হযরত যুনযুন মিসরী (রঃ)- পর্ব ৯

হযরত যুনযুন মিসরী (রঃ) – পর্ব ৮ পড়তে এখানে ক্লিক করুন

এবাদতের ক্ষেত্রে এমন বহু ঘটনা দেখা যায় আপাতদৃষ্টিতে যা শরীয়ত বিরোধী বলে মনে হয়। কিন্তু সূক্ষ্ণভাবে চিন্তা করলে দেখা যাবে, তা শরীয়তসম্মতই বটে। যেমন, হযরত ইব্রাহীম (আঃ)-কে প্রথমে পুত্র কোরবানীর আদেশ দেওয়া হয়, কিন্তু পরে তা আবার নিষেধ করা হয়। হযরত খিযির (আঃ) এক নিষ্পাপ শিশুকে হত্যা করেন। আপাতদৃষ্টিতে তার কোন কারণ ছিল না। কিন্তু তাও স্বয়ং আল্লাহর ইচ্ছায় সম্পন্ন হয়েছে।

এক চাষী খুব কষ্ট করে কাবা তওয়াফ করেছিল। তা দেখে হযরত যুনযুন (রঃ) তাঁকে জিজ্ঞেস করেন, তুমি কি আল্লাহর বন্ধু?

জি হ্যাঁ।

তিনি তোমার কাছে না দূরে?

কাছেই।

তিনি তোমার পক্ষে না বিপক্ষে?

পক্ষে।

তাহলে তোমার এ দূরবস্থা কেন?

তিনি বললেন, বিরূদ্ধাচরণের কষ্ট যত বেশীই হোক, নৈকট্য অর্জনের শান্তির কাছে তা কিছুই নয়।

একবার এক মহিলাকে তিনি প্রশ্ন করেন, প্রেমের সীমা কোন খানে?

মহিলা উত্তর দেন, প্রেমের কোন সীমা নেই।

কেন নেই?

যেহেতু প্রেমাস্পদ অসীম

এক আল্লাহ প্রেমী ব্যক্তি নিজেকে আল্লাহর বন্ধু বলে প্রচার করতেন। অসুস্থাবস্থায় হযরত (রঃ) তাঁকে দেখতে গেলেন। কথায় কথায় ঐ ব্যক্তি বললেন, আল্লাহর দেওয়া কষ্টকে যে কষ্ট মনে করে, সে আল্লাহর বন্ধু নয়। হযরত যুনযুন (রঃ) সুযোগ পেয়ে বললেন, নিজেকে যে আল্লাহর বন্ধু বলে প্রচার করে, সে কখনও আল্লাহর বন্ধু হতে পারে না। এ কথায় লোকটির চৈতন্যোদয় হয়। তওবা করে তিনি বললেন, আজ থেকে আর কোনদিন নিজেকে আল্লাহর বন্ধু বলে প্রচার করব না।

একবার হযরত যুনযুন (রঃ) পীড়িত হয়ে পড়লেন। তাঁর সঙ্গে দেখা করতে এসে এক ব্যক্তি বললেন, বন্ধুর দেওয়া অসুখ আরামদায়কই হয়। তিনি বলেন, তুমি যদি তা বুঝতে তাহলে তাঁর কথা অমন অসৌজন্যমূলক ভাবে বলতে পারতে না।

তিনি একবার তাঁর এক বন্ধুকে লেখেন, আল্লাহ আমাদের দুজনকে অজ্ঞতার চাদর দিয়ে ঢেকে পার্থিব বিষয় থেকে অদৃশ্য করে রেখেছেন। আমরা শুধু তাঁর ইচ্ছা অনুযায়ী কাজ করব। আর তিনি আমাদের ওপর খুশী থাকবেন।

একবার বিদেশ ভ্রমণকালে তিনি দেখেন এক অগ্নি-পূজক বরফে ঢাকা মাঠের ওপর শষ্যবীজ বুনছে। কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, সারা মাঠ বরফে ঢাকা। পাখীরা শষ্যদানা খুঁজে পাচ্ছে না। তারা যাতে খাবার পায়, আর তাদের দোয়ার বরকতে আল্লাহ আমার ওপর দয়া বর্ষণ করেন, সেই জন্য এটা করছি। হযরত বললেন, আমি এ ধরণের কাজ পছন্দ করি না। সে বলল, আপনি পছন্দ করুন আর না করুন, এ কাজ আমার জন্য ফলদায়ক।

সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া

হযরত যুনযুন মিসরী (রঃ) – পর্ব ১০ পড়তে এখানে ক্লিক করুন

Written By

More From Author

হযরত যুনযুন মিসরী (রঃ)- পর্ব ৯

হযরত যুনযুন মিসরী (রঃ) – পর্ব ৮ পড়তে এখানে ক্লিক করুন

এবাদতের ক্ষেত্রে এমন বহু ঘটনা দেখা যায় আপাতদৃষ্টিতে যা শরীয়ত বিরোধী বলে মনে হয়। কিন্তু সূক্ষ্ণভাবে চিন্তা করলে দেখা যাবে, তা শরীয়তসম্মতই বটে। যেমন, হযরত ইব্রাহীম (আঃ)-কে প্রথমে পুত্র কোরবানীর আদেশ দেওয়া হয়, কিন্তু পরে তা আবার নিষেধ করা হয়। হযরত খিযির (আঃ) এক নিষ্পাপ শিশুকে হত্যা করেন। আপাতদৃষ্টিতে তার কোন কারণ ছিল না। কিন্তু তাও স্বয়ং আল্লাহর ইচ্ছায় সম্পন্ন হয়েছে।

এক চাষী খুব কষ্ট করে কাবা তওয়াফ করেছিল। তা দেখে হযরত যুনযুন (রঃ) তাঁকে জিজ্ঞেস করেন, তুমি কি আল্লাহর বন্ধু?

জি হ্যাঁ।

তিনি তোমার কাছে না দূরে?

কাছেই।

তিনি তোমার পক্ষে না বিপক্ষে?

পক্ষে।

তাহলে তোমার এ দূরবস্থা কেন?

তিনি বললেন, বিরূদ্ধাচরণের কষ্ট যত বেশীই হোক, নৈকট্য অর্জনের শান্তির কাছে তা কিছুই নয়।

একবার এক মহিলাকে তিনি প্রশ্ন করেন, প্রেমের সীমা কোন খানে?

মহিলা উত্তর দেন, প্রেমের কোন সীমা নেই।

কেন নেই?

যেহেতু প্রেমাস্পদ অসীম

এক আল্লাহ প্রেমী ব্যক্তি নিজেকে আল্লাহর বন্ধু বলে প্রচার করতেন। অসুস্থাবস্থায় হযরত (রঃ) তাঁকে দেখতে গেলেন। কথায় কথায় ঐ ব্যক্তি বললেন, আল্লাহর দেওয়া কষ্টকে যে কষ্ট মনে করে, সে আল্লাহর বন্ধু নয়। হযরত যুনযুন (রঃ) সুযোগ পেয়ে বললেন, নিজেকে যে আল্লাহর বন্ধু বলে প্রচার করে, সে কখনও আল্লাহর বন্ধু হতে পারে না। এ কথায় লোকটির চৈতন্যোদয় হয়। তওবা করে তিনি বললেন, আজ থেকে আর কোনদিন নিজেকে আল্লাহর বন্ধু বলে প্রচার করব না।

একবার হযরত যুনযুন (রঃ) পীড়িত হয়ে পড়লেন। তাঁর সঙ্গে দেখা করতে এসে এক ব্যক্তি বললেন, বন্ধুর দেওয়া অসুখ আরামদায়কই হয়। তিনি বলেন, তুমি যদি তা বুঝতে তাহলে তাঁর কথা অমন অসৌজন্যমূলক ভাবে বলতে পারতে না।

তিনি একবার তাঁর এক বন্ধুকে লেখেন, আল্লাহ আমাদের দুজনকে অজ্ঞতার চাদর দিয়ে ঢেকে পার্থিব বিষয় থেকে অদৃশ্য করে রেখেছেন। আমরা শুধু তাঁর ইচ্ছা অনুযায়ী কাজ করব। আর তিনি আমাদের ওপর খুশী থাকবেন।

একবার বিদেশ ভ্রমণকালে তিনি দেখেন এক অগ্নি-পূজক বরফে ঢাকা মাঠের ওপর শষ্যবীজ বুনছে। কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, সারা মাঠ বরফে ঢাকা। পাখীরা শষ্যদানা খুঁজে পাচ্ছে না। তারা যাতে খাবার পায়, আর তাদের দোয়ার বরকতে আল্লাহ আমার ওপর দয়া বর্ষণ করেন, সেই জন্য এটা করছি। হযরত বললেন, আমি এ ধরণের কাজ পছন্দ করি না। সে বলল, আপনি পছন্দ করুন আর না করুন, এ কাজ আমার জন্য ফলদায়ক।

সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া

হযরত যুনযুন মিসরী (রঃ) – পর্ব ১০ পড়তে এখানে ক্লিক করুন

Written By

More From Author

You May Also Like

মুগীরা ইবন শু’বা (রা)

নাম আবু আবদিল্লাহ মুগীরা, পিতা শু’বা ইবন আবী আমের। আবু আবদিল্লাহ ছাড়াও আবু মুহাম্মাদ ও…

সাপের তওবা

একটি সাপের ঘটনা বর্ণনা করছি। আমার কাছে যারা তালীম গ্রহন করতে আসে প্রথমেই আমি কাউকে…

আবদুল্লাহ ইবন হুজাফাহ আস-সাহমী-(রা)

আবু হুজাফাহ আবদুল্লাহ নাম। পিতার নাম হুজাফাহ। কুরাইশ গোত্রের বনী সাহম শাখার সন্তান। ইসলামী দাওয়াতের…