বিশ্বাসঘাতক নেকড়ে

একদা এক গ্রামে এক চাষী ছিল। তার নাম ছিল পাঁচু। পাঁচু ছিল বড়ই দয়ালু। কারো দুঃখ সে সহ্য করতে পারত না। কেউ বিপদে পড়লে অমনি সে বাঁচাতে ছুটে যেত।

একদিন হয়েছে কি, পাঁচু যখন ক্ষেতে বড় বস্তা নিয়ে আলু তুলতে যাচ্ছিল, হঠাৎ দেখতে পেল পাশের বন থেকে একটি নেকড়ে ছুটে ছুটে তার পায়ে এসে পড়ল। অনেক কাকুতি-মিনতি করে নেকড়ে বলল, “আমাকে বাঁচাও, পাঁচুভাই, তিনটি শিকারী আমার পিছু নিয়েছে।”

দয়ালু পাঁচু বলল, “তাই তো, কিন্তু তোমাকে বাঁচাই কি করে, বলো তো।”

নেকড়ে বলল, “তোমার ঐ বস্তার মধ্যে আমাকে পুরে ওর মুখ বন্ধ করে দাও। শিকারীরা এলে ভাববে বস্তায় আলু আছে। তারপর শিকারীরা চলে গেলে মুখ খুলে দিও।”

দয়ালু পাঁচু নেকড়ের কথামতো তাকে বস্তায় ভরে মুখ বন্ধ করে বসে রইল। তারপর শিকারীরা যখন নেকড়ের খোঁজ করল, পাঁচু বলল, “সে কোন নেকড়ে দেখেনি।”

শিকারীরা বস্তার দিকে তাকাতে গিয়ে পাঁচু বলল, “বস্তায় আলু আছে।”
শিকারীরা তার কথা শুনে চলে গেল। পাঁচু কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে যখন নিরাপদ বুঝল, তখন বস্তার মুখ খুলে নেকড়েকে ছেড়ে দিল।

ছাড়া পেয়ে নেকড়ে কৃতজ্ঞতায় গদগদ হয়ে বলল, “তুমি মহান লোক। এবার তুমি আমাকে আর একটি বিপদ থেকে বাঁচাও।”

পাঁচু বলল, “বলো, কি বিপদ? নিশ্চয়ই আমি বাঁচানোর চেষ্টা করব।”

নেকড়ে তখন বলল, “আমার বড় ক্ষিদে পেয়েছে। আমি তোমাকে খেতে চাই। আমাকে সাহায্য করে তুমি আমার প্রাণ বাঁচালে, তাই এখন আমাকে খেতে হবে।”

পাঁচু বলল, “তা কি করে হবে? আমাকে খেলে তো আমি মরে যাবো।”

নেকড়ে তার কথা শুনবে কেন? পাঁচুর কোনো কথায় কান না দিয়ে সে তার ওপর চিড়াও হলো।

এমন সময় হাতের লাঠি হাতে আরেকজন জোয়ান চাষী সেখানে এসে হাজির হলো। পাঁচু তাকে দেখে বলল, “আমাকে বাঁচাও, নেকড়েটা আমাকে খেতে চাইছে, অথচ আমি ওকে বিপদ থেকে বাঁচিয়েছি।”

জোয়ান চাষী নেকড়েকে ধমক দিয়ে বলল, “উপকারীকে খেতে চাও কেন?”

নেকড়েটা খুবই দুষ্ট ছিল। সে কৌশল করে বলল, “একথা ঠিক যে পাঁচু আমাকে বস্তায় ভরে শিকারীদের হাত থেকে বাঁচিয়েছে, কিন্তু বস্তায় ভরার সময় সে আমাকে খুব কষ্ট দিয়েছে। তাছাড়া বস্তার মুখ এত শক্ত করে বেঁধেছিল যে আমার দম বন্ধ হয়ে আসছিল। তাই আমি পাঁচুকে খাবো। কেন খাবো না, তুমিই বিচার কর।”

জোয়ান চাষী দয়ালু পাঁচুকে চেনে। সে বুঝল নেকড়েটা চালাকি করে পাঁচুকে খেতে চাইছে। তাই সে বুদ্ধি করে নেকড়েকে বলল, “কিভাবে তোমাকে বস্তায় কষ্ট দিয়ে ভরেছিল এবং মুখটি কত শক্ত করে বেঁধেছিল, সেটা আর একবার করে দেখাও। সেটা দেখেই আমি বলতে পারব, পাঁচুকে তোমার খাওয়া উচিত কি না।”

নেকড়ে ভাবল, “এ আর এমন কি কঠিন কাজ!” সে আবার বস্তায় ঢোকার জন্য প্রস্তুত হলো। পাঁচু তাকে আগের মতোই ঠেলে-ঠুলে বস্তায় ঢুকিয়ে দিল। তারপর আগের মতোই বস্তার মুখ শক্ত করে বেঁধে দিল।

এবার জোয়ান চাষী হাতের লাঠি দিয়ে বস্তায় ভরা নেকড়েকে উত্তমভাবে পেটাতে শুরু করল।

দয়ালু পাঁচু বলল, “আরে করো কি করো কি? নেকড়েটা যে মরে যাবে!”

জোয়ান চাষী বলল, “উপকারীকে যে খেতে চায়, সেই বিশ্বাসঘাতককে কখনো বাঁচিয়ে রাখতে নেই।”

উপদেশঃ উপকার করার পর যারা অপকার করে, তাদের উচিত শিক্ষা দেওয়া।

"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভাকাংখী এবং সম্মানিত আবেদনকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

সম্পর্কিত পোস্ট

দুঃখিত!