ছোট বেলার কথা মনে হলে প্রথমেই মনে উঁকি দেয় মায়ের মুখ। ছোট্ট আমায় পাশে নিয়ে আমার মা গল্প বলছেন।
রাজা রানীর গল্প, সঙ্গে আছে তাদের ছোট্ট রাজকন্যা। গল্প শুনতে শুনতে যেন প্রতিটি চরিত্র দেখতে পেতাম আমি। আর এক সময় নিজেই হয়ে উঠতাম সেই গল্পের স্বপ্নের রাজকন্যা।
যখন আরও একটু বড় হলাম তখন আমার মা কবিতা পড়ে শোনাতেন। রবি ঠাকুর, নজরুল, সুফিয়া কামাল, জসিমউদ্দিন নামগুলো সেই কবিতা শুনে শুনেই শিখেছি।
আচ্ছা আজকাল কার বাচ্চাদের কি তাদের মায়েরা ঘুম পাড়ানোর গল্প বলে?
অনেকেরই ব্যস্ততার কারণে নিজেই ক্লান্ত থাকেন। এরপর সংসারের ঝামেলা সামলে আসলে গল্প বলার সময় আর হয়ে ওঠে না।
কিন্তু জানেন তো, গল্পের মধ্যে এমন এক জাদু রয়েছে, যা নিমেষে মনের মধ্যে একটা অন্য জগত তৈরি করে ফেলে। গল্পের বলে বলে কোনো কিছু শেখালে বাচ্চারা সহজে সেই জিনিসটা বুঝতে পারে।
তাই আপনি বাচ্চাকে কীধরনের গল্প পড়ে শোনাবেন, কেমনভাবে শোনাবেন এর ওপর অনেক কিছুই নির্ভর করে। আর তাছাড়া কম্পিউটার, টিভি আর কাটুর্নের বাইরেও যে অন্য কিছু নিয়ে বাচ্চারা আনন্দে থাকতে পারে, সেটা আমাদের মা-বাবাদেরও যেমন বোঝা দরকার, তেমনি ওদের কাছেও বই, গল্পের জগতের দরজাটা খুলে দেওয়া জরুরি। কম্পিউটার বা টিভি দেখে বাচ্চার মন ভোলাতে পারেন, কিন্তু আপনি গল্পের বই পড়ে শোনালে নিজেদের মধ্যে যে ‘বন্ডিং’ টা গড়ে উঠবে, সেটা কিন্তু আরও বেশি মূল্যবান।
বাচ্চাদের উপযোগী গল্পের বই এখন অনেক স্টোরেই পাওয়া যায়। মিথোলজি, বায়োগ্রাফি, নেচার, সায়েন্স, ফেয়ারি টেল-আপনার সামনে হাজির একের পর এক অপশনস। বাচ্চার যে জিনিসটার প্রতি আকর্ষণ বেশি সেই গল্পের বই পড়ে শোনান। দেখবেন ও ইন্টারেস্ট পাবে। শোনা ও পড়া এই দু’টোর অভ্যেসই তৈরি হবে।
গল্প শোনানোর সঙ্গে সঙ্গে অভিনয়ের মতো করে দেখান। এতে ও চোখের সামনে ব্যাপারটা কিছুটা হলেও দেখতে পারবে।
গল্প পড়ার সময়ে সহজ করে বলুন। কোনও জটিল বিষয়ও সহজ করে বলতে পারলে বাচ্চারা তাড়াতাড়ি বুঝতে পারে। খুব বোরিং ভাবে, গুরুগম্ভীরভাবে বোঝালে কিন্তু ক্লাসরুমের মতোই পরিবেশ তৈরি হবে। সেটা বাচ্চারা কখনওই পছন্দ করবে না। স্কুলের পড়াও গল্পের মতো করে ওকে বোঝালে, সহজেই শিখতে পারবে। এইভাবে পড়াশোনাটাও ওর কাছে ইন্টারেস্টিং হয়ে উঠবে।
আপনার সোনামনির জন্মদিনে ছবি দেওয়া, রঙিন গল্পের বই গিফট করুন। বইগুলো যেমন সে আগ্রহ নিয়ে দেখবে আর পড়ার অভ্যাসও গড়ে উঠবে।
গল্পের চরিত্রগুলো বাস্তবে কেমন তাও তাকে দেখাতে পারেন। যেমন আপনি যদি বাচ্চাকে মাছের গল্প বলেন, তবে বাড়িতে সে মাছ এলে তাকে চেনান, যে এই মাছের নাম সে আগেই জানে। আবার কোনো প্রাণী নিয়ে গল্প বললে সময় করে তাকে চিড়িয়াখানায় নিয়ে যান।
বাস্তব এবং কল্পনার মিশেলে সে তার ছোট্ট পৃথিবীটা আনন্দে সাজিয়ে নেবে।
"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভানুধ্যায়ী এবং সম্মানিত অবদানকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।