হযরত আবু বকর শিবলী (রঃ) – পর্ব ৭
হযরত আবু বকর শিবলী (রঃ) – পর্ব ৬ পড়তে এখানে ক্লিক করুন
কিছু বিত্তশালী মানুষকে আমোদ- প্রমোদে মত্ত দেখে তিনি কেঁদে বলেন, এই লোকগুলির প্রতি আক্ষেপ। এরা আল্লাহ্র যিকির থেকে উদাসীন, তবু এদের ফুর্তির সীমা নেই। দুনিয়া এদের জঘন্য ও ঘৃণিত বিষয়ের দিকে আকৃষ্ট করে ফেলেছে।
কিছু লোক জানাজা বয়ে নিয়ে যাচ্ছে। পেছনে পেছনে একটি লোক হায় পিতৃবিয়োগ, হা পিতৃবিয়োগ বলে চিৎকার করছিল। হযরত আবু বকর (রঃ) বললেন নির্বোধ ব্যক্তি দেখ এই বলে, তিনি হায় আল্লাহ্ বিয়োগ, হায় আল্লাহ্ বিয়োগ বলে মাথা চাপড়ে কাঁদতে লাগলেন।
একবার জুনায়েদ পত্নী চুল আচড়াচ্ছিলেন। হঠাৎ সেখানে হযরত শিবলী (রঃ) এসে হাজির। হযরত –পত্নী পর্দা করার জন্য ব্যস্ত হতেই হযরত জুনায়েদ (রঃ) বললেন, ব্যস্ততার কারণ নেই। কেননা সুফী দলের মস্তানদের জান্নাত-জাহান্নামের প্রতিও কোন খেয়াল থাকে না। অতএব তারা কোন নারীর দিকে নজর দেবে কিভাবে? এর কিছুক্ষণ পরে হযরত আবু বকর (রঃ) কাঁদতে লাগলেন। তখন হযরত জুনায়েদ (রঃ) তাঁর স্ত্রীকে বললেন, এবার তুমি পর্দার আড়ালে যাও। কেননা আবু বকর তাঁর স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এসেছে।
হযরত জুনায়েদ বাগদাদী (রঃ) একবার স্বপ্নে দেখেন রাসূলুল্লাহ (সঃ) হযরত আবু বকর শিবলী (রঃ)-এর কপালে চুমু দিচ্ছেন। হযরত জুনায়েদ (রঃ) শিষ্যকে শুধালেন, তুমি কী আমল কর? আবু বকর (রঃ) বললেন, আমি মাগরিবের নামাজের পর দু’রাকাত নফল পড়ে এই আয়াত পাঠ করি, “লাকাদ জায়াকুম রাসূলুম মিন আনফুসিকুম আযীযুন আলাইহি মা আনিত্তুম হারীসুন আলাইকুম বিলমুমিনীনা রাঊফূর রাহীম। ফাইন তাওয়াল্লাও ফাকুল হাসবিয়াল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুওয়া আলাইহি তাওয়াক্কালতু ওয়াহুওয়া রাব্বুল আরশীল আজীম।” শুনে হযরত জুনায়েদ (রঃ) বললেন, এ জন্যই তোমার এরূপ মর্যাদা লাভ হয়েছে।
একবার হযরত আবু বকর (রঃ) ওজু করে মসজিদে যাচ্ছেন। পথে শুনলেন অদৃশ্য শব্দঃ তুমি এমন অসুন্দর ওজু বানিয়ে আমার ঘরে যেতে চাইছ। শব্দ শুনে তিনি ফিরলেন। তখন আবার আওয়াজ হলঃ আমার ঘরে না গিয়ে ফিরে যাচ্ছ? তুমি এখন যাবে কোথায়? এবার হযরত আবু বকর (রঃ) খুব জোরে চিৎকার করে উঠলেন। তখন আবার অদৃশ্য শব্দঃ তুমি কি আমাকে ভ র্ত সনা ভর্ৎসনা করছ? এবার তিনি চুপ করে বসে পড়লেন। শব্দ হচ্ছেঃ তুমি দেখছি ধৈর্যেরও দাবী করছ? তখন আবু বকর (রঃ) বললেন, প্রভু! আমি আপনার দরবারেই নির্দেশের প্রার্থনা করছি।
এক দুস্থ দরবেশ হযরত আবু বকর (রঃ)-এর কাছে নিবেদন করলেন, তিনি জীবনভর দুঃখ-কষ্ট সহ্য করে এখন বড় ক্লান্ত। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, আমি কি এ পথ থেকে ফিরে যাব? আবু বকর (রঃ) বললেন, আপনি কি নিরাশ হয়ে ফকীরদের দলে ভিড়বেন? আপনি কি আল্লাহ্র বাণী শোনেননি? আল্লাহ্ ঘোষণা করছেন, হতাশ হয়ো না। তাঁর কথায় দরবেশের মন শান্ত হল। আবু বকর (রঃ) বললেন, আপনি কি আল্লাহকে পরীক্ষা করছেন? আপনি কি শোনেননি যে, নিজের ক্ষতি সাধনকারী ছাড়া আর কেউই আল্লাহ্র হেকমত অবিশ্বাস করে না? দরবেশ বললেন, তাহলে আমার কি করা উচিত? হযরত আবু বকর (রঃ) বললেন, আল্লাহ্র দরজায় চৌকাঠে মাথা ঠুকতে থাকুন। হতে পারে, অচিরেই আপনার উদ্দেশ্য সফল হবে।
একবারও আল্লাহ্র ধ্যান ছাড়া মনে আর কিছু স্থান দেবেন না, এই শর্তে হযরত আবুল হাসান খিজীর (রঃ)-কে এক জুমআ থেকে আরেক জুমআ পর্যন্ত নিজের কাছে রাখতে সম্মত হলেন হযরত আবু বকর (রঃ)।
সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া