন করা হয়। এই বলে ওযু করে তিনি নামাজ পড়লেন। আর হযরত আজরাইল (আঃ)-ও তাঁর প্রাণ হরণ করলেন।

মৃত্যুর পর স্বপ্নযোগে তাঁকে এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করেন, আল্লাহ আপনার সাথে কিরূপ ব্যবহার করেছেন? তিনি বললেন, তোমরা আমার নিকট এ প্রশ্ন করো না। আল্লাহ আমাকে অপবিত্র দুনিয়া থেকে মুক্তি দিয়েছেন। অর্থাৎ এর চেয়ে ভালো ব্যবহার আর কী হতে পারে?

হযরত আবু হামজা (রঃ)-এর মৃত্যু হয় খোরাসানের নিশাপুরে। হযরত আবু হাফস (রঃ)-এর কবরের পাশেই তাঁকে সমাহিত করা হয়।

সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া

Written By

More From Author

You May Also Like

মুগীরা ইবন শু’বা (রা)

নাম আবু আবদিল্লাহ মুগীরা, পিতা শু’বা ইবন আবী আমের। আবু আবদিল্লাহ ছাড়াও আবু মুহাম্মাদ ও…

সাপের তওবা

একটি সাপের ঘটনা বর্ণনা করছি। আমার কাছে যারা তালীম গ্রহন করতে আসে প্রথমেই আমি কাউকে…

আবদুল্লাহ ইবন হুজাফাহ আস-সাহমী-(রা)

আবু হুজাফাহ আবদুল্লাহ নাম। পিতার নাম হুজাফাহ। কুরাইশ গোত্রের বনী সাহম শাখার সন্তান। ইসলামী দাওয়াতের…