হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন চিশতি (রঃ) – পর্ব ৪
হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন চিশতি (রঃ) – পর্ব ৩ পড়তে এখানে ক্লিক করুন
বাল্যকালঃ ইসলামের দিশারী সুফীসুধক হযরত খাজা মঈনুদ্দীন চিশতি (রঃ)-এর বয়স যখন সাত বৎসরে উপনিত হয়েছে, তখন হতেই তিনি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ নিয়মিত আদায় করতেন। শুধু নামাজ আদায় করে ক্ষ্যান্ত হতেন না। এই বাচ্চা বয়সে তিনি নিয়মিত রোজা রাখতেন ও জিকিরের মজলিসে যোগ দিতেন। যদি কোন ধর্মীয় অনুষ্ঠানের কথা তার কানে আসত, শুনিবামাত্রই তিনি বাধাবিপত্তি পেরিয়ে মজলিসে অংশগ্রহণ করতেন। প্রিয় পাঠক পাঠিকাগণ একটু চিন্তা করলেই অনুধাবন করতে পারবেন যে, খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী (রঃ) বাল্যকালে কতদূর খোদাভীতি অর্জন করেছিলেন, যাহা নিম্নের ঘটনার দ্বারাই প্রতিফলিত হবে।
একথা তিনি স্বীয় পিতার সাথে ঈদের নামাজ পড়তে ঈদ্গাহের উদ্দেশ্যে যাচ্ছিলেন, এহেন সময় পথিমধ্যে এক অন্ধ ও অসহায় বালককে ময়লা ও ছেড়া কাপড় পরিধান করে নামাজে যাইতে দেখলেন। সত্যি, হযরত খাজা মঈনুদ্দীন চিশতি (রঃ)- উহা দেখিবামাত্রই কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন। ইহাতে তার হৃদয়ের মণিকোঠায় এক অজানা ব্যথার উদয় হল। তিনি এ বালকের অবস্থা দেখতে দাড়ায়ে বহুক্ষণ চিন্তা করলেন। ইতিহাস বেত্তারা বলেন, তাপস পিতার অনুমতি ও নির্দেশের অপেক্ষা না করে নিজের পরিধেয় নতুন বস্ত্র খুলিয়া অন্ধ বালকটিকে পরিধান করালেন এবং হরষিত চিত্তে মহান করুণায় আঁধার আল্লাহ্ জাল্লাহ শানুর শুকরিয়া আদায় করলেন এবং নিঃস্ব অবস্থায় ঈদের নামাজ আদায় করে মনের হরষে নিজ গৃহে প্রর্তাবত্যন করলেন। রূহানী জগতের খাঁটি প্রজ্ঞাদাতা হযরত খাজা মঈনুদ্দীন চিশতি (রঃ)-এর সমুদয় কার্য কলাপই হযরত খাজা গিয়াসুদ্দীন (রঃ) অদূরে থেকে নিরীক্ষণ করলেন, এবং মনে মনে বিশ্বনিয়ন্তা আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীনের শুকর গুজারী করলেন।
উপসংহারে একথা বলা যেতে পারে যে, সূফী সাধক আলেম কুলের শিরমণি হযরত, খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী (রঃ) ইসলামের ইতিহাসের তথা ইতিহাসের পাতায় চির ভাস্কর হয়ে থাকবেন, তা তার বাল্যকালের প্রতিভা, চালচলন থেকেই প্রকাশ পেয়েছিল। ইতিহাস পাঠে জানা যায় যে, হযরত খাজা মঈনিদ্দীন চিশতি (রঃ) ছিলেন দুনিয়ার গাওছে আজম, কুতুবুল আফতাব এবং সমগ্র জ্বিন ও ইনসানগণের পথ প্রদর্শক। তিনি যে বেলায়েতী গগনের দীপ্তিমান সূর্যস্বরূপ হবেন তা তার বাল্যকালের প্রতিচ্ছবি থেকেই অনুধবন করা যেত। ইসলামের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, তিনি মার্তগর্ভ হতে তিনি অলীরূপে ভূমিষ্ট হয়েছিলেন। একথা বাস্তব সত্য যে শিশুকাল হতেই তিনি অকল্পনীয় কারামত এবং ঐশী ক্ষমতাসমূহের অধিকারী ছিলেন। একথাও শুনা যায় কেবলমাত্র যখন সাত বৎসর বয়সে উপনিত হয়েছিলেন ঐ সময় তিনি অর্থসহ ঐশীগ্রন্থ আল কোরআন হেফজ করেন। অল্প দিনের মধ্যে তিনি ইলমে হাদীস ও ইলমে ফেকাতে পান্ডিত্ব অর্জন করেন। প্রিয় পাঠক-পাঠিকাগণ শুনলে অবাব হবেন সত্যের অগ্রনায়ক খাজা মঈনুদ্দিন চিশতী (রঃ) মাত্র পনের বছর বয়সে এলমে তাছাউফ তত্ত্ব সম্পর্কিত একখানা মূল্যবান গ্রন্থ তৎকৃত প্রণীত হয়েছিল। বাল্যকালের এসব নিদর্শন থেকেই প্রমাণ করেছিল যে তিনি ইসলামের একজন হাদী হবেন।
সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া
হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন চিশতি (রঃ) – পর্ব ৫ পড়তে এখানে ক্লিক করুন