হযরত আবুল কাশেম নসরবাদী (রঃ) – পর্ব ১
হযরত শিবলী (রঃ)-এর পর খোরাসানের দরবেশগণের মধ্যে যাকে শিক্ষাগুরুর মর্যাদা দেয়া হয়, তিনি হলেন হযরত আবুল কাশেম নসরবাদী (রঃ)। অধ্যাত্ম সাধনা আত্মমগ্ন এই সাধক শরীয়ত শাস্ত্রে সুপণ্ডিত ছিলেন। হাদিস শাস্ত্রের ওপর তিনি অনেক গ্রন্থ রচনা করেন। আবার তিনি ছিলেন এক মরমী প্রেমিক। আল্লাহর প্রেমে বিভোর এক আপন-ভোলা পথিক।
তাঁর মুর্শিদ প্রখ্যাত তাপস হযরত শিবলী (রঃ)। হযরত মুরতায়েশ (রঃ) ও হযরত রোদবারী (রঃ) প্রমুখ তাপসগণের সান্নিধ্য লাভেও তিনি ধন্য। খোরাসানের নসরবাদ নামক স্থানে তাঁর জন্ম। এই জন্য তিনি নসরবাদী নামে পরিচিত। প্রথম জীবনে তিনি নিশাপুরে বসবাস করেন। পরে চলে যান মক্কা শরীফে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশতঃ তাঁকে মক্কা থেকে বিতাড়িত করে হয়। ঘটনাটি নিম্নরূপঃ
অনেক সময় তিনি আত্মবিস্মৃত হয়ে পড়তেন। তখন তাঁর কোন জ্ঞান থাকত না। একদিন দেখা গেল, পরনের কাপড় কোমরে জড়িয়ে অগ্নি-উপাসকদের অগ্নিকুণ্ড পরিক্রমা করছেন। সবাই অবাক হয়ে তাঁকে ধরে ফেলেন। জিজ্ঞেস করেন, আপনি এমন করছেন কেন? তিনি বললেন, আমি আমার পার্থিব বস্তু পাবার জন্য কাবা ঘর তওয়াফ করে দেখলাম, কিন্তু কিছু পাওয়া গেল না। তাই এখানে এসেছি, যদি পাওয়া যায়। বলাবাহুল্য, তাঁর আচরণ ও কথাবার্তায় বিরক্ত হয়ে মক্কাবাসীরা বিরক্ত ও ক্রুদ্ধ হয়ে তাঁকে মক্কা থেকে তাড়িয়ে দিলেন।
একবার তরমুজ কেনার জন্য তিনি এক ইহুদীর কাছে পয়সা চাইলেন। পেলেন না। কিন্তু হতাশ না হয় আবার ইহুদীর কাছে পয়সার জন্য পীড়াপীড়ি শুরু করলেন। ইহুদী এবারও তাঁকে পয়সা দিল না। কিন্তু তিনিও শুনবেন না। আবারও শুরু হল কাকুতি-মিনতি। এবার দারুণ বিরক্ত হয়ে ইহুদী বলল, আচ্ছা লোক বটে তো তুমি! তোমার কি ঘৃণা লজ্জা কিছুই নেই?
তিনি বললেন, গরীব লোক যদি অল্পেই বিরক্ত হয়, তা হলে তার উদ্দেশ্য পূরণ হবে কি করে? তাঁর কথা শুনে ইহুদী কিছুক্ষণ কি যেন ভাবল। তার মনে হল, এটা নিশ্চয় ইসলাম ধর্মের শিক্ষা। অমনি সে খপ করে তাঁর দুটি হাত জড়িয়ে ধরে বলল, ভাই, আপনি আমাকে ক্ষমা করুন। আমি এতদিন পথভ্রান্ত ছিলাম। আজ আমার চোখ খুলে গেছে আপনি আমাকে ইসলাম ধর্মে দীক্ষা দিন।
সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া