হযরত জুনায়েদ বাগদাদী (রঃ) – শেষ পর্ব

হযরত জুনায়েদ বাগদাদী (রঃ) – পর্ব ১৩ পড়তে এখানে ক্লিক করুন

এ সময় তাঁর অবস্থা সংকটজনক হয়ে উঠল। তিনি অত্যন্ত বিচলিত হয়ে মুমর্ষু অবস্থা পৌঁছলেন। আর এ সময় পাক কুরআনের সত্তর আয়াত তেলাওয়াত করলেন। সবাই বললেন, আল্লাহ্‌, আল্লাহ্‌ বলুন। তিনি বললেন, আমাকে স্মরণ করিয়ে দিতে হবে না। আমার বন্ধুকে আমি ভুলিনি। অতঃপর তিনি আঙুলে গননা করে ‘সুবহানাল্লাহ’ তাসবীহ পাঠ করতে লাগলেন। পড়তে পড়তে তর্জনি আঙুলে পৌঁছে তা ওপরের দিকে তুলে ধরে বললেন বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম। সঙ্গে সঙ্গে দু’চোখে বুজলেন। আর এভাবেই তিনি মিলিত হলেন তাঁর পরম প্রিয় বন্ধুর সঙ্গে (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজিউন)।

তাঁকে স্নান করানোর সময় তাঁর চোখের পানি মুছে দিতে গেলে অদৃশ্য শব্দ শোনা গেল, তোমরা আমার বন্ধুর চোখ থেকে তোমাদের হাত দূরে রাখ। কেননা, আমার নাম জপ করতে করতে ঐ চোখ দু’টি বন্ধ হয়েছে। আমার দর্শন ছাড়া তা আর উন্মীলিত হবে না। অতঃপর গোসলদাতাগণ তাঁর বাঁকা আঙুল সোজা করার চেষ্টা করলেন। পারলেন না। আবার বেজে উঠল অদৃশ্য কণ্ঠঃ আমার নামের তাসবীহ পড়তে পড়তে যা বাঁকা হয়েছে তা আমার নির্দেশ ছাড়া সোজা হবে না।

জানাযার সময় একটি সাদা পায়রা এসে পাশে বসে গেল। সেটি তাড়ানোর বহু চেষ্টা করা হল। কিন্তু তাড়ানো গেল না। বরং সেটি বলল, আমাকে কষ্ট দিও না, নিজেরাও বৃথা কষ্ট করো না। কেননা, আমার নিম্নাঙ্গ প্রেমের পেরেক দ্বারা খাটের সঙ্গে আবদ্ধ। তোমাদের এ জানাযা ওঠাবার চেষ্টা করতে হবে না। কেননা, জুনায়েদ (রঃ)-এর লাশ এখন ফেরেশতাগণের হেফাজতে এসে গেছে। এখন যা করতে হয় তাঁরাই করবেন। শুনে নাও, তোমরা এখানে ভিড় না করলে এ লাশ এতক্ষণ সাদা বাজপাখির মত আকারে আকাশে উড়ে যেত।

হযরত জুনায়েদ (রঃ)-এর মৃত্যুর পর এক ব্যক্তি তাঁকে স্বপ্নযোগে দেখে জিজ্ঞেস করলেন, আপনি মুনকার নকিরের প্রশ্নের কী জবাব দিলেন হুজুর? তিনি বললেন, তারা এসে যখন আমাকে প্রশ্ন করলেন, আপনার প্রভু কে? আমি বললাম, যখন আমার প্রভু স্বয়ং প্রশ্ন করেছিলেন, ‘আমি কি তোমাদের প্রভু নই?’ তখনই তো উত্তর দিয়েছিলাম, হ্যাঁ, এখন আপনারা আবার এসেছেন এই প্রশ্ন করতে যে, আপনার প্রভু কে? যে ব্যক্তি স্বয়ং বাদশাহর প্রশ্নের জবাব দিয়েছে, তাঁর ভৃত্যদের প্রশ্নের জবাব দিতে তার আবার ভয়ের কী আছে? তবে আপনারা যখন এসেছেন এবং আমার নিকট প্রশ্ন রেখেছেন তখন তার উত্তর আমি আমার প্রভুর ভাষাতেই দিই-আমার প্রভু তিনিই, যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন। পরে তিনি আমাকে জীবন পথের সন্ধান দিয়েছেন।

ফেরেশতাগণ তাঁর উত্তর শুনে সম্মানে উঠে দাঁড়ালেন। তারপর এই কথা বলতে বলতে বেরিয়ে গেলেন, ইনি দেখছি এখনও প্রেমে বিভোর হয়ে রয়েছেন।

হযরত হারীরী (রঃ) তাঁকে স্বপ্নযোগে জিজ্ঞেস করেন, আল্লাহ্‌ আপানার সঙ্গে কিরূপ ব্যবহার করলেন? তিনি বললেন, আল্লাহ্‌ আমার ওপর রহমত করেছেন এবং আমাকে মাফ করে দিয়েছেন। আর মধ্য রাতে আমার যে দু’রাকায়াত নামাজ পড়ার অভ্যাস ছিল, তাছাড়া অন্য কিছুতে তেমন কোন ফায়দা হয়নি।

সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া

হযরত জুনায়েদ বাগদাদী (রঃ) – পর্ব ১ পড়তে এখানে ক্লিক করুন

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।