হযরত আবু হাফস হাদ্দাদ খোরাসানী (রঃ) – পর্ব ৬

হযরত আবু হাফস হাদ্দাদ খোরাসানী (রঃ) – পর্ব ৫  পড়তে এখানে ক্লিক করুন   

হযরত আবু হাফস (রঃ)-এর উপদেশ শুনে হযরত জুনায়েদ (রঃ) বললেন, এ ধরণের হিম্মত ও মরতবা আল্লাহ কেবল আপনাকেই দান করেছেন।

একবার হযরত আবু হাফস (রঃ)-কে একাদিক্রমে চার মাস হযরত শিবলী (রঃ)-এর মেহমান হয়ে থাকতে হয়। হযরত শিবলী (রঃ)- ও উন্নতমানের মেহমানদারী দেখান। প্রতিদিন নতুন নতুন উপাদেয় খাদ্য পরিবেশন করা ছাড়াও নানভাবে তাঁর পরিচর্যা করেন। বিদায়কালে হযরত হাফস বললেন, আপনি যদি কখনও নিশাপুরে যান তাহলে আমি আশা করি, আপনাকে মেহমানদারীর বীরত্ব ও সাহসিকতা প্রদর্শন করতে পারব। হযরত শিবলী (রঃ) বললেন, কেন হুজুর, আমার কি কিছু ত্রুটি হয়েছে? হযরত হাফস (রঃ) বললেন, হযরত হাফস (রঃ) বললেন, মেহমানদারী ব্যাপারে আপনি খুব বাড়াবাড়ি করেছেন। এতটা উচিত নয়। মেহমানদারী এমন হওয়া উচিত যাতে মেহমানের আপ্যায়নের মেজবান অসন্তুষ্ট এবং বিদায়কালে খুশী না হন। মেহমানের আগমনে যদি কথাবার্তায়, হাবভাবে, চাল-চলনে, আপ্যায়নের উপকরণ সংগ্রহে স্বাভাবিক অবস্থা বজায় রাখতে পারেন, তাহলে বোঝা যাবে তিনি প্রকৃত সাহসী ও বীর হৃদয়। আর এর বিপরীত হলে বোঝা যাবে, তিনি ভীরু এবং তাঁর আপ্যায়ন- প্রচেষ্টা কৃত্রিম, আন্তরিকতাহীন।

অবশ্য কিছুদিন পর হযরত শিবলী (রঃ) নিশাপুরে এসে হযরত হাফস (রঃ)-এর মেহমান হলেন। সেদিন তাঁর বাড়ীতে আরও চল্লিশ জন মেহমান ছিলেন। রাতের খাবারের জন্য একচল্লিশ জনের জন্য একচল্লিশটি বাতি জ্বালানো হল। শিবলী (রঃ) বললেন, আপনিই তো বলেছিলেন, মেহমানদারীতে বাড়াবাড়ী করতে নেই। অথচ আপনি আজ মেহমানদের সম্মানে একচল্লিশটি বাতি জ্বলালেন। আপনার কথামত এটাকে বাড়াবাড়িই বলা চলে। তখনই হযরত হাফস (রঃ) বললেন, যদি বাড়াবাড়ি মনে হয় তাহলে বাতিগুলি নিভিয়ে দিন।

হযরত শিবলী (রঃ) বাতি নেভাতে গিয়ে একটি ছাড়া অন্যগুলি নেভাতে পারলেন না। অবাক হয়ে তিনি বললেন, বাতিগুলি নেভানো গেল না। এর কারণ কী হুযুর! হযরত হাফস (রঃ) বললেন, আজকের মেহমানদের পাঠিয়েছেন আল্লাহ। অতএব আল্লাহকে খুশী করার জন্য প্রত্যেক মেহমানের জন্য বাতি জ্বেলেছিলাম। যেটি নিভে গেল সেটি জ্বালিয়েছিলাম আমার নিজের জন্যই। অর্থাৎ সেটি আল্লাহর জন্য জ্বালানো হয়নি। তাই আপনি নিভিয়ে দিতে পেরেছেন। আসলে আমি যতটুকু যা করেছি সবই আল্লাহর জন্য। আর বাগদাদের আপনি যা করেছেন, তা শুধু আমাকে খুশী করার উদ্দেশ্যে। অতএব, আমার আপ্যায়নে কোন বাড়াবাড়ি নেই। সেটা ছিল আপনার মেহমানদারীতে।

তাঁর উপদেশ বাণীঃ

১. হযরত হাফস (রঃ) বলেন, যে লোক সন্নাতের অনুসরণ করে না, নিজেকে নিজে মন্দ ভাবে না, সে মানুষের মধ্যে গণ্য নয়।

২. ওলী আল্লাহদের কথা না বলে চুপ করে থাকা ভালো, নাকি কথাবার্তা বলা ভালো? এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, কথা বলা ধ্বংসের কারণ হতে পারে! অপর দিকে চুপ করে থাকার জন্য হযরত নূহ (আঃ)-এর মতো দীর্ঘজীবন লাভ করা সৌভাগ্যের কথা।

৩. প্রচুর এবাদত করেও যিনি খুব বেশী নম্র হয়ে পারেন, তিনিই হলেন দরবেশ।

৪. মানুষের মঙ্গল কামনা করা, তাদের সাহায্য বা উপকার করা, আল্লাহর দরবারে সাহায্যপ্রার্থী হওয়া, সুন্নাতের অনুসরণ ও হালাল উপার্জন- এগুলি হল উত্তম মানুষের নিদর্শন।

৫. সে ব্যক্তি অন্ধের তুল্য যে সৃষ্টি বস্তুর দ্বারা স্রষ্টাকে চিনতে চেষ্টা করে। আর যে ব্যক্তি সৃষ্টি জগতকে আল্লাহর সৃষ্ট বলে মনে-প্রাণে বিশ্বাস করে, সে-ই প্রকৃত চক্ষুষ্মান।

৬. আল্লাহর দরজায় যে স্থির। সব দরজাই তার জন্য খুলে দেওয়া হয়। আর যে শ্রেষ্ঠ শেষ নবীর অনুসরণ করে, সকল সেরা ও নেতা লোকগণ তার অনুগত হয়ে যায়।

সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া

হযরত আবু হাফস হাদ্দাদ খোরাসানী (রঃ) – শেষ পর্ব  পড়তে এখানে ক্লিক করুন   

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।