এক শেয়াল আর এক কুমিরের খুবই বন্ধুত্ব ছিল। শেয়াল ছিল খুবই চালাক আর কুমির ছিল বোকার হদ্দ। এই নিয়ে নানা লোকে নানা কথা বলত। কুমিরের মনে রাগ হল, সে ভাবল একবার আমি শেয়ালকে ঠকিয়ে দেখাবো, সবাইকে দেখাবো আমি কিছু কম চালাক নই।
কুমির চালাকি করার জন্য একদিন শেয়ালকে বলল,
“বন্ধু শেয়াল, চল ভাই আমরা চাষ করি।”
শেয়াল রাজি হয়ে বলল,
“চল, ঠিক আছে, কিন্তু ভাই আমরা সমান সমান ভাগ করে নেব।”
কুমির বলল,
“আমি উপরেরটা নেব, আর তুই নিচেরটা নিবি।”
শেয়াল বলল,
“তা কি করে হবে? যা হবে সমান সমান, উপরের-নিচ সমান সমান।”
কুমির বলল,
“না, আমি উপরেরটা নেব, তুই নিচেরটা নিবি। তুই চিন্তা করিস না, তোর লাভই বেশি হবে।”
শেয়াল কুমিরের বুদ্ধি বুঝতে পারল। “সে বলল, তাই হবে বন্ধু,” মনে মনে বলল, “তাড়াহুড়া নেই, তোর মজা দেখাচ্ছি।”
পরের দিন শেয়াল কুমিরকে এসে বলল,
“ভাই কুমির, চল আমরা পেঁয়াজ চাষ করি। পেঁয়াজের দাম এখন খুব বেশি।”
কুমিরের চাষ সম্পর্কে কোনো ধারনা ছিল না, সে শেয়ালের কথায় রাজি হয়ে গেল। তারা পেঁয়াজ চাষ করলো এবং শর্ত মতো কুমির পেঁয়াজের উপরের অংশ, মানে পাতা, নিয়ে মহা আনন্দে বাড়ি চলে গেল।
বাড়িতে কুমিরের বউ পেঁয়াজের পাতা দেখে রেগে কাঁই। সে কুমিরকে আচ্ছা করে ঝাঁটা-পেটা করল।
কুমিরের মনে মনে খুব রাগ হল, সে ভাবলো শেয়াল আমাকে চালাকি করে হারিয়েছে। এবার আমি তাকে হারাবো।
কুমির আবার শেয়ালের কাছে গেল চাষ করার জন্য। শেয়াল মনে মনে দুঃখ পেলো, বন্ধু ঠকানো ঠিক হয়নি। এবার যেন ওর লাভ হয়।
শেয়াল বলল,
“চল বন্ধু, এবার আমরা ধান চাষ করি। এবারও আমি নিচেরটা নেব।”
কুমির ভাবল, শেয়াল এবারও নিশ্চয় চালাকি করছে, সে বলল,
“না বন্ধু, এবার আমি নিচেরটা নেব আর তুমি উপরেরটা নেবে।”
শেয়াল বলল,
“উপরেরটা নিলে তোমার লাভ হবে, বন্ধু।”
কুমির মনে মনে ভাবল, “সেটা আমি আগের বারে ভালোভাবে টের পেয়েছি। মুখে বলল— তাইতো, তোমাকে নিতে বলছি বন্ধু, আগের বারে আমি অনেক লাভ করেছি, এবার তুমি একটু লাভ কর।”
শেয়াল কুমিরের বদমায়েসি বুঝতে পারল, তার মনে মনে রাগ হল। সে বলল,
“ঠিক আছে বন্ধু, তাই হোক।”
এরাও যা হবার তাই হল—শেয়াল সব উপরেরটা, মানে ফসল, নিয়ে পালাল আর কুমিরকে ধানের শিকড় নিয়ে বউয়ের হাতে ঝাঁটার মার খেল।
আবার একদিন কুমির শেয়ালের কাছে গেল চাষের জন্য। এবার শেয়াল ভাবল, “এই কুমির আমার বন্ধু হয়ে আমাকে ঠকাবার চেষ্টা করছে। এর সাথে বন্ধুত্ব রাখা ঠিক হবে না।”
কুমির শেয়ালকে চাষের কথা বললে শেয়াল বলল,
“বন্ধু, এবার তুমি উপর-নিচ দুটোই নাও, বাকি যা থাকবে আমি নেব।”
কুমির খুশি মনে চলে গেল। পরের দিন কুমির আর শেয়াল আখ চাষ করতে শুরু করল। এবার কুমির উপর আর নিচ নিল আর শেয়াল মাঝের রসালো অংশ নিল। এবারও কুমির বউয়ের ঝাঁটার মার খেল।
এবার কুমিরের আর ধৈর্য থাকলো না। সে এসে শেয়ালকে বলল,
“তুই আমাকে ঠকিয়েছিস।”
শেয়াল মনে মনে বলল, “এর সাথে আর বন্ধুত্ব রাখা উচিৎ নয়।” মুখে বলল,
“বেশ করেছি।”
আর বলেই কুমিরের মুখের সামনে ঘরের দরজা বন্ধ করে দিল।
উপদেশঃ অসম বন্ধুত্ব স্থায়ী হয় না।
"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভাকাংখী এবং সম্মানিত আবেদনকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।