বুদ্ধিমান কাজী—– ইকবাল কবীর মোহন

একদা এক গ্রামে বাস করতো এক সওদাগর। তার ছিলো অগাধ সম্পদ ও ধন-দৌলত। তবে তার বিশাল সম্পদ ভোগ করার তেমন কোনো আত্মীয়-স্বজন ছিলো না। সওদাগরের একমাত্র ছেলেই ছিলো তার সব সম্পদের ভাগীদার। ছেলেটি পিতাকে অগাধ ভালোবাসতো এবং শ্রদ্ধা করতো। একদিন সওদাগর মারা গেলেন। বাবার মৃত্যুতে ছেলে যারপরনাই মর্মাহত হলো। তাই শোকাহত সন্তানটি ঘরবাড়ি ছেড়ে নিরুদ্দেশ হয়ে গেল। গ্রামের লোকেরা অনেক খোঁজাখুজি করলো। কিন্তু কেউ ছেলের সন্ধান করতে পারলো না।

দেখতে দেখতে অনেকদিন হয়ে গেল। ফলে গ্রামের লোকেরা সওদাগরের ছেলের চেহারা পর্যন্ত ভুলে গেল। সওদাগরের জমি-জিরাত ও ধন-সম্পদের ওপর অনেকের চোখ পড়লো। এরিমধ্যে একদিন ঘটলো এক অবাক কান্ড। তিনজন ছেলে গিয়ে এলাকার কাজির এজলাসে হাজির হলো। তারা প্রত্যেকে নিজেকে সওদাগরের ছেলে বলে দাবী করলো। এতে বাঁধলো বেশ জটিলতা। কেননা, সওদাগরের তো ছেলে একজনই। অথচ তিনজনই তাদেরকে সওদাগরের ছেলে বলে দাবী করছে।

কাজি পড়লেন মহাবিপদে। কাকে তিনি আসল ছেলে বলে ঠিক করবেন? কাজি সাহেব ছিলেন বেশ বুদ্ধিমান। তিনি অনেক ভাবলেন। তারপর মৃত সওদাগরের একটি ছবি জোগাড় করলেন। একদিন তিনি ছেলে তিনটিকে এজলাসে ডেকে পাঠালেন। কাজি সাহেব বললেন, ‘আচ্ছা শোন ছেলেরা। এই যে ছবি দেখছো-এটাই হলো তোমাদের লক্ষ্যবস্ত্ত। এটিকে রাখা হলো। আর এই বন্ধুক। তোমরা এক এক করে ছবিটার ওপর গুলি চালাবে। যে ছবিটার ওপর ঠিকভাবে আঘাত করতে পারবে সেই হবে সওদাগরের আসল উত্তরাধিকারী।

কাজির কথা শুনামাত্রই দু’টি ছেলে লক্ষ্যভেদ করার জন্য তৈরি হয়ে গেল। তবে তৃতীয় ছেলেটি কাজির কথা শুনে হতভম্ভ হলো এবং ভাবনায় পড়ে গেল। দেখতে দেখতে ছেলেটার দু’চোখ অশ্রুসজল হয়ে উঠলো। তার বাক যেন রুদ্ধ হয়ে আসছিলো। তাই অশ্রুসিক্ত নয়নে বালকটি কাজি সাহেবকে বিনীতভাবে বললো, ‘জনাব, এই যে ছবি, যাকে লক্ষ্যবস্ত্ত করা হয়েছে, তিনিই আমার পিতা। শ্রদ্ধাভাজন পিতার ছবিকে বন্ধুকের নিশানা করা আমার পক্ষে কোনোভাবেই সম্ভব নয়। বাবার অগাধ সম্পত্তি লাভের জন্য আপনার কাছে পিতার পরিচয় প্রমাণ করা আমার পক্ষে হয়তো সম্ভব হবে না। আর এই বিশাল ধন-দৌলত ফিরে পাওয়াও হয়তো আমার হবে না। তাতে আমার কোনো দুঃখ নেই। তারপরও এই অমানবিক কাজ পুত্র হয়ে আমি কখনও করতে পারবো না।’

বালকের কথা শুনে কাজি সাহেব অবাক হলেন। তাঁর পরীক্ষা সফল হলো। এই ছেলেটিই যে প্রয়াত সওদাগরের আসল ছেলে তা বুঝতে আর বাকি রইলো না। কাজি সাহেব বালকটিকে সওদাগরের ধন-সম্পদের উত্তরাধিকার ঘোষণা করলেন। কাজির অসামান্য বুদ্ধির কারণে একটি ছেলে তার পিতার সম্পত্তি ফিরে পেল।

 

"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভানুধ্যায়ী এবং সম্মানিত অবদানকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

দুঃখিত!