হযরত আবুল কাশেম নসরবাদী (রঃ) – পর্ব ২
হযরত আবুল কাশেম নসরবাদী (রঃ) – পর্ব ১ পড়তে এখানে ক্লিক করুন
একবার কাবা ঘরে কয়েকজন লোক পার্থিব বিষয় নিয়ে আলাপ-আলোচনায় রত। তিনি কাবার দরজায় বেশ কিছু কাঠ এনে জড়ো করলেন। কারণ জিজ্ঞেস করায় বললেন, আজ আমি কাবা ঘরে আগুন লাগিয়ে দেব। তা হলে লোকেরা আপনা হতেই আল্লাহর আলোচনা শুরু করবে।
একবার তাঁর দরবারে অভিযোগ করা হল, আলী নামে একটি ছেলে দিনের বেলায় তাঁর দরবারে হাজির থাকে, আর রাতের বেলায় শরাব পান করে। তিনি কোন মন্তব্য করলেন না। একদিন আলী পানোন্মত্ত অবস্থায় অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে পথের ধুলায়। আর ঘটনাক্রমে হযরত যাচ্ছেন ঐ পথ ধরে। অভিযোগ সত্য না মিথ্যা, তা প্রতক্ষ্য করার জন্য অভিযোগকারীদের একজন তাঁর দৃষ্টি আকর্ষণ করলেন। হযরত বললেন, তোমরা একে কাঁধে করে তোমাদের নিয়ে যাও। তাই হল। পরে আলী একদিন তাঁর দরবারে এসে তওবা করে ক্ষমা প্রার্থনা করল।
প্রখ্যাত সংসারবিরাগী সাধক হযরত শায়খ ইসহাক (রঃ) প্রায় মৃত্যুর কথা বলতেন। হযরত আবুল কাশেম নসরবাদী (রঃ) একদিন তাঁকে বললেন, মাঝে মাঝে একটু আল্লাহ প্রেমের কথা বললে ভাল হয় না? কিন্তু হযরত ইসহাক (রঃ) মূলত মৃত্যুর কথাই বলতেন। পরে হযরত আবুল কাশেম (রঃ) যখন মৃত্যুর কবলেও তখন নিশাপুরের এক লোক তাঁর কাছে এলে তিনি বললেন, তুমি নিশাপুরে ফিরে গিয়ে হযরত ইসহাক (রঃ)-কে বলো, হযরত আবুল কাশেম (রঃ) বলেছেন, মৃত্যু সম্বন্ধে আপনি যা বলতেন, তা সব সত্য এবং মৃত্যু-যন্ত্রণা সত্যই বড়ই কঠিন।
হযরত আবুল কাশেম (রঃ) আল্লাহর ওপর নির্ভর করে বিনা পুঁজিতে সত্তর বার হজ্জ সমাধা করেন। একবার হজ্জ যাত্রায় তিনি একটি শীর্ণ কুকুর দেখতে পান। তখন তাঁর কাছে কোন খাদ্যবস্তু ছিল না। তখন তিনি চিৎকার করে বললেন, চল্লিশ হজ্জের বিনিময়ে কেউ কি এক টুকরো রুটি দিতে পার? তাঁর কথা শুনে এক লোক এক টুকরো রুটি দিল। আর তিনি তা কুকুরকে খাওয়ালেন। এমন সময় কে যেন তাঁকে ধাক্কা দিয়ে বললেন, চল্লিশ হজ্জের পুণ্য একটি রুটির বদলে দান করে মনে করছ তুমি খুব বড় একটি কাজ করলে, না আর তোমার পিতা হযরত আদম (আঃ) দুটি গমের বদলে আটটি জান্নাত বিক্রি করেছিলেন। আর তোমার এ রুটিতে হাজার গমেরও বেশী রয়েছে। একথা শুনে হযরত আবুল কাশেম (রঃ) খুবই লজ্জিত হলেন। বসে রইলেন মাথা নিচু করে।
একবার তিনি রয়েছেন কাবার অদূরবর্তী জাবালে নূর পাহাড়ে। হঠাৎ ভীষণ জ্বলে পড়লেন। তাঁর ওপর ছিল মরু এলাকার প্রচণ্ড গরম, এক অনারব বন্ধু পাহাড়ে এসে বলল, এখানে তো ভীষণ গরম। তার ওপর জ্বরও মারাত্মক। আপনার কি কিছু খেতে ইচ্ছা করছে? তিনি বললেন, একটু ঠাণ্ডা পানি হলে ভালো হত। বন্ধু এবার বিপাকে পড়লেন। এত গরমে ঠাণ্ডা পানি পাওয়া মুশকিল। তবুও একবার চেষ্টা করে দেখতে হবে। পানির পাত্র হাতে নিয়ে তিনি বেরিয়ে পড়লেন। পথে নেমেই তিনি দেখলেন, সারা আকাশ জুড়ে মেঘ। এবং একটু পরে শুরু হল শিলাবৃষ্টি। তিনি পাত্রভর্তি শিলা এনে কিছুক্ষণ রাখলেন। তারপর সেগুলি গলে যখন পানি হল, তখন তাঁর সামনে দিলেন। হযরত ঠাণ্ডা পানি পাওয়ার রহস্য জানতে চাইলেন। বন্ধু তখন শিলাবৃষ্টির কথা খুলে বললেন, তখন তিনি বুঝলেন এ তারই অলৌকিক শক্তির নিদর্শন। তখন তিনি তাঁর নফসকেই ভর্ৎসনা করে বললেন, ঠাণ্ডা পানির বদলে তোমার জন্য গরম পানিই ভালো ছিল।
একবার এক বনে তিনি দারুণ ক্ষুধার্ত হয়ে পড়েন। তাঁর আর চলার শক্তি ছিল না। হঠাৎ তাঁর চোখ পড়ল আকাশের চাঁদের ওপর। দেখলেন, চাঁদে লেখা রয়েছে ফাছাইয়াকফীকাহুমুল্লাহু-আল্লাহই তোমাদের জন্য যথেষ্ট। আর ঐ লেখা দেখা মাত্র তাঁর শরীরে ফিরে এল প্রবল শক্তি।
একবার এক নির্জাবাসের সময় তিনি অদৃশ্য কণ্ঠের বাণী শুনতে পেলেনঃ হে আবু কাশেম, তুমি যেসব অন্যায় কথা বল, তার শাস্তিস্বরূপ আমি তোমাকে বিপদে ফেলব। তিনি আল্লাহর দরবারে হাত ওঠালেন এবং বললেন, হে দয়াময়ঃ আপনি আমার ঐসব কথার বিরোধিতা করবেন? তবে করুন, আমি তা থেকে বিরত হবো না। বরং আপনার বিপদকে প্রেমিকের দয়া বলে বরণ করব। তখন আবার শোনা গেল, তোমার একথা আমার খুব পছন্দ হয়েছে।
সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া
হযরত আবুল কাশেম নসরবাদী (রঃ) – শেষ পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন