হযরত জুনায়েদ বাগদাদী (রঃ) – পর্ব ৫
হযরত জুনায়েদ বাগদাদী (রঃ) – পর্ব ৪ পড়তে এখানে ক্লিক করুন
১১. যদি আমি জানতাম যে, তোমাদের উপদেশ দান করা অপেক্ষা নামাজ আদায় উত্তম, তাহলে নিশ্চয়ই উপদেশ দান থেকে বিরত থাকতাম।
১২. হযরত জুনায়েদ (রঃ) বছরভর নফল রোজা রাখতেন। তবে ঘরে মেহমান এলে রোজা ভেঙে দিতেন। বলতেন, মেহমানের সঙ্গে পানাহার করার মূল্য নফল রোজার চেয়ে কম নয়।
১৩. হযরত জুনায়েদ (রঃ) ও হযরত আবু বকর আসায়ী (রঃ)-এর মধ্যে মারেফাততত্ত্ব বিষয়ক প্রায় এক হাজার মাসআলা নিয়ে আলাপ-আলোচনা হয়। হযরত আবু বকর (রঃ) হযরত জুনায়েদ (রঃ)-কে মৃত্যুর আগে বলে যান, মাসআলাগুলি যেন তাঁর সাথেই দাফন করা হয়। এর জবাবে হযরত জুনায়েদ (রঃ) বলেন, মাসআলাগুলি এভাবে অন্যের হাতে পড়ার চেয়ে আপনার ও আমার বুকের মধ্যেই গুপ্ত থাক।
১৪. হযরত জুনায়েদ (রঃ) যখন জ্ঞান বিদ্যায় অভিজ্ঞ হয়ে উঠলেন, তখন তাঁর মামা হযরত সাকতী (রঃ) তাঁকে প্রকাশ্যে বক্তৃতা দেবার নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, আপনার বর্তমান আমার পক্ষে এ কাজ শোভনীয় নয়। কিন্তু ঐ রাতেই এ বিষয়ে তিনি রাসূলে করীমের স্বপ্নাদেশ পান। আর মামার কাছে স্বপ্নবৃত্তান্ত বলার আগেই তিনি (হযরত সাকতী (রঃ)) বলেন, তুমি কি এখনও চাও যে, ওয়াজ-নসীহতের জন্য মানুষ তোমাকে আরও অনুরোধ করুক? খোদ রাসূলুল্লাহ (সঃ) বললেন, আপনি রাসূলুল্লাহর স্বপ্নাদেশের কথা জানালেন কী করে? হযরত সাকতী (রঃ) বললেন, আজ রাতে স্বয়ং আল্লাহ্ পাককে বলতে শুনলাম, আমি মুহাম্মদ (সঃ)-কে এই জন্য প্রেরণ করলাম যে, তিনি জুনায়েদ বাগদাদী (রঃ)-কে বক্তৃতা দেওয়ার জন্য তাগাদা দেবেন। যাই হোক, হযরত জুনায়েদ (রঃ) বক্তৃতা দিতে রাজি হলেন, তবে একটি শর্ত আরোপ করলেন এই মর্মে যে, তাঁর সভায় চল্লিশ জনের বেশী শ্রোতা থাকবে না।
১৫. একবার চল্লিশ জনের এক সভায় তিনি ভাষণ দিলেন, বাইশ জন শ্রোতা জ্ঞান হারায়। আর আঠারো জন মারা যায়।
১৬. হযরত জুনায়েদ (রঃ) একবার নিজের মন হারিয়ে ফেলেন। তা ফিরে পাবার আশায় তিনি আল্লাহ্র দরবারে আবেদন জানান। কিন্তু অদৃশ্য শব্দ শোনা যায়- আমি এই জন্য তোমার মন হরণ করেছি, যাতে তুমি আমার সঙ্গে থাক। তুমি কি অন্যের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকার জন্য মন ফিরে পেতে চাও?
১৭. আপনি এতো উচ্চ মর্যাদার অধিকারী হলেন কী করে? এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমি দীর্ঘ চল্লিশ বছর আমার পীরের দরজায় এক পায়ে দাঁড়িয়ে থেকে এ মর্যাদা লাভ করেছি।
১৮. হযরত শিবলী (রঃ) একবার বললেন, আল্লাহ্ যদি তাঁকে জান্নাত বা জাহান্নামে প্রবেশের অনুমতি দেন তাহলে তিনি জাহান্নামই পছন্দ করবেন। কেননা, জান্নাত হল তাঁর পছন্দের স্থান আর আল্লাহ্ পছন্দ করেন জাহান্নাম। সুতরাং সু বন্ধুর পছন্দনীয় স্থানকে অপছন্দ করা বন্ধুর কাজ নয়। এ কথাটি হযরত জুনায়েদ (রঃ)-এর কর্ণগোচর হলে তিনি বললেন, আমি তো আল্লাহ্র দাস হিসেবে কোন কিছুরই অধিকারী বলে দাবীকরতে পারি না। দাসের আবার ইচ্ছা-অনিচ্ছা কি? তাই আমাকে ঐরূপ অধিকার দিলে বলব, দয়াময়, আপনি আমাকে যেখানে পাঠাবেন আমি সেখানেই যাব। আপনার যা পছন্দ আমি তাতেই সুখী।
১৯. বনবাসিনী এক বৃদ্ধা হযরত রুয়েম (রঃ)-কে বলে পাঠালেন, তিনি যেন বাগদাদে পৌঁছে হযরত জুনায়েদ বাগদাদী (রঃ)-কে বলেন, জনগণের সম্মুখে আল্লাহ্র ধ্যান করতে তার কি লজ্জা হয় না? একথা শুনে হযরত জুনায়েদ বাগদাদী (রঃ) বলেন, আমি জনগনের সামনে আল্লাহ্র ধ্যান করি এই জন্য যে, কারও দ্বারাই তাঁর ধ্যানের হক পুরোপুরি আদায় হচ্ছে না।
২০. এক ব্যক্তির স্বপ্নে দেখলেন রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর সঙ্গে হযরত জুনায়েদ (রঃ)-কে। কেউ একজন প্রশ্ন করল, নবীজী নিজে উত্তর না দিয়ে হযরত জুনায়েদ (রঃ)-এর কাছে জেনে নেবার ইশারা করলেন। কিন্তু হযরত জুনায়েদ (রঃ) বললেন, যেখানে স্বয়ং রাসূলে কারীম হাজির, সেখানে অন্য লোকের কী প্রয়োজন? তখন নবী মুস্তফা (সঃ) বললেন, প্রত্যেক নবীই নিজ নিজ উম্মতের গৌরব করে থাকেন। বস্তুত আমি আমার উম্মতগণের মধ্যে জুনায়েদ (রঃ)-কে নিয়ে বেশী গৌরব বোধ করি।
২১. হযরত জুনায়েদ (রঃ) একবার হযরত জাফর ইবনে নসর (রঃ)-কে একটি দিরহাম দিয়ে আঞ্জীর ও যাইতুনের তেল কিনে আনতে বললেন। ইফতারের সময় আঞ্জীর মুখে দিয়েই আবার তা মুখ থেকে বের করে ছুড়ে ফেললেন। হযরত জাফর (রঃ) এরূপ করার কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, আমি এইমাত্র অদৃশ্য শব্দ শুনলাম। বলা হল, আল্লাহ্র ধ্যানের জন্য যে বস্তু বর্জন করেছিলেন, আবার তাঁর দিকে আকৃষ্ট হলেন কেন?
২২. একজন সাধক রোগ-যন্ত্রণায় জর্জরিত হয়ে কান্নাকাটি করছেন। হযরত জুনায়েদ (রঃ) বললেন, এই কান্না দিয়ে আপনি কার বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাচ্ছেন? দরবেশ চুপ করে রইলেন। তিনি তাঁকে আবারও বললেন, এখন আপনি কার জন্যে ধৈর্যধারণ করছেন? রোরুদ্যমান অবস্থায় সাধক বললেন, আমার নিজস্ব কান্নায় কোন উপকরণ নেই। আর ধৈর্য ধরারও কোন শক্তি নেই।
সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া