হযরত আবু বকর শিবলী (রঃ) – পর্ব ৯
হযরত আবু বকর শিবলী (রঃ) – পর্ব ৮ পড়তে এখানে ক্লিক করুন
ইহকালের লোভ আর পরকালের ভয় থেকে কিরূপে নিরাপদ থাকা যায়- এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, দুনিয়ার লোভ থেকে দূরে থাক, তবেই পরকালের ভয় থেকে নিরাপদ থাকা সম্ভব হবে।
এক লোক বার বার হে প্রভু, হে প্রভু উচ্চারণ করছিল। আবুবকর (রঃ) তাঁকে বললেন কতদিন পর্যন্ত তুমি এরূপ বলতে থাকবে? তিনি বললেন, হে আমার বান্দা, হে আমার বান্দা, তা শুনবে না? লোকটি বলল, হ্যাঁ, প্রভুর সে কথা আমি শুনছি। তাই ইয়া রব, ইয়া রব, বলছি। তখন আবু বকর (রঃ) বললেন, তবে তোমার ইয়া রব, ইয়া রব বলা যুক্তিযুক্তই বটে।
তাঁর বাণী চিরায়ত। তাঁর অমূল্য বাণীসমূহ নিম্নরূপঃ
১. ধরনা এবং জ্ঞান দিয়ে যে বস্তু চেনা যায়, তা মূল্যহীন এবং সুষ্ট বস্তু। কেননা, আল্লাহ্র পরিচয় হল, ধরনা, কল্পনা ও জ্ঞানের বাইরে যিনি থাকেন তিনিই আল্লাহ্।
২. সুফী সে ব্যক্তি, যার জীবন যাপন প্রণালী তদ্রুপ, যেরূপ তাঁর দুনিয়ার আগমনের পূর্বে ছিল।
৩. শক্তি, অনুভূতির প্রতি লক্ষ্য রাখা ও রিপুকে নিয়ন্ত্রণ করার নাম তাসাওউফ।
৪. সুফী তখনই সুফী, যখন সমগ্র সৃষ্টিকে নিজের সন্তান মনে করে তাঁর বোঝা নিজে বহন করেন।
৫. আল্লাহ্র দরবারে মূর্খ সেজে জীবন যাপন করার নামই তাসাওউফ।
৬. আল্লাহ্ প্রেমের দাবীদার হয়ে আল্লাহ্র ছাড়া অন্য বস্তুর প্রত্যাশী হওয়া আল্লাহ্র সঙ্গে ঠাট্টা করা ছাড়া আর কিছু নয়।
৭. আল্লাহভীতি অন্তব কাঁপায় আর প্রেমের আগুন প্রাণ বিগলিত করে। কামনা বাসনা বিনষ্ট করে।
৮. মারেফাত তিন প্রকার। যথাঃ (ক) আল্লাহ্র মারেফাত- যা যিকিরের মুখাপেক্ষী, (খ) আত্মার মারেফাত-যা ফরজ পালনের মুখাপেক্ষী এবং (গ) বাতেনী মারেফাত-যা আল্লাহ্র ইচ্ছা ছাড়া অর্জিত হয় না।
৯. পার্থিব দেহ ধ্বংস হলেই ‘লা’ অর্থাৎ ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’-এর প্রকৃত রহস্য প্রকাশ পায়।
১০. শরীরের শক্তিকে দমিয়ে রাখা ও প্রতিটি শ্বাস-প্রশ্বাসকে আল্লাহ্র যিকিরে ব্যাপৃত রাখাই হল দরবেশী।
১১. মানুষের সঙ্গে যাবতীয় সম্পর্ক ছিন্ন করে যিনি আল্লাহ্র সাথে মিলিত হন, তিনিই সুখী।
১২. প্রতিটি বস্তু প্রেমিকের উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করে দেয়াই হল প্রেমের নিদর্শন।
১৩. আরেফ তিনিই- যিনি কখনও প্রেমিকের সামান্য আঘাত সহ্য করতে অক্ষম, আবার কখনও সপ্ত জমিন ও সপ্ত আকাশ নিজের চোখের পাপড়ির ওপর রাখেন।
১৪. লোকে তাঁকে জিজ্ঞেস করে, আপনি আগে এরূপ কথা বলতেন, এখন আবার অন্যরূপ বলছেন, এর কারণ কি? তিনি বললেন, তখন ‘আমি’ ছিলাম। কিন্তু এখন ‘আমি’ নই বরং তিনি।
১৫. প্রেমিকের কোন চিহ্ন নেই। প্রেমেরতো কোন দুর্নাম নেই এবং ভীত ব্যক্তির স্থিরতা নেই। মনে রেখ, কেউই আল্লাহ্ থেকে পালাতে পারবে না।
১৬. আল্লাহ্র সন্ধান সাহসের কাজ। দুনিয়াতে এটি অন্য কোন সাহসিকতার কাজ নেই।
১৭. আল্লাহ্ ছাড়া যিনি অন্য কোন কাজে লিপ্ত নন, তিনিই প্রকৃত দরবেশ।
১৮. আল্লাহ্র এবাদত করাই হল শরীয়ত। তাঁকে খোঁজ করা হল তরীকত এবং তাঁর দর্শনলাভ হল হাকীকত।
সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া