দোলুজের দিকটাতে গেলে অন্যরকম অনুভব। বাঘ অলা বাড়ির আর দশজন থেকে খোকা বাবুর ভাবনাগুলো আলাদা। দোলুজের বুনো কবুতরগুলো সাথে খোকা বাবুর কথা হয়। ইচ্ছে হলেই কবুতর উড়ে যায় বলাডাঙ্গার মাঠে। হৃষ্টপুষ্ট বড় মর্দা কবুতরের বাকবাকুম ডাকের মোহে নতুন নতুন কবুতরে দোলুজের ঝাড়ন ভরে যায়। সংসার ছেড়ে রঙ বেরঙের কবুতর ভালোবাসার টানে বুনো; চাড়াল কবুতরের সাথে দোলুজের নিরাপদ আশ্রয়ে নতুন সংসার পাতার আয়োজনে গান করে। দোলুজের দেয়ালে মেঝেতে ইদুরে ইদুরের গর্ত। গর্ত জুড়ে বড় বড় গোখরা সাপের খোলশ। সাপগুলো নিশ্চিন্তে থাকে। মনসা দেবীর আশির্বাদে এক একটা সুপরী গাছের মত মুটিয়ে গেছে। ইদুর খেয়ে দেহে চর্বি জমেছে। নড়তে চায়না। মানুষের আশেপাশে থাকতে চায় ওরা। কিন্তু মানুষ ওদেরকে মেরে কেটে পুড়িয়ে ছাড়ে। মানুষের কেবল আজগুবি চিন্তা ! ভাদলি থেকে আসার পর ষাট বছর কেটে গেছে অথচ সাপে কামড়ায়নি কোনদিন। ওরা নিরীহ শান্ত শিষ্ট থাকতে চায়। মানুষ ওদের তাতিয়ে তোলে। প্রাণ বাঁচাতে ছোবল মারে কেবল। মানুষের অহেতুক ভয়। যদি কামড় দেয়। মানুষ মরতে চায় না। খাদ্য খাবারের পাহাড় মজুদ করে। মজুদ খাদ্যে ভাগ নেয় ইদুর। সাপে ইদুর খায়, জীবন চক্রে- এ এক খেলা ! নিদারুন খেলা। খাদ্য খাবার জীবন মরণের খেলা।
কে কখন কার খাদ্য হবে কে জানে। কত আশা করে মনুর মনুষ্য; কৃষ্ণের কাঙাল হয়েছে-বিত্ত, বৈভব বিলিয়ে,-তা আঁচ করা যায় পূঁজোর ঘরের কারুকর্মে। চিরুনীর দাঁতের মত সিঁড়ি, থাম্ব, দেয়ালের গায়ের নানান বর্ণের নকশাগুলো করেছে অঢেল অর্থ ও পরিশ্রমের পরোয়া না করে।
অনেক মায়া মমতায় গড়া ঘর-দালালগুলোতে ওরা থাকতে পারেনি। পাক মুসলমানের রাজ্যে-নাপাক হিন্দুদের জায়গা কোথায় ! যে যার মত পালিয়ে বেঁচেছে হিন্দুস্থানে।
হিন্দুস্থান থেকে পাক পবিত্র পাকিস্থানে মুসলমানি মাদকতায় গদগদ আদম সন্তানদের শুদ্ধি অভিযান চলছে।
খোকার মনে শুদ্ধ অশুদ্ধ বলে কিছু নেই। ভেড়ি পাড়ার গৌতমের বাড়ির স্বাদ, মফিদের খেজুর গাছের রস, আরেকটিবার পাওয়া গেলে বাষট্টি বছরের বুড়ো বারো বছরের বালক হতে চাইত। বিজ্ঞানের বিস্ময়কর বিকাশে বালক বেলার বাউলা বাতাসে ইচ্ছে ঘুড়ি উড়তে উড়তে রাজবাড়ি, বলাডাঙার আকাশ ছুতো।
ঘুড়ি উড়ছে-খোকা উড়ছে। ঘুড়ি গাইছে-খোকা গাইছে। ঘুড়ির সুতা কাটছে খোকার পা কাটছে। খোকা ছুটছে-মুফতিপাড়া দিয়ে রাজবাড়ি-কাটাকুমুরের মাঠে। ঘুড়িটার সুতো হাসিমপুরের বাদুরঝোলা তেতুলগাছে আটকে যায়। খোকা সুতো ধরে টান দেয়। শ্মশান ঘাটের শয়তান শয়তানি করে। মুসলমানি মাল ভাংড়া খালে ঢাল।
খোকা আশায় থাকে। কাকডাকা কার্ত্তিকের কুয়াশায় বাবা মার চোখ ফাঁকি দিয়ে গাম্বুলের ডালের ফাঁদে জ্যান্ত চ্যাং মাছ গেথে খোকা মল্লার ধান ক্ষেতে পেতে-অপেক্ষা করে। অপেক্ষা করে। অপেক্ষার শেষ হয় না। কত কালিদাস মেঘদূত পাঠালো। কাব্য কথায় কালি কলম উজাড় হলো তার খবর জানিয়ে দেবে কুজ বক ধরার পর। কত কাল অপেক্ষার পর কুজ বক ফাঁদে পড়বে খোকা জানে না। এক একটা ভোরের অপেক্ষা। অপেক্ষার আকাশে অযুত, নিযুত বকপাখি ! একটা যদি ফাঁদে পড়ে যায়, আকাশ জয়ের আমোদে বক হাতে বিজয় বাজনা বাজাবে।
অপেক্ষা করার আনন্দে খোকার শরীর উড়ে। ন’ মল্লার মেলেটারি আমগাছে থাকা হামেদার কমলা লেবু দেয়া পরি খোকার সাথে কথা বলে। মিলিটারি আমগাছরা কখন যে পারিজাত হয়ে গেল ! খোকা আর খোকা থাকে না। পৌরাণিক পরী থেকে পুষ্প পুরাণের পরীর সাথে খোকার কত ভাব ! হামেদাকে শুধু কমলা দিয়েছে। খোকাকে রাজ্য দিতে চায় ! খোকা যেতে চেয়ে যায় না। খোকা মল্লার ধান খেতে পাতা ফাঁদে কুজ বক পড়তে চায়। আহা তারা ফাঁদে পড়ে খোকার কাছে থাকতে চায়। খোকাকে ভয় না পেলেও দু’পেয়ে মনুষ্য প্রাণিদের বড্ড ভয় পশুপাখিদের। বকগুলো খুব চালাক। ফাঁদের আশে পাশে ঘুরে চিৎপুঁটি খায়, ফাঁদের মাছ খায় না।
খোকা অপেক্ষা করে। খোকার বয়সী দু’টো পরী খোকাকে আদর করে। কাছে এসে সুবাস ছড়ায়। খোকার মন আনচান করে। মাকে ছেড়ে পরিরাজ্যে পারাপার কেমন করে হবে।
রিফ্যুজি-জোলায় দেখতে দেখতে গ্রামটি ভরে গেল। জোলারা বাশদহ, ভাদলি, হাজিপুর আর রিফ্যুজিরা ভারতের পশ্চিমবঙ্গের গোবরডাঙ্গা, পাঁচপোতা থেকে বখতিয়ারের ঘোড়ার মত ছুটে এসে লক্ষণ সেনদের হিন্দু রাষ্ট্রে চালান করে দিল। বড় বড় বাড়ি। শান বাঁধানো পুকুরগুলো দেখে মনে হয় লক্ষণ সেনদের কলিজা ছিড়ে গেছে আতুর ঘরের মায়া ত্যাগ করে হিন্দু রাষ্ট্রে যেতে।
কী এমন লাভ হলো- হিন্দু মুসলমানের আলাদা রাষ্ট্রে। জোলারা রিফ্যুজিদের গালি দেয় রিফ্যুজি বলে। রিফ্যুজিরা-জোলা বলে।
মালপাড়ার মালোরা সুজাত নানার মালকাচায় কতকাল যে নাচবে-তা কী জানে সতিনাথের বাশতলার কৈ মাছ গুলো।
জোলারা কাপড় বুনে না। তা’হলে ওদেরকে জোলা বলে গালি দেয়া কেন ? রিফ্যুজিরাই বা কী দোষ করল। ধর্মপুত্ররা ধর্ম রক্ষা করবে মানুষের রক্তে পবিত্র হয়ে। যা শালা ম্লেচ্ছ, যবনের দল পাকিস্থানে। মালাউনরাই বা থাকবে কোন সাহসে পাকিস্তানে।
বসতভিটাগুলোয় সেই থেকে কোন শান্তি নেই। জোলারা কাপড় বুনা ছেড়ে ব্যবসা বাণিজ্যে ঢাকা, নারায়নগঞ্জ, পাবনা জয় করে মেলিটারি আম গাছের বড় আমটি খেতে পারে নি।
রিফ্যুজিদের কিছু লোক কাচতে হাতে মালাউন, জোলাদের জমিতে যায় কাক ডাকা ভোরে। কত সাতচল্লিশ, বাষট্টি যে গেল তার খবর রাখে কাঠ মোল্লারা। দালালদের দলাদলিতে মেম্বরের পোয়া বারো। পান্তাভাতে ভোট।
হানাফি-আহলেহাদিসদের জলসায় পিয়াজু-পাপড়ের পসার। মৌলুবীদের মেদে কলুপাড়ার তেল। ঘানিতে জুড়ে দিলে কিছুটা লাঘব হতো। কেচ্ছা কাহিনীর আরবী ঘোড়ার পা বাংলার পলিমাটিতে আটকে যায়। মরুভূমির লু’ হাওয়ার সাথে কাল বৈশাখীর মেলে না। এক হাজার এক রাত্রির ঘটনা এক রাতের এক প্রহরে বয়ান করে ওরা পার পেয়ে গেলেও হাতেম খেপলে মুক্তিপাড়া কাঁপে। নয় মাসের নয় গুণিত ত্রিশ অর্থাৎ দুশ সত্তর রাতের কাহিনী কথায় ছলেমানের মাথা গরম হয়; কত কিছু করার আশায় কিছু না করার উন্মাদনায়।
অনেক ঘটনা ঘটে গেল খানের আমলে। ছিয়ানব্বই গ্রামের মালাউনদের রক্তে ঝাউডাঙার ম্লেচ্ছ রাজাকাররা গোসল সারে ভাঙড়া খালে। ওদের শরীরের দূর্গন্ধ যায় না যমযমের পানিতে। নররক্ত, মাংশের গন্ধ থেকে যায় জন্ম-জন্মান্তরে। ছিয়ানব্বই গ্রামের বুড়িটার কান্নায় মোজু রাজাকারের জিহবায় জল। শরীরে বল। ঝাউডাঙার বারবণিতাদের পোয়াবার। মোজু রাজাকার খেলবে এবার বেবুস্যে মাঠে। গোবিন্দকাটির মায়ের কোল খালি হয়। পাথরঘাটার পরহেজগারের জানাজায়।
সাফা মারওয়ার শয়তানগুলো বাগিয়ে শত্রু সম্পত্তির মৌজায় মৌজায় বসিয়ে রেখেছে। মালাউনদের ‘জমি’ গণিমতে মাল। আলের গায়েই তো ধান। আল কেটে জমি বাড়ায় বোম্বাই হাজী। খোকা মল্লার জমি দানবে খায়। মালাউনদের মাংশে বড্ড সাদ; গণিমতের মাল। পাকিস্তান-হিন্দুস্থান নর মাংশ ভোজের মহাস্থান।
বড় মল্লার কবরে জোলা মনসুরের কবিরাজি ওষুধের বোতল। কাজ হলো নারে, কোন কাজ হলো না। সাড়ে তিন হাত ছাড়া মানুষের কি থাকে, থাকে মানুষ হবার সাধনা। শব‘ইবরাতের রাতে গো-মাংশের ঢেঁকুরে রয়েলবেঙ্গলের লালা। ওরা সব খাবে। বরাতের রাতে বড়াই করে বলতে হবে না, আমরা হানাফি। হাদীস অলারা বলবে জাহান্নামী। সবাই নামী-দামী বেহেশ্তবাসী কি না। ইসরাইল মাস্টারের নির্ভিকতায় বুকের মধ্যে গোলা-বারুদের ক্ষত। শালা বাদরের বাংলাদেশ। মহররম দেয়ার বল দেয়ার। রিফ্যুজিরা মাঠে যায়- জোলারা জমিজমায়।
গোবিন্দ চন্দ্র বিদ্যালয়ে সুধির বাবুদের সুদের হিসাব। সাংঘাতিক সাংবাতিকতা আর কারে বলে! এক একটা সংবাদে জোলা-রিফ্যুজি রাত জাগে। মুক্তিপাড়া, আমতলাপাড়া, কলুপাড়ায় শিয়াল ডাকে। কার ঘরে কে যাবে? কার মুরগি কে খাবে? ভোটের আগে সব দেবে। ভোট ফুরালে সব নেবে। সুদের অংক চায়। সুদ-কষায় ফুল মার্ক, নইলে মুরদাবাদ। মাছি মারা কেরানিদের মুখে বেদ বাক্য। বক্তৃতার বখ্তিয়ার খিল্জি ঘোড়া ছুটায় রাজবাড়ীর বলাডাঙার মাঠে। শূন্য মাঠে কেরানির কদর হেড পন্ডিতের ওপরে। কেরানির কেরামতি কোমলমতি বালিকার কপাল পোড়ায়। দুধের সরের মত সতীত্ব শুকরে চটকায়। বিদ্যা বিনয়ের বাজারে বেবুস্যে ব্যবসা। বাণিজ্যের বিদ্যা, বিদ্যার বাণিজ্য। বিদ্যা বাণিজ্যং দদাতি। মানবতা খাদ্যং হযাতি।
মালাউন ম্লেচ্ছ দেশে মাৎস্যন্যায়ে মাছ মারে মেকুর মানুষ। মেদ মজ্জা হাড়পাঁজর খেয়ে মনিবের কলজে ছেড়ে। আরে পাইছি আর পাবো। খেয়ে দেয়ে দেউড়িতে বসে গালি দেবো। আমরাতো বাবার বাবা। রাজনীতি ব্যবসায় খানদানি মাল। আরবী রাজতন্ত্র আজমী বঙ্গে। সাধ্যি আছে তো দেখাক না শালা, কার কত ক্ষতি করার শক্তি সামর্থ। গ্রাম সরকার। পুলিশিং কমিটিতে শালা চুতমারানির মূর্খের দল। শিক্ষিত লোকেরা শালিস করে না। কপি ক্ষেতে শুকুর তাড়ায়। কার ঘরে কে সাজাল দেয়। খাকনা এডিস মশা; ডেঙ্গু জ্বরে মরবে। আমার তাতে কি? নিজেরটা ঠিকঠাক থাকলে হয়। ছোট সংসার ছোট চিন্তায় বাড়তি ঝক্কি ঝামেলা। হোক না মেম্বর-চেয়ারম্যান; চোর-শোর, দালাল-বাটপার।
কিন্তু আগুন লাগলে দেবালয় রক্ষা পায় না। চালাক মানুষ ! তোমার ছোট্টঘরের ছোট্ট আঙিনায় আগুন লাগলে ঘর দোর পুড়বে। দহনে কলজে জ্বলবে। কী জানি কিসে কী হয় বাপু। আমারটা বজায় থাকলে বেঁচে যাই। রক্ষে নেই গোলাম হোসেন। রক্ষে নেই। বঙ্গদেশের বেবুশ্যে বাঙাল বড্ড হুজুগে। গড্ডল প্রবাহে তিন লক্ষ থেকে ত্রিশ লক্ষ প্রাণ দেবে। রাজাকার মুক্তিফৌজ মিলে জলসা করবে। ক্ষমতা দেখাতে হবে আর কী !
মিলিটারি আম গাছের উপরে। মনির বাসপাতা কাগজের ঘুড়ি উড়ছে। বলাডাঙার সরদার পাড়ার ঘুুড়ির চোখে ঘুম নেই, গান গেয়ে গালি দেয়- তোমাদের ঘরে শান্তি নেই। রামায়ণের রাজ্যে বিষাদসিন্ধু। দজলা ফুরাত ফুরিয়ে গঙ্গা ভাগিরথিয় ভাগ বসাও। রাজতন্ত্রের রাজন। মসজিদের মুনিষ খাটতে চাওনা। পেট্রো ডলারে পরের পয়সায় পোদ্দারি। খোকার সব চাই। খানের আমলের খান খান করা মাঠে স্বাধীন বাংলার জন্মান্তরে। বালক বেলার বল্গা বিশ্বাসে বিরতি নেই। বিভূতির দেবযানে চড়ে সতিনাথের বাঁশতলা দিয়ে ঢুকে মালপাড়া হয়ে-আমতলা পাড়ায় আতা মল্লার ভিটায় আম কুড়াবে। প্রাণভরে আম কুড়ায়। কেউ বাধা দেয় না। চার-চারটা কলপি আমগাছে আমগুলো নুয়ে পড়েছে। মতিয়ার দালালের কাঁচামিঠে আমে কাটা। মেদ-দাদির গালি খেয়ে কত জাহাঙ্গীর পালালো। খায়ের মিয়ার ভূতের বাগানের ভূতগুলো একরামুলের তাড়া খেয়ে পালায়। হাফিজুল মতি বুড়োর তরমুজ নিয়ে বাঘ অলা বাড়ির দোলুজে ছোটে। আরবীদের রাজ্যে আজমী বাঙাল, পাইছে আর পাবে !
মুফ্তিপাড়ার মুফ্তিরা কাতারে কাতারে বাই-সাইকেল মেরামতের মধ্যযুগ পার করে। ডিজিটাল ডিশে পেট্রোডলার দেখায়। সব কিনে নেবে। দ্বিগুন দশগুন দামে বাঁধা নেই। মুলুক মালিকানার দলিলে ছেয়ে দেবে রাজতন্ত্রের রাজ ব্যবসা।
তারের বেড়ের ওই লেজ লম্বা পাখিটা কোথায় গেল।
দুধে আলতা মেশানো রঙে পাখায় সাদা হলুদের হিরন্ময় দ্যুতি। খোকা দেখছে পাখিটাকে। বড় মল্লার বাঁশঝাড়ে বসে পাখিটা লেজ নাড়ে। খোকার বিস্ময়ের বিশ্ব নড়ে। পাখিটা ওড়ে খোকা ওড়ে। বড় পুকুরের সান বাধানো ঘাট। মালাউনদের বাড়ী, পূজোর ঘর, ম্লেচ্ছ মুসলমানের। জাত সাপের জাত যায় না। মালাউনদের কী রুচী ! বাড়ীগুলোর দিকে তাকালে বোঝা যায়। ওদের সব ভালো। দোষের মধ্যে দোষ ওরা নুনু কাটে না। ম্লেচ্ছদের ভাষায় অভিশপ্ত। দেখতে দেখতে ওই লেজ লম্বা পাখিটার মত মানুষগুলো চলে গেল। বাঘওলা বাড়ীর বাঘ মক্কা মদীনার চিড়িয়াখানায়। খোকা পাখি ধরবে কী বাঘ ধরবে জানে না।
পাখির মায়া বাঘের কায়ায় খোকার ইচ্ছে ঘুড়ি ঘোরে। ভেড়ি পাড়া, ঘোষ পাড়া, মাল পাড়া, আমতলা পাড়ায়। রিফ্যুজি পাড়ার ময়জার খোলায় জোলাপাড়ার জল। মুফ্তি পাড়ায় পেট্রো ডলার। জোলা পাড়ার জাত সাপগুলো বড্ড খারাপ। সুযোগ বুঝে রিফ্যুজি পাড়ায় ঢুকে ডিম মুরগী সব উজাড় করে।
খোকার ইচ্ছে ঘুড়ি উড়ে উড়ে ঘুরে ঘুরে কথা বলে- সাড়ে তিন হাত জাগায় এত সব রাখবে কোথায়? খাও যা খেতে চাও খেয়ে নাও। খেতে পারছো না তাই না? পেটের মধ্যে সাড়ে তিনশ বিঘা জমি জাগর তোলে। কসাইদের কাছে কলিজার কাঁটা ছেঁড়া। মানুষের কাছে মানুষের যাওয়া আসা, ফিরে আসা। যেতে যেতে ফিরে আসা।
এক মা এক মাটি জলের চারাগুলো দুই মা-তে ভাগ হয়ে যাবার পর কেমন যেন হয়ে গেল ! অন্নকে ভাত, ভাতকে অন্ন বলতে বলতে-জলকে পানি, পানিকে জল করে ফারাক্কার ফাপরে মরে ডুবে অথবা শুকিয়ে। শ্মশানের কাঠগুলো শুকিয়ে আগুন । কবর গুলো জল পানি। টিপাইমুখের বাঁধে মমতার মুখ আঁটকায় না। দুই সতিনের চুলোচুলিতে কৃষ্ণ মহম্মদের উকুনগুলো ছটফট করে। মাথায় মগজে কুট কুট কামড়ের কাল শেষ হয়ে যায়। কোথায় যাবে কী খাবে ভেবে হামলে বেড়ায়। ধম্মরাজ্য রক্ষায় রক্ত ঝরানোর উৎসব চলে ১২ মাসে ১৩ বার। রক্তের দাগ শুকাতে না শুকাতে রক্তপাত। হালাকু, চেঙ্গিস, রাজপুতানিদের উত্তর পুরুষের রক্তের নেশা কী আর মেটে ! নুনু কাটার দল আর নুনু ঢাকার দলে ফারাক না থাকলে কেরামতির কারবার চলে না। নুনু কাটার দলগুলোর হরেক কেসম। কারো ইমাম লাগে আবার কারো লাগে না। কেউ দোয়া করে, কেউ দোয়া করতে নিষেধ করে। এসব দেখে নুনু ঢাকা দলের লোকগুলো মুচকি হাসে। দেখি না যবনরা কি করে। মগডালে চড়িয়ে মজা দেখায়।
ধম্ম নিরপেক্ষ উড়াল দেওয়া গণতন্ত্রের মডেল কন্যা মাজা দোলায়। এক দল মজা দেখে অন্য দল মরে-মসজিদে মন্দিরে। বেহেশত-দোজখ ! স্বর্গ-নরক !
কাটা তারের এপার ওপার। একপারের ম্লেচ্ছ অন্য পারে মালাউন। মালাউন ম্লেচ্ছদের আশে পাশে যারা আছে এপারে ওপারে তাদের কারো নুনু কাটা আবার কারো নুনু ঢাকা ! বড্ড মুশকিল !
মেলায় মালাউন ম্লেচ্ছদের মেলা হয় অথবা স্বর্গ যাওয়ার কালে। মালাউন ম্লেচ্ছদের সংকরায়ণের সন্তানরা হয় মানুষ না খোজা। খোজাকে খুঁজতে সময় লাগে। মানুষকে চেনা যায় পুরুষ অথবা নারী রূপে। মানুষ হলে মত প্রকাশ করে। মত প্রকাশের অধিকারে অনড় থাকে। স্বাধীনতাকে স্বাধীন রাখে। পরাধীনতা পায়ে মাড়িয়ে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। খোজারা পালিয়ে থাকে। নারী পুরুষের পাছায় লাগে না ; পাছে সব বেরিয়ে পড়ে। বজ্র আটুনি ফস্কা গেরোয় খোজারা ঢেকে রাখে নপুঙ্শতা। যদি দেখে ফেলে কেউ, যতেœ জমানো সম্পদ সোনা কেড়ে নেবে নারী, পুরুষ, মানুষ।
কার খাদ্য কে কাড়ে। কত সাতচল্লিশ গেল। বায়ান্নতে মায়ের কোল খালি হয়ে কলজে পুড়ে জুড়ে গেল। খোকা ছোটে বিজিপি-বিএসএফের চোখে ধুলা দিয়ে সোনাই নদী, কাটা তার পেরিয়ে। আছিয়া খাতুনের বালিকাবেলায় ইটেন্ডা বাদুড়িয়ায়। আব্দুস সোবহানের সোনা রুপার বাজারে। রহিমা খাতুনের আতুর ঘরে।
খোকার আতুর ঘরে কাটা তারের এপার ওপারে ফেলানীদের লাশের রাজনীতি নেই। ইচ্ছে মত উড়া যায় মালাউন ম্লেচ্ছ দেশে।
"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভানুধ্যায়ী এবং সম্মানিত অবদানকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।