কোব্বালা — ভূতের গল্প

চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে চমকে উঠে তন্ময়।
আগুন গরম চা। তবে তার চমকে ওঠার কারণ চায়ের উত্তাপ নয়, চায়ের স্বাদ। এই অজপাড়া গাঁয়ের ছাপড়া চায়ের দোকানের চা যে এতোটা ভালো হবে তা ছিল কল্পনার অতীত।

চায়ের কারিগরের দিকে দৃষ্টি ফেরায় তন্ময়। পরণের সার্টটি পুরোনো হলেও বেশ পরিষ্কার। প্রচণ্ড গরমে আমি দর দর করে ঘামছি, অথচ এই লোক দিব্যি চুলোর পাশে বসে চা বানাচ্ছে। চোখে-মুখে কোনো বিরক্তির ছাপ নেই। শরীরে নেই এক ফোটা ঘামের আভাস।

চমৎকার চায়ের স্বাদ নিতে দিতে দিতে তন্ময়ের মনের সকল বিরক্তি ধীরে ধীরে কেটে যেতে থাকে। বিরক্ত হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে। ঢাকা-ময়মনসিংহ হাইওয়ের পাশে এই ছাপড়া দোকানে সে ঝাড়া একঘন্টা ধরে বসে আছে। তাকে নিতে যার আসার কথা, তার কোনো পাত্তা নেই। বারবার মোবাইলে ফোন করছে—সংযোগ দেওয়া সম্ভব নয়। এদিকে গরমে জান ভাজা ভাজা।

তন্ময়ের আমেরিকা প্রবাসী মামার শখ হয়েছে গাজীপুরে কিছু জমি কিনে বাগান বাড়ি বানাবেন। সেই জমি দেখতেই এসেছে। কিন্তু জমির দালাল দেলোয়ারের কোনো পাত্তা নেই। কাল রাতেও কথা হয়েছিল—বাঘের বাজার বাস স্ট্যান্ডে সে মোটরসাইকেল নিয়ে অপেক্ষা করবে। এখন পর্যন্ত মোটরসাইকেলের দেখা নেই।

কব্জি উল্টে ঘড়ি দেখে। পনের মিনিট; এর মধ্যে দেলোয়ার না এলে টাটা বাইবাই। আর থাকবে না তন্ময়।

সময় কাটানোর জন্য চায়ের দোকানীর সঙ্গে আলাপ জুড়ে দেয়।
‘ভাই, কী এই এলাকার মানুষ?’
মাথা নেড়ে সম্মতি জানায় দোকানী।
‘তাহলে তো আপনি দেলোয়ারকে চিনেন?’
এবারও ইতিবাচক ভঙ্গিতে মাথা নাড়ে। বোঝা গেল চা বিক্রেতা আলোচনায় আগ্রহী নয়। সময় কাটাতে হবে! তাই তন্ময় একতরফা আলাপ চালিয়ে যায়।
‘আমাকে নিতে তার আসার কথা, আর মোবাইলও বন্ধ।’
এবার তার দিকে চোখ তুলে তাকায় চা বিক্রেতা।
‘দেলোয়ারের তো হুন্ডা এক্সিডেন্ট হয়েছে। সে আসতে পারবে না।’

খবরটা শুনে তন্ময় চমকে উঠে। ওহহো, তাহলে তো বসে থেকে লাভ নেই। পরের বাস লোকাল হলে ধরে নিতে হবে।

আড়মোড়া ভেঙ্গে উঠে দাঁড়ায়। মানিব্যাগ বের করে চায়ের দাম চুকায়। খুচরা টাকা ফেরত দিতে দিতে চায়ের দোকানী বলে,
‘ভাইজান, কী ঢাকা থাকেন?’
‘হ্যাঁ।’
‘অখনই চলে যাবেন?’
তার প্রশ্নে তন্ময় একটু অবাক হয়। কিছু বলতে চায় কি না ভাবেই হয়তো দোকানী লজ্জিত। দাঁত বের করে একটু বিব্রত হাসি দিয়ে বলে,
‘আপনার হাতে সময় থাকলে একটু বসেন।’
‘কেন, কিছু বলতে চান আমাকে?’

এই প্রশ্নে তন্ময় কৌতূহল বোধ করে। এক কাপ চায়ের অর্ডার দিয়ে জুত হয়ে বসে।
‘বলেন কী কথা। সবার আগে আপনার নামটা বলুন। নাম জানা না থাকলে আলাপ আরামদায়ক হয় না।’
‘আলম।’

এক কথায় উত্তর দিয়ে কিছুক্ষণ চুপ করে বসে থাকে আলম। মনে মনে কথাগুলো সাজিয়ে নেয়। কিছুক্ষণ পর বলতে শুরু করে:

‘সে আমার লগেই থাকে। তিন বছর ধরে। তার ডরে আমি রাতে কুনু খানে যাই পারি না। আশেপাশের দোকানে কাস্টমারের ভিড়, কিন্তু আমার দোকানে একখান মানুষও আসে না। গ্রামের লোকজন আমার সঙ্গে মিশে না। আমি বাইরের দুনিয়ায় এক রকম একা।’

তন্ময় আশ্চর্য হয়। আশপাশের দোকানগুলোতে অনেক গ্রাহক, আলমের দোকানে একা।

আলম গোড়া থেকে গল্প শুরু করে। তিন বছর আগে পৌষ মাসে খালুর মৃত্যু সংবাদ পেয়ে বাগেরহাটের খোন্তাকাটায় যায় আলম। সেখানে জানতে পারে একটি বাড়িতে প্রতি বুধবার জ্বীন নামানো হয়। জ্বীন মানুষের রোগ-শোকের নিবারণ ছাড়াও প্রেমে ব্যর্থতা, আর্থিক উন্নতি, পরীক্ষায় পাশ, হারানো স্বজনকে খুঁজে দেওয়ার মতো সব সমস্যার সমাধান করে।

আলম কৌতূহলবশত হাজির হয়। জ্বীন নামানোর পর্ব দর্শকদের জন্য উন্মুক্ত। শর্ত—পাক-পবিত্র পোশাক পরে আসতে হবে। সব নিয়ম মেনে আলম দুরু দুরু বুকে অন্ধকার ঘরে বসে থাকে। সেখানেই কোব্বালার সঙ্গে তার প্রথম সাক্ষাৎ। এরপর থেকে কোব্বালা আলমের সঙ্গে থাকে।

হাইওয়ে ধরে বাস যাচ্ছে-আসছে। চারদিকে গ্রীষ্মের কাঠফাটা রোদ। বাস স্ট্যান্ডে হাজারো মানুষের আনা-গোনা। এই পরিবেশে এ ধরণের এক ভুতের গল্প শুনে তন্ময় ভয়ে দৌড়ে পালায়।

চায়ের দোকানী আলম বুঝতে পারে তন্ময়ের অবস্থা।
‘আপনার পকেটের মানিব্যাগটা যে আপনি দিয়েছিলেন, অনেক দূরে চলে গেছে।’

তন্ময় আচমকা স্থবির হয়ে যায়। আলমের চোখ সরাসরি তন্ময়ের দিকে। দু’চোখ যেন মস্তিষ্ক ভেদ করছে। মেরুদণ্ডে শীতল স্রোত নামে। পালাতে ইচ্ছে হয়, ছিটকে দোকান থেকে বের হয়। হঠাৎ যে বাসটি পায়, ঝড়ের বেগে সিটে বসে। পরে লক্ষ্য করে, এটি ঢাকাগামী নয়, ময়মনসিংহের দিকে যাচ্ছে।

ধাতস্ত হয়ে ভাবতে থাকে তন্ময়। এখন নিজেকে বোকা মনে হয়। দিনে দুপুরে এমন উদ্ভট গল্প শুনে ভয়ে দৌড়ে পালিয়ে গেছে!


একই সময়ে রিমির গল্প:

একটা দুঃস্বপ্ন দেখে ঘুম ভেঙে যায় রিমি। বুক ধ্বক ধ্বক করছে। গলা শুকিয়ে কাঠ। মোবাইল হাতে নিয়ে সময় দেখে—ভোর ৪:২২। চারদিকে ভেসে আসে ফজরের আজানের ধ্বনি। বিছানায় শুয়ে শুনতে শুনতে স্বপ্নটা মনে করার চেষ্টা করে। কিন্তু কিছুই মনে পড়ে না।

তীব্র আতঙ্কে গা কাঁপতে থাকে। দরজা খুলে বাথরুমে ঢুকে হড়হড় করে বমি করে। ঘরের মেঝে ভিজে যায়। ঘাম কুল কুল করে।

মোবাইল বাজে, রিমি কাঁপা হাতে ফোনটা তুলে নেয়। স্ক্রিনে তন্ময়ের নাম। নিজেই হেসে ওঠে।

  • হ্যালো?

  • কী করছিলে রিমি?

  • এইমাত্র ঘুম ভাঙলো, বাথরুমে ছিলাম।

ভয়ের প্রশ্নে রিমি অবাক।

  • তুমি এতো সকালে কী করছো? শরীর ঠিক আছে তো?
    তন্ময় হেসে উত্তর দেয়, ‘না, এখন অনেক ভালো আছি। রাতে অনেক কাজ ছিল। এখন ঘুমাতে যাচ্ছি।’ লাইন আচমকা কেটে যায়।

বিকেল পর্যন্ত রিমি চিন্তা করে, কিন্তু সকালের ভয় আর নেই।

ছুটির দিন। রিমির বাবা মোর্শেদ আলম রং মিস্ত্রিদের সঙ্গে কাজ করছেন। রিমি চায়ের কাপ হাতে বাবা’র কাছে দাঁড়ায়। চারদিকে উৎসবমুখর ভাব। ছোট ভাই বাবু বন্ধুদের সঙ্গে দোতলার রুমে। মা রান্নাঘরে ব্যস্ত।

রিমি ঘরে গিয়ে ঘুমে ঢলে পড়ে।

বিকেলের শেষের দিকে তীব্র বোটকা গন্ধে ঘুম ভাঙে। প্রথমে বুঝতে পারে না। সন্ধ্যা অন্ধকারে। বাবা-মা মার্কেট থেকে ফিরেননি। ভোরের আতঙ্ক আবার বেড়ে যায়। বাথরুমে যেতে পারছে না, খাবারও উগড়ে দেয়। আগস্টের গরমে ঘরের মধ্যে অদ্ভুত শীতল। ঘাম কুল কুল করছে।

চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে চমকে উঠে তন্ময়।
আগুন গরম চা। তবে তার চমকে ওঠার কারণ চায়ের উত্তাপ নয়, চায়ের স্বাদ। এই অজপাড়া গাঁয়ের ছাপড়া চায়ের দোকানের চা যে এতোটা ভালো হবে তা ছিল কল্পনার অতীত।

চায়ের কারিগরের দিকে দৃষ্টি ফেরায় তন্ময়। পরণের সার্টটি পুরোনো হলেও বেশ পরিষ্কার। প্রচণ্ড গরমে আমি দর দর করে ঘামছি, অথচ এই লোক দিব্যি চুলোর পাশে বসে চা বানাচ্ছে। চোখে-মুখে কোনো বিরক্তির ছাপ নেই। শরীরে নেই এক ফোটা ঘামের আভাস।

চমৎকার চায়ের স্বাদ নিতে দিতে দিতে তন্ময়ের মনের সকল বিরক্তি ধীরে ধীরে কেটে যেতে থাকে। বিরক্ত হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে। ঢাকা-ময়মনসিংহ হাইওয়ের পাশে এই ছাপড়া দোকানে সে ঝাড়া একঘন্টা ধরে বসে আছে। তাকে নিতে যার আসার কথা, তার কোনো পাত্তা নেই। বারবার মোবাইলে ফোন করছে—সংযোগ দেওয়া সম্ভব নয়। এদিকে গরমে জান ভাজা ভাজা।

তন্ময়ের আমেরিকা প্রবাসী মামার শখ হয়েছে গাজীপুরে কিছু জমি কিনে বাগান বাড়ি বানাবেন। সেই জমি দেখতেই এসেছে। কিন্তু জমির দালাল দেলোয়ারের কোনো পাত্তা নেই। কাল রাতেও কথা হয়েছিল—বাঘের বাজার বাস স্ট্যান্ডে সে মোটরসাইকেল নিয়ে অপেক্ষা করবে। এখন পর্যন্ত মোটরসাইকেলের দেখা নেই।

কব্জি উল্টে ঘড়ি দেখে। পনের মিনিট; এর মধ্যে দেলোয়ার না এলে টাটা বাইবাই। আর থাকবে না তন্ময়।

সময় কাটানোর জন্য চায়ের দোকানীর সঙ্গে আলাপ জুড়ে দেয়।
‘ভাই, কী এই এলাকার মানুষ?’
মাথা নেড়ে সম্মতি জানায় দোকানী।
‘তাহলে তো আপনি দেলোয়ারকে চিনেন?’
এবারও ইতিবাচক ভঙ্গিতে মাথা নাড়ে। বোঝা গেল চা বিক্রেতা আলোচনায় আগ্রহী নয়। সময় কাটাতে হবে! তাই তন্ময় একতরফা আলাপ চালিয়ে যায়।
‘আমাকে নিতে তার আসার কথা, আর মোবাইলও বন্ধ।’
এবার তার দিকে চোখ তুলে তাকায় চা বিক্রেতা।
‘দেলোয়ারের তো হুন্ডা এক্সিডেন্ট হয়েছে। সে আসতে পারবে না।’

খবরটা শুনে তন্ময় চমকে উঠে। ওহহো, তাহলে তো বসে থেকে লাভ নেই। পরের বাস লোকাল হলে ধরে নিতে হবে।

আড়মোড়া ভেঙ্গে উঠে দাঁড়ায়। মানিব্যাগ বের করে চায়ের দাম চুকায়। খুচরা টাকা ফেরত দিতে দিতে চায়ের দোকানী বলে,
‘ভাইজান, কী ঢাকা থাকেন?’
‘হ্যাঁ।’
‘অখনই চলে যাবেন?’
তার প্রশ্নে তন্ময় একটু অবাক হয়। কিছু বলতে চায় কি না ভাবেই হয়তো দোকানী লজ্জিত। দাঁত বের করে একটু বিব্রত হাসি দিয়ে বলে,
‘আপনার হাতে সময় থাকলে একটু বসেন।’
‘কেন, কিছু বলতে চান আমাকে?’

এই প্রশ্নে তন্ময় কৌতূহল বোধ করে। এক কাপ চায়ের অর্ডার দিয়ে জুত হয়ে বসে।
‘বলেন কী কথা। সবার আগে আপনার নামটা বলুন। নাম জানা না থাকলে আলাপ আরামদায়ক হয় না।’
‘আলম।’

এক কথায় উত্তর দিয়ে কিছুক্ষণ চুপ করে বসে থাকে আলম। মনে মনে কথাগুলো সাজিয়ে নেয়। কিছুক্ষণ পর বলতে শুরু করে:

‘সে আমার লগেই থাকে। তিন বছর ধরে। তার ডরে আমি রাতে কুনু খানে যাই পারি না। আশেপাশের দোকানে কাস্টমারের ভিড়, কিন্তু আমার দোকানে একখান মানুষও আসে না। গ্রামের লোকজন আমার সঙ্গে মিশে না। আমি বাইরের দুনিয়ায় এক রকম একা।’

তন্ময় আশ্চর্য হয়। আশপাশের দোকানগুলোতে অনেক গ্রাহক, আলমের দোকানে একা।

আলম গোড়া থেকে গল্প শুরু করে। তিন বছর আগে পৌষ মাসে খালুর মৃত্যু সংবাদ পেয়ে বাগেরহাটের খোন্তাকাটায় যায় আলম। সেখানে জানতে পারে একটি বাড়িতে প্রতি বুধবার জ্বীন নামানো হয়। জ্বীন মানুষের রোগ-শোকের নিবারণ ছাড়াও প্রেমে ব্যর্থতা, আর্থিক উন্নতি, পরীক্ষায় পাশ, হারানো স্বজনকে খুঁজে দেওয়ার মতো সব সমস্যার সমাধান করে।

আলম কৌতূহলবশত হাজির হয়। জ্বীন নামানোর পর্ব দর্শকদের জন্য উন্মুক্ত। শর্ত—পাক-পবিত্র পোশাক পরে আসতে হবে। সব নিয়ম মেনে আলম দুরু দুরু বুকে অন্ধকার ঘরে বসে থাকে। সেখানেই কোব্বালার সঙ্গে তার প্রথম সাক্ষাৎ। এরপর থেকে কোব্বালা আলমের সঙ্গে থাকে।

হাইওয়ে ধরে বাস যাচ্ছে-আসছে। চারদিকে গ্রীষ্মের কাঠফাটা রোদ। বাস স্ট্যান্ডে হাজারো মানুষের আনা-গোনা। এই পরিবেশে এ ধরণের এক ভুতের গল্প শুনে তন্ময় ভয়ে দৌড়ে পালায়।

চায়ের দোকানী আলম বুঝতে পারে তন্ময়ের অবস্থা।
‘আপনার পকেটের মানিব্যাগটা যে আপনি দিয়েছিলেন, অনেক দূরে চলে গেছে।’

তন্ময় আচমকা স্থবির হয়ে যায়। আলমের চোখ সরাসরি তন্ময়ের দিকে। দু’চোখ যেন মস্তিষ্ক ভেদ করছে। মেরুদণ্ডে শীতল স্রোত নামে। পালাতে ইচ্ছে হয়, ছিটকে দোকান থেকে বের হয়। হঠাৎ যে বাসটি পায়, ঝড়ের বেগে সিটে বসে। পরে লক্ষ্য করে, এটি ঢাকাগামী নয়, ময়মনসিংহের দিকে যাচ্ছে।

ধাতস্ত হয়ে ভাবতে থাকে তন্ময়। এখন নিজেকে বোকা মনে হয়। দিনে দুপুরে এমন উদ্ভট গল্প শুনে ভয়ে দৌড়ে পালিয়ে গেছে!

একই সময়ে রিমির গল্প:

একটা দুঃস্বপ্ন দেখে ঘুম ভেঙে যায় রিমি। বুক ধ্বক ধ্বক করছে। গলা শুকিয়ে কাঠ। মোবাইল হাতে নিয়ে সময় দেখে—ভোর ৪:২২। চারদিকে ভেসে আসে ফজরের আজানের ধ্বনি। বিছানায় শুয়ে শুনতে শুনতে স্বপ্নটা মনে করার চেষ্টা করে। কিন্তু কিছুই মনে পড়ে না।

তীব্র আতঙ্কে গা কাঁপতে থাকে। দরজা খুলে বাথরুমে ঢুকে হড়হড় করে বমি করে। ঘরের মেঝে ভিজে যায়। ঘাম কুল কুল করে।

মোবাইল বাজে, রিমি কাঁপা হাতে ফোনটা তুলে নেয়। স্ক্রিনে তন্ময়ের নাম। নিজেই হেসে ওঠে।

  • হ্যালো?

  • কী করছিলে রিমি?

  • এইমাত্র ঘুম ভাঙলো, বাথরুমে ছিলাম।

ভয়ের প্রশ্নে রিমি অবাক।

  • তুমি এতো সকালে কী করছো? শরীর ঠিক আছে তো?
    তন্ময় হেসে উত্তর দেয়, ‘না, এখন অনেক ভালো আছি। রাতে অনেক কাজ ছিল। এখন ঘুমাতে যাচ্ছি।’ লাইন আচমকা কেটে যায়।

বিকেল পর্যন্ত রিমি চিন্তা করে, কিন্তু সকালের ভয় আর নেই।

ছুটির দিন। রিমির বাবা মোর্শেদ আলম রং মিস্ত্রিদের সঙ্গে কাজ করছেন। রিমি চায়ের কাপ হাতে বাবা’র কাছে দাঁড়ায়। চারদিকে উৎসবমুখর ভাব। ছোট ভাই বাবু বন্ধুদের সঙ্গে দোতলার রুমে। মা রান্নাঘরে ব্যস্ত।

রিমি ঘরে গিয়ে ঘুমে ঢলে পড়ে।

বিকেলের শেষের দিকে তীব্র বোটকা গন্ধে ঘুম ভাঙে। প্রথমে বুঝতে পারে না। সন্ধ্যা অন্ধকারে। বাবা-মা মার্কেট থেকে ফিরেননি। ভোরের আতঙ্ক আবার বেড়ে যায়। বাথরুমে যেতে পারছে না, খাবারও উগড়ে দেয়। আগস্টের গরমে ঘরের মধ্যে অদ্ভুত শীতল। ঘাম কুল কুল করছে।

"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভাকাংখী এবং সম্মানিত আবেদনকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

সম্পর্কিত পোস্ট

দুঃখিত!