মঞ্ছের মিয়া নামে আমার এক চাচা ছিলেন। অত্যন্ত সাদা সিধে জীবন যাপন করতেন তিনি, তবে শুনেছি ছেলে বেলায় একটু দুরন্ত প্রকৃতির ছিলেন। ছোটবেলায় সাধারণত সবাই একটু আধটু দুরন্ত থাকে। আমার চাচার ওই একটু দুরন্তপনাই তার ছেলে বেলার জীবনে একবার কাল হয়ে দারিয়েছিলো যেটা নিয়ে আমার আজকের গল্প।
তখনকার দিনে আমাদের পাড়ায় লেটো গানের পালা বসতো। সেখানে অনেক লোকের সমাগম ঘটতো, দূর দুরান্ত থেকে অনেক লোক আসতো । সারা রাত ধরে সবাই গান বাজনায় মগ্ন থাকতো , তো ওইবার এক লেটো গানের পালায় আমার চাচা গিয়েছিলো। বলতে গেলে পালিয়েই গিয়েছিল কারন তার বাবা মা তাকে যেতে দিতে চায় নি, এজন্য সে রাতে ঘুমাতে যাবার জন্য ঘরে গিয়ে শোবার ভান করে বসে ছিলো। ঘন্টা খানিক পর আমার চাচা দেখলো তার বাবা মা ঘুমিয়ে পরেছে , এই ফাকে সে আস্তে করে দরজা খুলে চুপি চুপি হেটে বেরিয়ে পরলো। রাস্তায় এসে দাড়িয়ে মনে মনে বলল জেবলদের বাসায় গিয়ে ওকে ডেকে নিয়ে আসি তাহলে দুজন এক সাথে যেতে পারবো । আমার চাচার বন্ধুর নাম জেবলচাচা, তো একবার ভাবলেন জেবলকে ডেকে নিয়ে দুজনে একসাথে যাবেন কিন্তু পরক্ষণেই মত পরিবর্তন করলেন কেননা জেবলকে ডাকতে গেলে ওর বাবা-মা যদি রাগ করে ? নাহ আমি একাই যাই। এবার চাচা হাটতে লাগলো , নিঝুম নিশুতি রাত নিস্তব্ধ চারিদিকে। শুধু চাচার হাটার সময় লুঙ্গির শব্দ হচ্ছিলো, আর ঝি ঝি পোকার ডাক। লেটো গানের জলসাটা বসেছিল আমাদের পাশের পাড়ায়, তাই তিনি একটু জোরে জোরেই হাটছিলেন কেননা পালা শুরু হয়ে গিয়েছে। হাটতে হাটতে চাচার চোখে পরলো যে সামনে দিয়ে কেউ একজন যেতে যেতে নিমিশেই হাওয়া হয়ে গেলো, চাচা এটা দেখলো কিন্তূ কিছু মনে করলেন না। গ্রামের ছেলেরা কিন্তূ আবার অল্পেতে ভয় পায় না। সে হাটতে লাগলো কিছু মনে না নিয়ে। খানিক বাদে সে খেয়াল করলো তার সে বন্ধু তার আগে আগে হেটে যাচ্ছে এবং খুব জরে জরে হাটছে, তিনি একটু অবাক হলেন যে এতক্ষন তো কাউকেই দেখলাম না, কিন্তূ জেবল এমন আচমকা কোথা থেকে আসলো। চাচা তাকে ডাকলেন, ডাকে কোন উত্তর নেই শুধু সে ধেই ধেই করে হেটে যাচ্ছে। এবার চাচা দৌড় দিল তাকে ধরার জন্য সেও দৌড় দিয়ে একটা খালে নেমে গেলো । উনি খাল পারে দারিয়ে যেটা দেখলেন এটা কোন মানুষ ই দেখতে চায় না একটা গাছের আড়ালে লুকিয়ে থেকে তিনি দেখলেন যে ওটা তার বন্ধু নয়, তার পা পানির উপরে ভাসছিলো এবং ক্রমেই লম্বা হচ্ছিলো সে, তার লম্বা হাত দিয়ে সে একের পর এক মাছ ধরতে লাগলো আর বিকট ভাবে হাসতে হাসতে খেতে লাগলো। তার মুখে ছিল কাটা দাগ, চোখ ছিল বড় বড় মনে হচ্ছিল যে আগুনের গোলা বাহির হবে। তার শরিরের মধ্যে থেকে যেনো রক্তের বন্যা বয়ে যাচ্ছিল। এটা দেখে আমার চাচা ভয়ে সেখানে নিস্তব্ধ হয়ে গেলো কি করবে বুজতে পারছিলো না তার হাত পা জমে অসার হয়ে গেল। মনে হচ্ছিল যে সে এখন ই মারা যাবে। এমন সময় একটা জরে বম ফোটার আওয়াযের মত হল, সে একটু গুছিয়ে নিয়ে তখন কিছু না বেবে দিল এক দৌড়। প্রান পনে চাচা দৌড়াচ্ছে , তাকে বার বার কে যেন নানা ভঙ্গিতে ডাকছিল নানা ধরনের আওয়ায হচ্ছিল মনে হচ্ছিল যেনো ভুমিকম্প হচ্ছে। কেউ একজন বলছিল যে আয় গান দেখতে যাই আয় যাস না ………। চাচা দৌড় দিয়ে বাড়ির দরজার সামনে এসে ধাপ করে পরে গেলো। শব্দে দাদা দাদির ঘুম ভেঙ্গে গেলো, তারা বেরিয়ে এসে দেখল তাদের ছেলে মাটিতে অজ্ঞ্যান অবস্তায় পরে আছে। তারাতারি করে কাছে এসে কান্না কাটি শুরু করে দিল। আশ পাশের সবাই ছুটে আসলো। সবাই এসে চাচা কে পানির ছিটা দিয়ে জ্ঞ্যান ফেরাল, দুজন লোক গেল আমাদের গ্রাম্য কবিরাজের কাছে। কবিরাজ এসে তার সাধ্যমত চেস্টা করে একটু শুস্ত করল। পরে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হল। তার গায়ে জর আসলো প্রচন্ড পরিমানে, যাতে তিনি ৭ দিন হাস পাতালে ছিলেন। শুস্ত হওয়ার পর সে সব খুলে বলল এবং তার মা বাবার কাছে ক্ষমা চাইল। এর পর থেকে তার বন্ধু ও সে খুব সতর্ক ভাবে চলা ফেরা করা শুরু করল নামাজ পরা শুরু করল।
এটা আমার লেখা প্রথম পোস্ট কেমন লাগল জানাবে
"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভানুধ্যায়ী এবং সম্মানিত অবদানকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।