হযরত জুনায়েদ বাগদাদী (রঃ) – পর্ব ১
একাধারে আলেম ও দরবেশ, ইসলামী জ্ঞানের প্রকাশ্য শাখার বিদগ্ধ পণ্ডিত, মুফতী, আবার জ্ঞানের গূঢ় শাখার অগ্রগামী পুরুষ হলেন হযরত জুনায়েদ বাগদাদী (রঃ)। বাগদাদের অধিবাসী বলেই বাগদাদী উপাধি। প্রখ্যাত তাপস হযরত সাররী সাকতী (রঃ)-এর ভাগিনা তিনি। তাঁর সম্বন্ধে বড় করে বলার কথা এই যে, সমকালের বিভিন্ন পন্থী সাধক এক বাক্যে তাঁকে নিজেদের ইমাম বলে স্বীকার করে নিয়েছেন। তাঁকে শায়েখদের কেন্দ্রও বলা হত।
আসলে তিনি ছিলেন শরীয়ত, তরীকত ও হাকীকত সমুদ্রের এক অনুসন্ধানী বিজ্ঞানী জাতির মুখপাত্র, জাতির গৌরব। এক কথায় তিনি ছিলেন যুগ-প্রবর্তক। তাছাড়া তিনি ছিলেন এক অসাধারণ লেখক। তাঁর রচিত ধর্মবিষয়ক গ্রন্থ পৃথিবীর এক মহামূল্যবান সম্পদ।
অনেকে বলেন, মারেফাতের এত যে বিস্তৃতি ঘটেছে, তাঁর মূলে তিনিই। কিন্তু দুঃখের কথা, এক শ্রেণীর লোক তাঁকে কাফের বলতে দ্বিধা করেননি। কিন্তু নিন্দুকদের কটুক্তি অসার প্রতিপন্ন করে তিনি সমকালের যুগ-পুরুষ হিসেবেই চিহ্নিত হয়ে আছেন।
একবার হযরত সাররী (রঃ)-কে প্রশ্ন করা হয়, মুরীদের মর্যাদা কি মুর্শিদের চেয়ে বেশী হতে পারে? তিনি বলেন, কেন পারে না? এ ব্যাপারে তোমরা আমার এবং আমার ভাগিনার অবস্থাটা দেখতে পার। সে আমার শিষ্য বটে, কিন্তু আল্লাহ্র রহমতে মর্যাদার দিক দিয়ে সে আমার অপেক্ষা উন্নত।
তাঁর সম্বন্ধে হযরত সোহায়ের তসতরী (রঃ) বলেন, যদিও হযরত জুনায়েদ (রঃ)-এর মর্যাদা অন্যান্য তাপসের চেয়ে উন্নত এবং যদিও তিনি হযরত আদম (আঃ)-এর মতো উপাসনানিষ্ঠ, তবুও তরীকতপন্থার কঠোরতা সহ্য করতে তাঁর কষ্ট হত। হযরত সোহায়েল (রঃ)-এর এ উক্তি খুবই রহস্যময়-যার মর্ম উদ্ঘাটন করার ক্ষমতা আমাদের নেই।
তিনি যে একদিন বড় হবেন, তা বাল্যকালেই তাঁর চরিত্র প্রকাশ পায়। তখন থেকেই তিনি ছিলেন তীক্ষ্ণ বুদ্ধির অধিকারী, খুবই সচেতন ও ধর্মভীরু। একদিন মাদ্রাসা থেকে তিনি বাড়ী ফিরছেন, সেখলেন তাঁর পিতা এক জায়গায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কাঁদছেন। এর কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, হযরত সাররী সাকতী (রঃ)-কে [হযরত জুনায়েদ (রঃ)-এর মামা] কিছু যাকাতের মাল পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি তা গ্রহণ না করে ফেরত দিয়েছেন। হয়তো তিনি তাঁর মাল হালাল বলে মনে করেননি। অথচ এগুলো সম্পূর্ণ বৈধ।
শিশু জুনায়েদ (রঃ) পিতার কাছ থেকে যাকাতের অর্থ নিয়ে সোজা চলে গেলেন মামার কাছে। মামার বাড়ির দরজা বন্ধ ছিল। তিনি দরজায় করাঘাত করলেন। ভেতর থেকে শব্দ এল, কে? জুনায়েদ (রঃ) তাঁর পরিচয় দিলেন। জানালেন, যাকাতের মাল নিয়ে এসেছেন। মামা বললেন, ওগুলো তিনি রাখবেন না। জুনায়েদ (রঃ) বললেন, মামা! কসম আল্লাহ্র, যিনি আপনার প্রতি অনুগ্রহ ও আব্বার প্রতি ন্যায়বিচার করেছেন।
সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া