হযরত ইবনে আতা (রঃ) – পর্ব ১

হযরত ইবনে আতা (রঃ) মহাতপস্বী হযরত জুনায়েদ বাগদাদী (রঃ)-এর সুযোগ্য শিষ্য এবং তাঁর অন্যতম প্রতিনিধি ছিলেন। ফেকাহশাস্ত্রে তিনি তৎকালীন মুফতী ছিলেন। কুরআনের ভাষ্যকার হিসেবে তাঁর খ্যাতি ছিল জগদ্ব্যাপী। আর মারেফাত তত্ত্বে ও শরীয়তে তিনি ছিলেন উচ্চ মর্যাদার অধিকারী। প্রসিদ্ধ সাধক হযরত আবু সাঈদ খাযযার (রঃ) তাঁর ভূয়সী প্রশংসা করতেন। হযরত খাযযার (রঃ)-এর মতে, সাধকত্বে তিনিই ছিলেন শ্রেষ্ঠ সিদ্ধপুরুষ।

আপনি এতবেশী কান্নাকাটি করেন কেন? তাঁকে প্রশ্ন করা হয়। তিনি বলেন, ছেলেবেলায় তিনি এক লোকের একটি পয়সা আটকে রাখেন। অবশ্য তার বিনিময়-মূল্য হিসেবে তিনি লোকটিকে এক হাজার টাকা দিয়ে খুশী করেন। কিন্তু তবুও মনে কোনদিন শান্তি ও স্বস্তি পাননি। কেবল মনে হয়, হয়ত এর ফলে তাঁকে কঠিন শাস্তি পেতে হবে। আর এ ভয়েই তিনি অত বেশী কান্নাকাটি করেন।

আপনি প্রতিদিন কী পরিমাণ কুরআন তিলাওয়াত করেন? তিনি বলেন, আজ থেকে চৌদ্দ বছর আগে তিনি প্রতিদিন একবার করে কুরআন শরীফ খতম করতেন। তারপর থেকে চৌদ্দ বছর ধরে কুরআন পাঠ করে তিনি কেবল সুরা আনফাল এ পৌঁছান।

শোনা যায়, হযরত আতার (রঃ)-এর সুদর্শন পুত্র ছিল। একবার তিনি পুত্রদের সাথে সফরে যান। আর ডাকাত দলের পাল্লায় পড়েন। মালপত্র যা ছিল তারা তো সব নিলই, তাছাড়া চোখ বেঁধে বেঁধে ছেলেদের খুন করতে লাগল। হযরত আতা (রঃ)-এর চোখের সামনেই এই নির্মম নৃশংস ঘটনা ঘটছে। আর আকাশের দিকে চোখ তুলে তাকিয়ে তিনি মিটিমিটি হাসছেন।

একে একে নয়জন শাহাদাত বরণ করেন। বাকী শুধু একজন। ছেলেটি বাপকে বলল, আপনি কি নিষ্ঠুর! আপনার চোখের সামনেই ছেলেরা খুন হচ্ছে, আর আপনি কিছু না বলে ওপরের দিকে চেয়ে শুধু হাসছেন। এমন বাপের কথা কখনও শুনিনি। বুঝলাম না, আপনি কেন এমন কেন এমন নির্মম হলেন। ছেলের কথা শুনে হযরত আতা (রঃ) বললেন, যিনি এটা করছেন, তাঁকে যে কিছুই বলা চলে না। তিনি এটা জানেন, দেখেন এবং তাঁর ইচ্ছাক্রমেই এটি ঘটছে। তিনিই মূল নায়ক। আবার যদি ইচ্ছা করেন, তবে এক মুহূর্তে সবাইকে বাঁচিয়ে তুলতে পারেন। তাঁর ইচ্ছার বিরুদ্ধে কিছু হয় না। কেউ কিছু করতেও পারে না।

তাঁর কথাগুলি ডাকাতদের মনে ভাবান্তর সৃষ্টি করে। তারা আর শেষ পুত্রকে হত্যা করল না। তাকে ছেড়ে দিয়ে হযরত আতা (রঃ)-কে বলল, হে মহান পুরুষ! এ ধরণের কথা যদি আপনি কিছুক্ষণ আগে বলতেন, তা হলে হয়ত আমরা এ কাজ করতাম না।

সূফী সাহিত্য বা বিষয়ে যেসব নিয়ে আলোচনা হয়, তার মধ্যে এমন কিছু শব্দ থাকে, যার মর্মোদ্ধার করা সাধারণ মানুষের পক্ষে কোনক্রমেই সম্ভব নয়। একবার এক ব্যক্তি এসব কথা উল্লেখ করে হযরত আতা (রঃ)-এর প্রতিক্রিয়া জানতে চান। তিনি বলেন, সূফীগণ এসব নতুন শব্দ নিজেরাই আবিষ্কার করেছেন উদ্দেশ্যমূলকভাবে। উদ্দেশ্য হল, তাঁরা ছাড়া আর কেউ যেন শব্দগুলির অর্থ বুঝতে না পারে। তাছাড়া, ফকিরী তাঁদের নিকট খুবই প্রিয়। তাই তাতে সাধারণ প্রচলিত শব্দ ও কালাম ব্যবহার করে তাকে সাধারণ বস্তুতে পরিণত করতে চান না।

সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া

হযরত ইবনে আতা (রঃ) – পর্ব ২ পড়তে এখানে ক্লিক করুন

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।