হযরত বায়েজীদ বোস্তামী (রঃ) – পর্ব ৮

হযরত বায়েজীদ বোস্তামী (রঃ) – পর্ব ৭ পড়তে এখানে ক্লিক করুন

হযরত বলেন, তা ঠিক। তোমার অশুচিতা বাইরের। আর আমার অপবিত্রতা ভেতরের। এতএব এস, আমরা একত্রে অবস্থান করি, তাতে আমার অশুচিতা কিছুটা দূর হতে পারে। কুকুর বলল, তা হতে পারে না। কেননা, আমি আল্লাহ্‌র বিতাড়িত ও ঘৃণিত জীব আর আপনি তাঁর প্রিয় দাস। দ্বিতীয়ত আমি বর্তমান ছাড়া অন্য দিনের একখানা হাড়ও সঞ্চয় করি না। কিন্তু মানুষ সারা বছরের খাবার সংগ্রহ করে রাখে আমাদের উভয়ের মধ্যে রয়েছে প্রকৃতিগত ব্যবধান।

হযরত বায়েজীদ (রঃ) দুঃখ করে বললেন, হায় কী আফসোস! আমি একটি কুকুরের সংস্পর্শে থাকারও উপযুক্ত নই। তাহলে মহান আল্লাহ্‌র নৈকট্যলাভের উপযুক্ত কিভাবে হতে পারি? প্রশংসা সেই মহান আল্লাহ পাকের, যার সৃষ্টি এক নিকৃষ্ট জীব থেকেও মানুষের শিক্ষা নেওয়া দরকার।

বোস্তামের এক বিখ্যাত সাধক প্রায় ত্রিশ বছর ধরে হযরত বায়েজীদ (রঃ)-এর সান্নিধ্য লাভ করেন। তিনি একদিন দুঃখিত চিত্তে বললেন, কত নামাজ রোজা, এবাদাত করলাম, কিন্তু মুরশিদ বায়েজীদ (রঃ) যে মারেফাত শেখাচ্ছেন তা থেকে কোন ফল পাওয়া গেল না। এর কারণ কী?

হযরত বায়েজীদ (রঃ) বললেন, ত্রিশ বছর কেন, ত্রিশ হাজার বছরও যদি এবাদাত কর আর তোমার স্বভাব না বদলায়, তাহলে মারেফতের এক বিন্দু ঘ্রাণও তুমি পাবে না। তাঁর কারণ কী হুজুর? তিনি বললেন।

হযরত বায়েজীদ (রঃ) বললেন, তাঁর কারণ, তুমি তোমার জীবনকে পার্থিব পোশাক দিয়ে ঢেকে রেখেছে।

এর প্রতিকারের উপায় কি?

উপায় আছে। কিন্তু তুমি তা গ্রহণ করবে কি?

নিশ্চয়ই। আপনি বলুন হুযুর।

তবে যাও। মাথা মুড়িয়ে ফেল। পরনের সুন্দর পোশাক খুলে ফেলে মোটা কম্বল পর। শহরের যে এলাকায় লোক তোমাকে ভাল করে চেনে, সেখানে গিয়ে বস। আর কিছু আখরোট নিয়ে শিশুদের ডেকে বল, তোমাদের মধ্যে যে একটি ধাক্কা দেবে তাকে একটি আর যে দুটি ধাক্কা দেবে তাকে দুটি আখরোট দেব। এভাবে শহরের সব এলাকায় ঘুরে ঘুরে যেখানে তোমাকে সবচেয়ে বেশী অপমান করা হবে, তুমি সেখানে অবস্থান করবে। এই হল প্রতিকার বা সংশোধনের একমাত্র উপায়।

তাঁর সাধক-শিষ্য বলে ওঠলেন, সুবহানাল্লাহি লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ। মহান আল্লাহ্‌ পাক পবিত্র। তিনি ছাড়া কোন উপাস্য নেই।

হযরত বায়েজীদ (রঃ) বললেন, একজন কাফের বা মুশরেক এই পবিত্র বাক্য পাঠ করে মুসলিম হয়ে যায়। কিন্তু তুমি এ কালাম পাঠ করে মুশরেক হয়ে গেল।

সে কী হুজুর!

তুমি এ কালাম পাঠ করে নিজের গৌরববোধ করলে, আর এর দ্বারা আল্লাহ্‌র গৌরবহানি করলে।

হুযুর! আমি আপনার এ নির্দেশিত উপায় অবলম্বন করতে পারব না।

হযরত বায়েজীদ বোস্তামী (রঃ) – পর্ব ৯ পড়তে এখানে ক্লিক করুন

Written By

More From Author

You May Also Like

অপু ও ফলচুরি রহস্য

মহানগরের কোলাহলের মাঝে, ব্যস্ত জনপথের কিছুটা দূরে একফালি সবুজ ল্যান্ডস্কেপ । সদ্য গড়ে ওঠা আবাসন…

ভালুক ও কাঠবিড়ালী

কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘খুকি ও কাঠবিড়ালী’ কবিতাটি কম-বেশি সবাই পড়েছে। এ কবিতাটির কারণেই ছোট্ট…

গাজা দিবস

শিশু-কিশোর বন্ধুরা, কেমন আছো তোমরা? আশা করি যে যেখানে আছো ভাল ও সুস্থ আছো। তোমরা…

হযরত বায়েজীদ বোস্তামী (রঃ) – পর্ব ৮

হযরত বায়েজীদ বোস্তামী (রঃ) – পর্ব ৭ পড়তে এখানে ক্লিক করুন

হযরত বলেন, তা ঠিক। তোমার অশুচিতা বাইরের। আর আমার অপবিত্রতা ভেতরের। এতএব এস, আমরা একত্রে অবস্থান করি, তাতে আমার অশুচিতা কিছুটা দূর হতে পারে। কুকুর বলল, তা হতে পারে না। কেননা, আমি আল্লাহ্‌র বিতাড়িত ও ঘৃণিত জীব আর আপনি তাঁর প্রিয় দাস। দ্বিতীয়ত আমি বর্তমান ছাড়া অন্য দিনের একখানা হাড়ও সঞ্চয় করি না। কিন্তু মানুষ সারা বছরের খাবার সংগ্রহ করে রাখে আমাদের উভয়ের মধ্যে রয়েছে প্রকৃতিগত ব্যবধান।

হযরত বায়েজীদ (রঃ) দুঃখ করে বললেন, হায় কী আফসোস! আমি একটি কুকুরের সংস্পর্শে থাকারও উপযুক্ত নই। তাহলে মহান আল্লাহ্‌র নৈকট্যলাভের উপযুক্ত কিভাবে হতে পারি? প্রশংসা সেই মহান আল্লাহ পাকের, যার সৃষ্টি এক নিকৃষ্ট জীব থেকেও মানুষের শিক্ষা নেওয়া দরকার।

বোস্তামের এক বিখ্যাত সাধক প্রায় ত্রিশ বছর ধরে হযরত বায়েজীদ (রঃ)-এর সান্নিধ্য লাভ করেন। তিনি একদিন দুঃখিত চিত্তে বললেন, কত নামাজ রোজা, এবাদাত করলাম, কিন্তু মুরশিদ বায়েজীদ (রঃ) যে মারেফাত শেখাচ্ছেন তা থেকে কোন ফল পাওয়া গেল না। এর কারণ কী?

হযরত বায়েজীদ (রঃ) বললেন, ত্রিশ বছর কেন, ত্রিশ হাজার বছরও যদি এবাদাত কর আর তোমার স্বভাব না বদলায়, তাহলে মারেফতের এক বিন্দু ঘ্রাণও তুমি পাবে না। তাঁর কারণ কী হুজুর? তিনি বললেন।

হযরত বায়েজীদ (রঃ) বললেন, তাঁর কারণ, তুমি তোমার জীবনকে পার্থিব পোশাক দিয়ে ঢেকে রেখেছে।

এর প্রতিকারের উপায় কি?

উপায় আছে। কিন্তু তুমি তা গ্রহণ করবে কি?

নিশ্চয়ই। আপনি বলুন হুযুর।

তবে যাও। মাথা মুড়িয়ে ফেল। পরনের সুন্দর পোশাক খুলে ফেলে মোটা কম্বল পর। শহরের যে এলাকায় লোক তোমাকে ভাল করে চেনে, সেখানে গিয়ে বস। আর কিছু আখরোট নিয়ে শিশুদের ডেকে বল, তোমাদের মধ্যে যে একটি ধাক্কা দেবে তাকে একটি আর যে দুটি ধাক্কা দেবে তাকে দুটি আখরোট দেব। এভাবে শহরের সব এলাকায় ঘুরে ঘুরে যেখানে তোমাকে সবচেয়ে বেশী অপমান করা হবে, তুমি সেখানে অবস্থান করবে। এই হল প্রতিকার বা সংশোধনের একমাত্র উপায়।

তাঁর সাধক-শিষ্য বলে ওঠলেন, সুবহানাল্লাহি লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ। মহান আল্লাহ্‌ পাক পবিত্র। তিনি ছাড়া কোন উপাস্য নেই।

হযরত বায়েজীদ (রঃ) বললেন, একজন কাফের বা মুশরেক এই পবিত্র বাক্য পাঠ করে মুসলিম হয়ে যায়। কিন্তু তুমি এ কালাম পাঠ করে মুশরেক হয়ে গেল।

সে কী হুজুর!

তুমি এ কালাম পাঠ করে নিজের গৌরববোধ করলে, আর এর দ্বারা আল্লাহ্‌র গৌরবহানি করলে।

হুযুর! আমি আপনার এ নির্দেশিত উপায় অবলম্বন করতে পারব না।

হযরত বায়েজীদ বোস্তামী (রঃ) – পর্ব ৯ পড়তে এখানে ক্লিক করুন

Written By

More From Author

You May Also Like

মুগীরা ইবন শু’বা (রা)

নাম আবু আবদিল্লাহ মুগীরা, পিতা শু’বা ইবন আবী আমের। আবু আবদিল্লাহ ছাড়াও আবু মুহাম্মাদ ও…

সাপের তওবা

একটি সাপের ঘটনা বর্ণনা করছি। আমার কাছে যারা তালীম গ্রহন করতে আসে প্রথমেই আমি কাউকে…

আবদুল্লাহ ইবন হুজাফাহ আস-সাহমী-(রা)

আবু হুজাফাহ আবদুল্লাহ নাম। পিতার নাম হুজাফাহ। কুরাইশ গোত্রের বনী সাহম শাখার সন্তান। ইসলামী দাওয়াতের…