হযরত মুসা (আঃ)এর জন্ম বংশ ও পরিচয়-৪র্থ পর্ব

হযরত মুসা(আঃ) এর জন্ম বংশ ও পরিচয়-৩য় পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন  

তাই তিনি তার পদে যথাযথ বহাল থেকে নিজ দায়িত্ব পালন করছিলেন। তার স্ত্রী খাতুন ও ছিলেন বনি ইসরাইল বংশের সম্ভ্রান্ত মহিলা। তিনি শরীয়তের বিধান ভালভাবে পালন করতেন। এবং পরপুরুষের সাথে পর্দা করে চলতেন। ফেরাউনের ঘোষণার পরের দিন গভীর রাত্রে খাতুন ঘর থেক বেরিয়ে কর্তব্যরত স্বামীর নিকট গিয়ে দেখেন তার স্বামী একা রাজ দরবারে বসা। আর কোন লোকজন নেই। স্ত্রী তখন গভীর রজনীতে স্বামীর সম্মুখীন হলে তখন তাদের ভিতরে এক দূর্দমনীয় কামনা জাগ্রত হল। এ সময় তারা ওখানেই নিভৃত কক্ষে প্রবেশ করে মিলন সমধা করলেন। স্ত্রী ওখানে আর বিলম্ব না করে বাসায় চলে গেলেন। স্বামীও নিজ কাজে মন দিলেন।

 দুদিন পরে জ্যোতিষীগণ রাজদরবারে গিয়ে ফেরাউনকে বলল হুজুর আপনার আদেশ অমান্য করে আপনার শত্রুর পিতামাতা মিলন করেছ। ফলে সন্তান পিতার পৃষ্ট থেকে মাতার গর্ভে অবস্থান নিয়েছে। ফেরাউন এ কথা শুনে রাগে অগ্নি শর্মা হয়ে গেলেন। এবং বলল কাল থেকে দেশের সকল গর্ভবতী নারীর গর্ভ নষ্ট করে দিতে হবে। এবং এ দেশে আগামী দুই বছর পর্যন্ত পুত্র সন্তান ভুমিষ্ট হলে তাকে হত্যা কর হবে। এ আইন থেকে কাউকে অব্যহাতি দেওয়া হবে না। রাষ্ট্র প্রধানের আদেশে সে মুহুর্ত থেকে কার্যকর করা হল। চতুর্দিকে প্রহরী গুপ্তচর ও স্বশত্র বাহিনী প্রেরণ করা হল। প্রত্যেক টি সন্তানের বিনিময়ে তার মাক সত্তর দিনার করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ব্যাবস্থা করা হল। এ ব্যাপারে কিতবী বংশের লোকদিগ কে চৌকিদার হিসাবে সর্বত্র নিয়োগ করা হল। যারা ছিল ফেরাউনের অন্ধভক্ত।

এর পর শুরু হল দেশব্যাপী শিশু হত্যার নির্মম পাশবিকতা, পূর্ণ একবছর যাবত এই পদ্ধতিতে অবিরাম গতিতে হত্যা চলল। এ ব্যাপারে মুসলমানদের উপর অত্যাচার বেশি হত। তাদের মধ্যকার গর্ভবতী মহিলাকে পরিক্ষা করে দেখা হত। তারা কি পুত্র না কন্যা সন্তান ধারন করেছে। পরিক্ষা অনুযায়ী তাদের সাথে ব্যবহার কর হত। হযরত মুসা (আঃ) এর মা ছিলেন অত্যন্ত ধর্মপরায়ণ এবং পর্দানশীল। পরিক্ষকেরা ও চৌকিদারেরা তার বাসায় অনেক বার এসেছে কিন্তু তাকে গর্ভবতী বলে কেউ কোনরূপ সন্দেহ করতে পারে নাই । তাই তার তার প্রতি ওদের দৃষ্টি ছিল অনেকটা শিথিল। এভাবে দশ মাস অতিক্রম হওয়ার পর একদিন হঠাৎ খাতুনের ঘরের দরজা টা বন্ধ হয়ে গেল। ক্ষণকাল পরে তার প্রসব বেদনা উঠল। এবং অতি অল্প সময়ের ভিতরে তার একটি পুত্র সন্তান জন্মগ্রহন করল। সন্তানটির উজ্জ্বলতা ছিল এত প্রখর যাতে চন্দ্র হার মানে। খাতুন নিজের সন্তান দেখে আনন্দে আত্নহারা হয়ে উঠলেন। অন্যদিকে ফেরাউনের শিশুহত্যা অভিযানের কথা চিন্তা করে কেঁদে উঠলেন ।

এ সময়ে হযরত জিবরাঈল (আঃ) সেখানে হাজির হয়ে বললেন, খাতুন! আমি তোমার সন্তান ভুমিষ্টের খবর জানি এবং ঐ সন্তান রক্ষার জন্য কিছু বলে যাই। তুমি আমার উপদেশে অতি সত্বর কাজ কর। তুমি একজন কাঠ মিস্ত্রী কে ডেকে একটি কাঠের বাক্স তৈরি কর যেন উহাতে কোন প্রকার ছিদ্র না থাকে। পানিতে ভাসিয়ে দিলে উহাতে যেন একটু ও পানি না ঢোকে। অতপর সন্তানটিকে ভাল করে দুধ খাইয়ে কাপড় জড়িয়ে বাক্স বন্দি করে নদীর পাশে ভাসিয়ে দাও। যেন আস্তে আস্তে ওটা নদির পানিতে ভেষে যায়। খাতুন লোকটির কথা শুনে জিজ্ঞাসা করল আপনি কি? অযাচিতভাবে আপনি আমাকে উপদেশ দিচ্ছেন।

তখন জিবরাঈল (আঃ) বললেন, আমি আল্লহার ফেরেস্তা, আমি তোমাকে যা বলছি তা আল্লাহ তা’লার নির্দেশক্রমে বলছি। তুমি আরো জেনে রাখ তোমার সন্তান হবে এ যুগের নবী। তিনি ফেরাউন কে কুপকাত করবেন। তিনি ফেরাউনের অত্যাচারে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না, বরং আল্লাহাতালা তাকে ফেরাউনের ঘরেই প্রতিপালন করবেই। আল্লাহা তালার কার্যবলী অতি রহস্যময়। তোমার ছেলেটির নাম রেখ মুছা। এই বলে তিনি চলে গেলেন। খাতুন ফেরেস্তার কথা শুনে একটু বিস্মিত হলেন। এমন হময় উদ্দেশ্য বিহীন ভাবে তার স্বামী এসে তার ঘরে ঢুকলেন। এবং নিজের সন্তানের চেহারা দেখে পাঠ করলেন আলহামদুলিল্লাহ। অতপর খাতুন কে বলেন আলাহ তা’লা ওকে রক্ষা করবেন, সে মতে আল্লাহ তা’লা তার ফেরেস্তা দ্বারা তোমাকে যে ভাবে নির্দেশ দিয়েছেন তুমি সে ভাবে কাজ কর। তখন খাতুন তার স্বামী কে বললেন আপনি অতি সত্তর একজন কাঠ মিস্ত্রী ব্যাবস্থা করে দিন।

স্বামী বললেন আমি এক্ষুনি ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। এই বলে তিনি বেরিয়ে গেলেন। একটু পরে একজন কাঠমিস্ত্রি এল, সে খাতুনের নিকট কাঠ চাইল, খাতুন কতগুলা কাঠ তার সামনে এনে দিলেন। কাঠ মিস্ত্রী মুখে কোন কথা বললেন না। শুধু দ্রুত কাজ সমাধা করার জন্য ভীষন ব্যস্ত ছিল। অল্প সময়ের ভিতরে অতি সুন্দর একটা বাক্স তৈরি হয়ে গেল। অতপর খাতুন তাকে পঞ্চাশ টাকা দিল। মিস্ত্রী কোন কথা না বলে টাকা টি গ্রহন করে ছালাম দিয়ে বেরিয়ে গেল। কোন কোন লোক এই কাঠ মিস্ত্রী সম্ভেন্ধে লিখেছেন যে তিনি ছিলেন একজন আল্লাহর প্রেরিত ফেরেস্তা।

সূত্রঃ আল কোরআনের শ্রেষ্ঠ কাহিনী

হযরত মুসা(আঃ) এর জন্ম বংশ ও পরিচয়-পঞ্চম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।