কর্পোরেট

সকাল বেলা অফিসে ঢুকেই আসিবের মনটা খারাপ হয়ে গেল। অফিসের পিয়ন কালাম গম্ভীর ভঙ্গীতে খবরট দিলো, ‘আপনারে বড় স্যারে ডাকছে, যান, আইজকা আফনের খবর আছে’।
খবর যে আছে সেটা আসিব আগে থেকেই আঁচ করতে পেরেছিল। গত কয়েকদিনে বেশ কয়েকবারই এমডি স্যারের রুমে গিয়েছে সে। প্রতিটা কথা, প্রতিটা বিষয় ব্যাখ্যা করে বলেছে। এমডি স্যার মন দিয়ে শুনেছেন। বলেছিলেন দেখবেন কি করা যায়, তবে এমডি স্যার না বললেও আসিব জানত চেয়ারম্যান স্যারের চাপ আছে, ব্যাপারটা হয়তো শেষ পর্যন্ত তার বিপক্ষেই যাবে। আসলে ভাগ্যটাই খারাপ, নইলে বদরুল অফিসের টাকা পয়সা চুরি করে, মেরে দেয়, সেতো অনেক আগে থেকেই করে, তার কাছেই কেন ওরকম ধরা পড়তে হবে। আর ঘুনাক্ষরেও যদি সে আগে থেকে জানতে পারত যে বদরুল কোন না কোন ভাবে চেয়ারম্যান সারের কাছের লোক তাহলে কি আর ওরকম একটা কমপ্লেইন করত সে? এখন ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দোষ আস্তে আস্তে তার ঘাড়ে চাপানোর চেষ্টা চলছে। শুরুতে যারা তার পক্ষে ছিল বলে মনে হয়েছিলো, এখন তারাও আস্তে আস্তে ভিন্ন সুরে কথা বলতে শুরু করেছে। এমন না যে অফিসে কেউ তাকে পছন্দ করেনা, সৎ একনিষ্ঠ কর্মী হিসেবে তার বরং সুনামই আছে। এখন কি হয় কে জানে, আজ হয়তো এই অফিসে তার চাকরির শেষ দিন। অথচ এমডি স্যারকে কতভাবেই না বুঝিয়ে বলেছে সে। তার একার আয়ের উপর তার পুরো সংসার নির্ভর করে আছে, ছোট দুটো ভাই বোন, তার বৃদ্ধা মা এবং একমাত্র বড় বোনও পরিস্থিতির শিকার হয়ে একটা বাচ্চা নিয়ে তার সাথেই থাকে … আরও কতো কি।
যা ভেবেছিল তাই। এমডি স্যার তেমন কোন কথা বললেননা। তাকেলেন ও না ভালো মত। শুধু টারমিনেশন লেটার টা হাতে দিয়ে বললেন, ‘স্যরি’। তোমার এ মাসের বেতন টা নিয়ে যেও।

মাথার ভেতরটা কেমন যেন ফাঁকা লাগছে। বমি পাচ্ছে আসিবের। এতদিনের চেনা রাস্তা, এই রাস্তা ধরেই তো প্রতিদিন অফিস থেকে ফিরেছে সে। আজ কেন এমন অচেনা লাগছে। মাথাটা কি আরেকটা চক্কর দিয়ে উঠলো?

রাস্তার লোকজন হায় হায় করে উঠলো। দ্রুত ছুটে বেরিয়ে গেলো মিনিবাস টা। আসিবের নিথর শরীরের নিচে রক্তে ভেসে যাচ্ছে কালো পিচের রাস্তা।

ধড়মড় করে ঘুম ভেঙে উঠে বসলেন এরিন ইন্টারন্যাশনাল গ্রুপ এর এমডি আলি আকবর সাহেব। ঘামে ভিজে গেছে ঘাড়ের কাছে বালিশটা। বয়সের সাথে সাথে মনটা দুর্বল হয়ে যাচ্ছে, নয়তো এমন স্বপ্ন কেউ দেখে? এসিটা আরেকটু বাড়িয়ে দিয়ে দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকালেন তিনি। নাহ আর ঘুমানো যাবেনা, অফিসের টাইম হয়ে গেছে। চেয়ারম্যান স্যারের চাপ আছে, আসিবের ব্যাপারে আজই একটা ফাইনাল সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভানুধ্যায়ী এবং সম্মানিত অবদানকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

দুঃখিত!