গ্রীষ্মের ছুটি। চতুর্দিকে ছেলে-মেয়েরা মেতে উঠেছে আনন্দের খেলাধূলায়। যে যার মতো মেতে আছে পছন্দের খেলাটিতে। কিন্তু শাহিনের ব্যাপারটি সম্পূর্ণই ব্যতিক্রম। সে চলে গেল প্রিয় সখ চিত্রাঙ্কন চর্চা করতে। নিজের রঙ-তুলির কাছে ফিরে যাবার জন্য শাহিন বেশ কিছুদিন ধরে অপেক্ষা করছিল। আঁকা তার বড় সখ। আঁকতে সে পছন্দ করে খুব বেশি। জীবনের বড় সখ হিসেবে সে ধরে নিয়েছে আঁকাকেই।
পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে শাহিন অঙ্কনকর্মে ব্যসত্ম। ঠিক সে মুহূর্তে মা দূর থেকে ডাক দিলেন, শাহিন! ও শাহিন! এদিকে আয় তো। শাহিন ছুটে এসে দাঁড়ায় তার মায়ের সামনে। মা তার মাথায় আদুরে পরশ বুলিয়ে বললেন, এখন তোর প্রিয় কাজটির সময় হয়েছে বাপ! পূর্ণ উৎসাহ ও উদ্দীপনা নিয়ে লেখাপড়ার করে একটি বছর শেষ করেছিস। এখন তুই অনেকটা অবসর। হাতে খোলা সময় আছে তোর। পূর্ণ স্বাধীন ও মুক্তমনে আঁকিবুঁকি করতে পারবি এখন। চিত্রকর্ম শিখে ফেল। আচ্ছা, বাবা! এখন কি তুই কিছু আঁকছিলি?
– হ্যাঁ, মা, একটি সুন্দর হাঁস ও নদীতে ভাসমান একটি নৌকা আঁকছিলাম।
– কই দেখা তো তোর আঁকা ছবিটি। তুই যা আঁকবি সব কিন্তু আমাকে দেখাবি, বুঝলি!
শাহিন কামরায় গিয়ে নিজের আঁকা ছোট কার্ডটি নিয়ে এল। মা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে কার্ডটি দেখে বললেন, বাহ! তুই তো একজন ভালো আঁকিয়ে দেখছি! তবে মনে রাখবি, এ কাজে তোকে যথেষ্ট সহনশীল হতে হবে। প্রচুর চর্চা-অনুশীলনের পথ মাড়াতে হবে। কোনো কিছু আঁকার আগে খুব ভালো করে তা পর্যবেক্ষণ করতে হবে। আঁকতে হবে খুব শামত্ম মেজাজে, ধীর স্থিরভাবে।
জান আববু! রঙ-তুলির কাজটা না বেশ মজার! শুন, কিছুদিন পর তোর আববু সফর থেকে ফিরবেন। তোর আঁকা কার্ডগুলো দেখলে তোর আববু কী যে খুশী হবেন, জান? গত বছর তোর আঁকা কার্ডগুলো ছিল বেশ কাঁচা। কিন্তু এ বছরের অঙ্কনগুলো ভালো ও আশাব্যঞ্জক। তাই তুই আঁকতে থাক। আঁকতে আঁকতে সত্যি একদিন তুই পৃথিবীখ্যাত একজন শিল্পী হয়ে যাবি। প্রকৃতিতে যা দেখিস, সবই আঁকবি। প্রকৃতি সবচেয়ে সুন্দর।
সে যাই হোক, তোকে এক্ষুণি একটি পুরস্কার দিতে চাই, আববু! শাহিন মুচকি হেসে বলল, দেখি তো মা, সেটি কী পুরস্কার? ঐ যে তেপায়ার উপর কী আছে দেখ। শাহিন আনন্দে শিহরিত হয়ে চিৎকার দিল, রঙের কৌটা। বাহ! কী দারুণ প্রয়োজনের একটা জিনিস রে মা! ধন্যবাদ তোমাকে, মা! অ-নে-ক ধন্যবাদ।
শাহিন রঙের কৌটটা উঠিয়ে নিল তেপায়া থেকে। ঠিক সে সময় মা আরো উৎসাহ দিয়ে বললেন, এটুকুতেই শেষ নয় আববু! তোর আববুও অনেক চিত্রসামগ্রী নিয়ে আসবেন তোর জন্য। কথা দিয়েছেন। তা হলে মা তোমাদের উভয়কে ধন্যবাদ!
শাহিন ঘর থেকে বের হয়ে পাশর্ববর্তী এক বাগানে গেল। সুন্দর একটি টিলায় বসে চতুর্দিকে তাকিয়ে সে ভাবতে লাগল, এখন কী আঁকতে পারি? সুন্দর কিছু একটা তো আঁকতে হবে। তার ভাবটা ধরতে পারল গাছে বসা একটি চড়ুই, কিংবা তার আওয়াজটা শুনতে পেল। চড়ুই বলল, শাহিন! চিমত্মার কারণ নেই। আমাকে আঁকতে পার তুমি। দেখছ না, আমার পালকগুলো কী দারুণ সুন্দর! অসাধারণ মোহনীয় রঙে রাঙানো!
শাহিন বলল, তবে তুমি কি আমার আঁকা শেষ হওয়া পর্যমত্ম গাছের ডালে বসে থাকতে পারবে? চড়ুই বলল, অবশ্যি পারব। কিন্তু তোমার আঁকাটা সুন্দর হবে তো শাহিন! কী বল চড়ুই? তা হলে দেখবে তুমি। এই বলে শাহিন ঘর থেকে সাথে নিয়ে আসা শক্ত কাগজের টুকরাটা চতুষ্কোণী কাঠের উপর রাখল। এবার রঙিন কলমগুলো বের করে ধীরে-ধীরে চড়ুইটা আঁকতে শুরম্ন করল। কিছুক্ষণ পর চড়ুইটা বলে ওঠল, শাহিন, ক্লামত্ম হয়ে গেলাম রে! শাহিন আঁকায় নিমগ্ন ছিল বলে কথাটা শুনতে পেল না। চড়ুইটা এক উড়াল দিয়ে শাহিনের একেবারে কাছে এসে বলল, ভীষণ ক্লামত্ম হয়ে গেলাম রে শাহিন! শাহিন একগাল হাসি ছুঁড়ে বলল, তা হলে কিছুক্ষণ আরামের জন্য তোমাকে ছেড়ে দিচ্ছি, চড়ুই!
শাহিনের কথা শুনে চড়ুইটি আনন্দে কিচিরমিচির গান ধরে উড়ে গিয়ে বসল গাছের এক ডালে। পরক্ষণে আবার ফিরে আসল শাহিনের কাছে। শাহিনের আঁকা ছবিটার দিকে লক্ষ্য করে সবিস্ময়ে বলল,
– শাহিন! এ মাথা কি আমার?
– অবশ্যি, এটিই তোমার সেই সুন্দর মাথা।
– শাহিন! তোমার অঙ্কন তো বেশ দারুণ! তা হলে তোমার আঁকা শেষ না হওয়া পর্যমত্ম আমি উঠব না।
নীরবে ও ধীরস্থিরে শাহিন চড়ুইটি এঁকে যাচ্ছে। ওদিকে চড়ুইটি লেজ নেড়ে একবার উড়াল দেয় গাছের ডালে, আরেকবার উড়াল দিয়ে দেখতে আসে শাহিনের ছবি। এভাবে থেকে থেকে শেষতক শাহিনের চড়ুই আঁকা শেষ হলো। এবার চড়ুইকে শাহিন বলল, দেখ তোমার ছবিটা কেমন হয়েছে? চড়ুই বলল, বেশ তো। দারুণ হয়েছে আমার ছবিটা! সত্যি কি এটা আমার ছবি? তুমি তো দেখি দারুণ ছবি আঁকতে পার। শাহিন বলল, সৌন্দর্যের কৃতিতব আসলে আমার না। তুমি অপরূপ সুন্দর বলেই আমার আঁকাটা সুন্দর হয়েছে, চড়ুই!
সৌন্দর্যের প্রশংসা শুনে আনন্দে কিচিরমিচির করে উড়াল দিল চড়ুই। উড়াল দিল দূর দিগমেত্ম। শাহিনও উড়াল দিল আনন্দের এক অন্য জগতে।
"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভাকাংখী এবং সম্মানিত আবেদনকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।