হযরত জুনায়েদ বাগদাদী (রঃ) – পর্ব ৩
হযরত জুনায়েদ বাগদাদী (রঃ) – পর্ব ২ পড়তে এখানে ক্লিক করুন
হযরত জুনায়েদ (রঃ)-এর নির্জনবাসের বিরোধিতা শুরু হল এবার। লোকেরা খলীফার দরবারে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ জানান। কিন্তু খলীফা বললেন, আপত্তিকর কোন নির্দষ্ট প্রমাণ না পেলে তার প্রতি কোন ব্যবস্থা নেওয়া যায় না। বিরোধিতাকারী বলল, তাঁর কাজে ও কথায় মানুষ পথভ্রষ্ট হচ্ছে। খলীফা তখন গোপনে তাঁকে পরীক্ষা করার কথা ভাবলেন। তাঁর এক রূপসী বাদী ছিল। তিনি হাজার দিরহাম মূল্যে তাঁকে ক্রয় করেন।
খলীফা স্বয়ং তাঁর রূপমুগ্ধ ছিলেন। একরাতে তিনি তাঁকে শিখিয়ে পড়িয়ে হযরত জুনায়েদ (রঃ)-এর কাছে পাঠালেন। সে যেন অভিনয়-ভঙ্গি করে তাঁকে জানায় যে, তার প্রচুর বিত্ত আছে। কিন্তু এখন সে সবের প্রতি বীতস্পৃহ। তিনি অনুগ্রহ করে তাঁকে যেন আশ্রয় দেন। সে হজরতের ভালোবাসার থেকে আল্লাহ্র এবাদাতে বাকী জীবন কাটিয়ে দিতে চায়। এখন তার মন শুধু এখানেই পড়ে থাকতে চায়। খলীফা টোপ হিসেবে রূপসীকে হযরত জুনায়েদ (রঃ)-এর কাছে পাঠিয়ে দিলেন।
যথাসময়ে তাঁর কাছে দাসী তাঁর ঘোমটা খুলল। একবার চোখ তুলতে গিয়ে হযরত জুনায়েদ (রঃ)-এর দৃষ্টিও পড়ল তার ওপর। আর তিনি মাথা নিচু করলেন। রূপসী যথারীতি তার শেখানো বুলি আওড়ে গেল। অভিনয়-ভঙ্গি বা বচন কুশলতার কোন ত্রুটি ঘটল না।
হযরত জুনায়েদ (রঃ) তার কথা নীরবে, নতমস্তকে শুনে গেলেন। তারপর ধীরে ধীরে মাথা তুলে একবার আহ বলে চিৎকার করে উঠলেন। সে চিৎকারে কী যেন ঐর্শী শক্তি নিহিত ছিল। রূপসী তা সহ্য করতে না পেরে অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেল। আর সঙ্গে সঙ্গে সব শেষ। খলিফার হুকুম তামিল করতে গিয়ে একটি তাজা প্রাণ অকালে ঝরে গেল। ফলাফল কী হয় জানার জন্য খলিফা এক ভৃত্যকেও তার পেছনে পাঠান। সে ফিরে এসে খলিফাকে সবকিছু নিবেদন করে। আর অনুতাপে দাউ দাউ করে জ্বলে উঠল খলিফার মন। কাজটা যে ভালো হয়নি, তা উপলদ্ধি করে তিনি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে তৎক্ষণাৎ চলে এলেন হযরত জুনায়েদ (রঃ)-এর কাছে। তাঁর অমাত্যগর্ব অবশ্য পরামর্শ দেন যে, হযরত জুনায়েদের (রঃ) দরবারে না গিয়ে বরং তাকেই দরবারে তলব করা হোক। কিন্তু খলিফা আর দ্বিতীয়বার ভুল না করে তাঁর কাছেই গেলেন।
বিনীত কণ্ঠে বললেন, হযরত, আপনি এমন সোনার প্রতিমাকে পুড়িয়ে দিলেন কেন? আপনার প্রাণে কি দয়ামায়া নেই?
হযরত জুনায়েদ (রঃ) বললেন, আপনি জনগনের রক্ষক। অথচ আপনি চাইলেন একটি মানুষের দীর্ঘ চল্লিশ বছরের বিনিদ্র, পরিশ্রম- ক্লিষ্ট সুকঠিন সাধনা সামান্য একটি নারী বরবাদ করে দিক। এটা কী করে সম্ভব? যাই হোক, আশা করি ভবিষ্যতে আর কখনও এ ধরনের বিভ্রান্তির শিকার হবেন না।
সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া