হযরত আবু বকর শিবলী (রঃ) – পর্ব ৮

হযরত আবু বকর শিবলী (রঃ) – পর্ব ৭ পড়তে এখানে ক্লিক করুন

একবার অসুস্থকালে চিকিৎসকগণ কোন কোন জিনিস খাওয়া থেকে তাঁকে বিরত হতে বললেন। তিনি বললেন, যে যে জিনিস আমার ভাগ্যে লেখা আছে তা থেকে বিরত থাকার চেষ্টা হাস্যকর। আর যা লেখা নেই তার থেকে বিরত থাকার তো প্রশ্নই ওঠে না।

একবার জানাজা পড়ার সময় চার তাকবীরের বদলে তিনি পাঁচ তাকবীর বলে ফেললেন। এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বললেন, মৃতের জন্য চার তাকবীর বলেছি।

একবার তিনি নিখোঁজ হয়ে গেলেন। কয়েকদিন ধরে বহু খোঁজাখুঁজির পরে তাঁকে পাওয়া গেল নপুংসকদের এক আড্ডায়। কারণ জিজ্ঞেস করলে বললেন, এরা যেমন না পুরুষ, না স্ত্রী, তেমনি আমিও একজন মানুষ, পুরুষও নই, স্ত্রীও নই। তাই স্ব-জাতিদের সঙ্গেই ছিলাম।

একদিন তাঁর সামনে একখানি কাঠ পুড়ছে। কাঠের একদিকে আগুন জ্বলছে। অন্য দিকে বের হচ্ছে ফোঁটা ফোঁটা পানি। তিনি তাঁর সঙ্গীদের বললেন, তোমাদের অন্তর যদি প্রেমের আগুনে পূর্ণ হয় তা হলে কাঠের মতো তোমাদের চোখ থেকে পানি ঝরে না কেন? তিনি চোখে লবণ ছিটিয়ে দিতেন। লোকে বলত, আপনি অন্ধ হয়ে যাবেন। তিনি বললেন, তাতে কোন ক্ষতি নেই। আমি চাই তা দৃষ্টি-শক্তি বাইরে। অতএব এ চোখ দিয়ে আমি কী করব?

একবার ভাবাবেগে তিনি অস্থির হয়ে পড়েন। হযরত জুনায়েদ (রঃ) তাঁকে বললেন, তুমি তোমার কাজ আল্লাহ্‌র ওপর সোপর্দ কর। তা হলেই শান্তিলাভ করবে। আবু বকর (রঃ) বললেন, না, বরং আল্লাহ্‌ যদি আমার কাজ আমার হাতে সোপর্দ করেন, তাহলে শান্তি পেতে পারি। এ কথা শুনে হযরত জুনায়েদ (রঃ) বললেন, আবু বকর (রঃ)-এর তরবারি থেকে রক্তের ফোঁটা পড়ছে।

একবার হযরত জুনায়েদ (রঃ) বললেন, আবু বকর! যখন তোমার মধ্যে প্রভুকে স্মরণ করার যোগ্যতা ও বিশুদ্ধতা নেই, তবে তুমি কিভাবে আল্লাহকে স্মরণ কর? তিনি বললেন, আমি তাঁকে রূপকভাবে বার বার স্মরণ করি। যার ফলে তিনি আমাকে খাটিভাবে একবার স্মরণ করেন। এটুকুই আমার জন্য যথেষ্ট। এ কথা শোনামাত্র হযরত জুনায়েদ (রঃ) অজ্ঞান হয়ে পড়লেন। আবু বকর (রঃ) বললেন, আপনি নিশ্চিত হন। এ দরবারে কখনও পুরস্কার, কখনও তিরস্কার পেতে হয়।

একবার হযরত আবু বকর (রঃ) বাজারে গিয়ে দেড় পয়সা দামের ছেঁড়া খিরকা ও আধ পয়সা দামের টুপি কিনে পরলেন। আর চিৎকার করে বলতে লাগলেন, তোমরা কে দু’পয়সা দামের সুফী কিনবে।

একদিন সশিষ্য পথ চলেছেন হযরত আবু বকর (রঃ)। দেখলেন, মানুষের একটি মাথার খুলি পড়ে আছে। আর তাতে লেখা আছে, সে দুনিয়া ও আখেরাত বিনষ্ট করেছে। লেখা দেখে তিনি মন্তব্য করলেন, এটি নিশ্চয় কোন দরবেশের। একজন এর প্রতিবাদ করে বললেন, আপনি এমন উল্টো কথা বলছেন কেন? তিনি বললেন, উল্টো নয়, কেননা, ইহকাল-পরকাল দু’ই বিসর্জন দিয়ে প্রভুর পায়ে নিজেকে বিলিয়ে না দিলে তাঁর দীদার লাভ করা যায় না। আর এ লেখার মধ্যে সে কথাই ফুটে উঠেছে।

সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া

হযরত আবু বকর শিবলী (রঃ) – পর্ব ৯ পড়তে এখানে ক্লিক করুন

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।