হযরত ইবনে আতা (রঃ) – শেষ পর্ব

হযরত ইবনে আতা (রঃ) – পর্ব ২ পড়তে এখানে ক্লিক করুন

একবার তিনি তাঁর শিষ্যদের প্রশ্ন করেন, কোন বস্তুর দ্বার মানুষের মর্যাদা বৃদ্ধি পায়? কেউ সারা বছর রোজা রাখার কথা বললেন, কেউ সব সময় নফল নামাজ পড়ার কথা বললেন, কেউ বিরামহীন সাধনার কথা। আবার কেউ বেশী বেশী দান করার কথাও বললেন।

সকলের সব কথা মন দিয়ে শুনলেন হযরত আতা (রঃ)। তারপর বললেন, তোমরা যে যা বললে, তা মানুষের মর্যাদা বৃদ্ধি করে নিঃসন্দেহে। কিন্তু জেনে রেখো, সচ্চরিত্রেই মানুষের মর্যাদা সর্বাধিক বৃদ্ধি করে।

কিছু লোক ইবনে আতা (রঃ)-কে কাফের বলতেন। এমনকি তারা খলীফার কাছে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগও জানায়। খলীফার মন্ত্রী ব্যক্তিগতভাবে ইবনে আতার (রঃ) প্রতি বিরূপ ধারণা পোষণ করতেন। সুতরাং তিনি একটি সুযোগ পেয়ে গেলেন। শাহী ফরমানের মাধ্যমে তাঁকে দরবারে এনে খুবই রুঢ় আচরণ করলেন। আর মাত্রাতিরিক্ত কটু কথাও বললেন। তপ্ত হয়ে হযরত আতা

(রঃ) ও মন্ত্রীকে কিছু কড়া কথা শোনালেন। রাগে ক্ষিপ্ত হয়ে মন্ত্রী হযরত আতা (রঃ)-কে এমনভাবে জুতোপেটা করলেন যে, তিনি মেঝেতে অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেলেন। কিছুক্ষণ পরে জ্ঞান ফিরে এলেন তিনি অভিশাপ দিলেন যে, আল্লাহ যেন মন্ত্রীর হাত-পা কাটিয়ে দেন। আল্লাহর দরবারে তাঁর অভিশাপ কবুল হয়ে যায়।

ইবনে আতা (রঃ)-এর মৃত্যুর কিছুদিন পর মন্ত্রীর বিরুদ্ধে এক অভিযোগ ওঠে রাজদরবারে। তদন্তে তিনি দোষী সাবস্ত হন। আর তাঁর হাত-পা কেটে ফেল হয়। তাঁর অভিশাপের বিরুদ্ধে কিছু সমালোচনা হয়। বলা হয়, তাঁর মতো প্রথম শ্রেণীর একজন দরবেশের পক্ষে সেটি সঙ্গত নয়। কিন্তু অভিশাপের সমর্থনে বক্তব্য আসে। মন্ত্রী কেবল তাঁর ওপরই অত্যাচার করেননি, বহু সৎ পুণ্যবান মুসলমানও তার দ্বারা নির্যাতিত হয়। আসলে সে ছিলেন এক হৃদয়হীন মানুষ। সুতরাং তার প্রতি অভিশাপ বর্ষণ করে হযরত আতা (রঃ) কোন অন্যায় করেননি। আর খলীফা অন্ধের মতো তার কাজকর্ম সমর্থন করে এসেছেন। অতএব, ইবনে আতা (রঃ)-এর মাধ্যমে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে আল্লাহর স্বয়ং তার বিচার করলেন।

আবার কেউ কেউ বলেন, আসলে গণকের মাধ্যমে হযরত আতা (রঃ) মন্ত্রীর পরিণতির পূর্বাভাস পান। তাই তিনি অমন বদ দোয়া করেন। তিনি নিজের ইচ্ছা করে কিছু করেননি। যা হয়েছে, সবই আল্লাহর ইচ্ছায়।

তাযকিরাতুল আউলিয়া গ্রন্থের গ্রন্থকার হযরত শেখ ফরীদউদ্দীন আত্তার (রঃ) বলেন, হযরত আ (রঃ) ভালো বা মন্দ কোনটা সমর্থন করেননি। মন্ত্রী শূলীতে নিহত হয়ে পৃথিবীর দুঃখ-জ্বালা থেকে মুক্তিলাভ করে। এদিক দিয়ে হযরত আতা (রঃ)-এর অভিশাপ তার জন্য আশির্বাদ হয়ে ওঠে। কেননা, ইহকালের শাস্তি পরকালের তুলনায় কিছুই নয়। অতএব, পার্থিব শান্তি ভোগ করে পরকালের কঠিন শাস্তি থেকে মুক্তি লাভ করা যায়, তো বলতে হয় যে, হযরত আতা (রঃ)-এর অভিশাপ তার জন্য কল্যাণকর হয়েছে।

সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া

হযরত ইবনে আতা (রঃ) – পর্ব ১ পড়তে এখানে ক্লিক করুন

হযরত ইবনে আতা (রঃ) – পর্ব ২

হযরত খালিদ ইবনে ওলীদ (রাঃ)এর ইসলাম গ্রহণের ঘটনা – পর্ব ১