সুরাহ জীন

আমরা তখন খুলনা তে থাকতাম , আমি তখন ক্লাস ৮ এ পড়ি ! ফামিল্য ইসলামিক মাইন্ড এর হওয়ার কারনে আমাকে ওই টাইম এ হুজুর কুরআন শরীফ পড়াতে আসতো , কুরান শরীফ খতম দেয়ার জন্য। একদিন কুরআন পড়তে গিয়ে “সুরাহ জীন ” দেখতে পেলাম ! আমি হুজুর কে জিজ্ঞাস করলাম এই সুরাহ তার নাম “জীন” কেন? হুজুর আমাকে বলল যে, এই সুরাহ তে জীন যে পৃথিবীতে আছে এবং জীন এর পূর্ন বিবরণ এই সুরাহ তে দেয়া আছে। আমি আমার লাইফ এ কখনই ভূত তুত বিশ্বাস করতাম না। কিন্ত কুরআন এ যেহেতু জীন এর কথা বলছে তো বিশ্বাস না করে থাকা যায়না।কিন্ত এর পরে হুজুর যা বলল, সেটা আসলে আমাকে সেইদিন না বললেই ভাল ছিল । হুজুর আমক বলল এই সুরাহ”র একটা জিনিশ আছে … সেটা হচ্ছে যে …যে এই সুরাহ টা ৪০ দিন পড়বে একা, তার থেকে ৪০ দিন পর জীন দেখা দিবে ।আমি ছোটোবেলা থেকেই অতিরিক্ত সাহসী এবং ডানপিটে স্বভাব এর ছেলে ছিলাম । ক্লাসে যেমন ছিলাম পড়ালেখাতে আর ঠিক তেমনি ছিলাম শয়তানিতেও একনাম্বার। তাই আমি মনে মনে ঠিক করলাম সেইদিন থেকেই সুরাহ জীন পড়া শুরু করব। কিন্তু সেটা যে আমার কত বড় ভুল সিদ্ধান্ত ছিল তা পরে টের পেয়েছি।
প্রতিদিন রাতে এশার নামাজ পড়ে যখন বাসায় আসতাম, ঠিক তখনি আমার ঘরের লাইট নিভিয়ে চাঁদের আলোতে আমি সুরাহ জীন পড়তাম। এভাবে করে ঠিক ঊনচল্লিশ দিন চলে গেলো। সব কিছুই ঠিক ছিল। কিন্তু যখনি আমি সুরাহ জীন পড়তাম, তখনি আমার শরীরের লোম সব কেন জানি খাড়া হয়ে যেত। সে সময় মনে হতো কেউ যেন আমায় পেছন থেকে দেখছে। চল্লিশ দিনের রাতের ঘটনা। এশার নামাজ পড়ে বাসায় আসলাম। ঠিক ওই সময় আমি যখন কুরআন শরীফে সুরাহ জীন পড়া শুরু করলাম, সেই সুরাহ শেষ হতে বাকি ছিল মাত্র আর এক পেইজ। ঠিক ওই সময়ে ইলেক্ট্রিসিটি চলে গেলো। খুব বড় একটা শব্দ শুনলাম। ধারণা করলাম ট্রান্সফরমার ব্রাস্ট হয়েছে সম্ভবত। আমার ধ্যান-ধারনা তখন সব ওই সুরাহতে। আর কোনো দিকে মন নেই। পড়ছি; আর দু’ লাইন বাকী। চাঁদের আলোয় জায় নামাজে বসে পড়ছি। যেই সুরাহটা পড়ে শেষ করলাম, আমার গায়ে জানালা দিয়ে আসা একটা মৃদু হাওয়া অনুভব করলাম। যেটাতে আমার শরীরের সব লোম খাড়া হয়ে গিয়েছিলো। এবং হঠাত আ মি কেঁপে উঠলাম কেন যেন। হঠাত করে দেখতে পেলাম ঘরে আমার ঠিক সামনে চাঁদের আলো থেকে একটু একটু করে আলো দেয়ালের দিকে সরে আসছে; সেটা আস্তে আস্তে মানুষের একটা রূপ নিচ্ছিল। আসলে মানুষের আকারে বললে ভুল হবে, কেননা সেটার আকৃতি ছিল নয় ফিটের মতো। হঠাত করে শুনলাম কে যেন খুব ভারী একটা গলায় বলে উঠল “আমাকে কেন ডেকেছিস? বল, তুই কী কারনে আমাকে ডাকলি?” আমি এটা দেখার এবং শোনার পর উত্তর দেবার জন্য মুখ খুললাম, কিন্তু আমার মুখ দিয়ে কিছুই বের হচ্ছিলো না। কোন একটা শক্তি যেন আমার গলা টিপে ধরেছিল। আমার মুখ দিয়ে কোনও কথাই বে হচ্ছিলো না। অনেক চেষ্টা করার পর বলে সক্ষম হলাম, “আল্লাহ হু লা ইলাহা হওাল গায়্যাম, লা তাকুজু হসিনা তুন অয়ালা নউন, লাহু মাফিসামাওাতি ওয়ায়ামা ফিল আরদে মানজাল লাজি ওয়াস্ফাও ইন্দাহু ইলা বেইজনি, ইয়ালামুনা বেয়না এহদি হিম ওয়ামা কালফি হুম ওয়ালা ইউহিতুনা বি সেই ইন মিনিল্মি হি ইলা বেমাশা, ওয়াসা কুরসি ইউহুস সামাওয়াতি ওয়াল আরদে ওয়ালা ইউদু হু হিফজু হুমা ওয়া হুয়াল আলিউল আজিম”। “আয়াত-আল-কুরসি” সুরাহ পড়ার পর হঠাত করে খেয়াল করলাম সেই নয় ফিট লম্বা ছায়াটা আমাকে বলছে যে, “তুই এটা কী করলি? আমি ভেবেছিলাম তুই কিছুই বলতে পারবি না আর আমি তোর ক্ষতি করে দিতাম, আমাকে ডিস্টার্ব করে ডাকার জন্য। এই সুরাহ পড়ার প পৃথিবীতে কোনও জীনের খমতা নেই কারো খি করার। আল্লহুর প্রশংসাতে আমার মনটা তখন ভোরে উঠলো। মনে হল আল্লাহ মহান। জীবনে কোনও একটা ভাল কাজ করেছি বলে আজ বেঁচে গেলাম। সেটা আমাকে বলল, “এটা কোনও ছেলে খেলা নয়। সবার সাধ্যের মধ্যে নয় এটা। তুই আল্লাহর পবিত্র কালামের জন্য আজ বেঁচে গেলি। কিন্তু ভবিষ্যতে সেটা নাও হতে পারে। যাই হোক এখন বল তুই আমাকে ডেকেছিস কেন? আমার নিজের অনেক জানতে ইচ্ছে করছে”। আমি বললাম “ইয়াল্লাহ আমাকে মাফ করো। আমি জীন দেখিনি জীবনে। তাই দেখতে চাচ্ছিলাম। কিন্তু এটা যে সত্যি হবে তা কখনই কল্পনা করতে পারিনি। আমি যদি আপনাকে কিছু জিজ্ঞেস করি তাহলে কি আপনি তার উত্তর দিতে পারবেন?”
তখন আমি যা জিজ্ঞেস করেছিলাম আর যে উত্তর পেয়েছি তা এখনও পর্যন্ত একশ ভাগ সত্যি হয়েছে এবং এখনও পর্যন্ত হচ্ছে। তারপ সে বলল “আর কিছু জানতে চাস?” আমি বললাম “অনেক শুকরিয়া”। আমাকে সালাম দিয়ে সে হাওয়ায় মিলিয়ে গেলো। কিন্তু ওই ঘটনার পর অনেক দিন আমার রাতে ঘুমই আসত না। আম্মু বা আব্বুকে ছাড়া আমি ঘুমাতেই পারতাম না। রাতে ভয়ানক সব স্বপ্ন দেখতাম। আমার জীবনে আমি অনেক প্যারানরমাল ঘটনা দেখেছি। কি্তু এর চেয়ে বড় আর কোনও কিছু আমি দেখিনি।
বিঃ দ্রঃ প্রিয় পাঠকবৃন্দ, আপানাদের এই ঘটনাটা শোনার পর ভাল লাগলে আপনাদের মতামত জানাতে ভুল্বেন না কিন্তু। আপনাদের কাছে আমার বিশেষ অনুরোধ, আপনারা প্লিজ আমার মতন ট্রাই করতে যাবেন না। কারণ এটা সবার দ্বারা সম্ভব নয়।

"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভানুধ্যায়ী এবং সম্মানিত অবদানকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

দুঃখিত!