হযরত আবু হাফস হাদ্দাদ খোরাসানী (রঃ) – পর্ব ৫
হযরত আবু হাফস হাদ্দাদ খোরাসানী (রঃ) – পর্ব ৪ পড়তে এখানে ক্লিক করুন
হযরত হাফস (রঃ)-এর একজন মুরীদ ছিলেন- যেমন চরিত্রবান তেমনি বিনয়ী। তাঁর সম্বন্ধে জুনায়েদ (রঃ) বললেন, ভারী সৎ ও চরিত্রবান লোক। হযরত হাফস (রঃ) বললেন, হ্যাঁ শুধু তাই
নয়, আমার কাজে সে সত্তর হাজার দীনার ব্যয় করেছেন, আর সেজন্য তার আরও সত্তর হাজার দেনা হয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও আমাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করার তার সাহস হচ্ছে না।
একবার হযরত হাফস (রঃ) চলেছেন বাগদাদ থেকে মাদায়েনের পথে। এক সময় পানির অভাব দেখা দিল। কিন্তু কোথাও পানি মিলল না। তিনি নিজেই বলেছেন, একটানা পনের দিন তাঁকে পানির অভাব সহ্য করতে হয়। শেষে পৌঁছালেন এক নদীর তীরে। আর জ্ঞান ও বিশ্বাসের কথা ভাবতে ভাবতে বসে পড়লেন সেখানে। হঠাৎ সেখানে এসে হাজির হলেন আবু তরাব বলখী (রঃ)। বললেন, এভাবে বসে পড়লেন কেন হুজুর? তিনি বললেন, আমি এলম ও ইয়াকীন সম্বদ্ধে চিন্তা-ভাবনা করছি। দেখি কোনটা প্রবল হয়। যেটি প্রবল হবে আমি সেটিরই সহযাত্রী হাবো। যদি দেখি এলম প্রবল হয়েছে, তবে পানি পান করব। আর যদি ইয়াকীন প্রবল হয়, তাহলে আর পানি করব না।
আবু তুরাব (রঃ) বলে উঠলেন, আপনার জীবন অত্যুত্তম ও মহান হবে।
আর একবার এলম ও ইয়াকীনের দ্বন্দ্ব দেখা দেয় তার মনে। তখনও তিনি সফরে ছিলেন। আর তখনও পানির অভাব দেখা দেয়। শেষে ইয়াকীন জয়যুক্ত হয়। আর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী তিনিও পানি পান করা থেকে বিরত থাকেন।
একবার মক্কা শরীফে পৌঁছে তিনি মানুষের দৈন্য-দারিদ্র ও দুঃখ-কষ্ট প্রত্যক্ষ করেন। তখন ক্ষুধার্ত মানুষের জন্য কিছু সাহায্য দেওয়ার ইচ্ছা তাঁর মনে জাগে। সেই সঙ্গে সৃষ্টি হয় এক অপূর্ব ভাবানুভূতির। একখণ্ড পাথর তুলে নিয়ে তিনি আল্লাহর দরবারে হাত ওঠালেন। হে দয়াময়! আপনার সম্মানের শপথ, এ সময়ে আপনি যদি আমাকে কিছু সাহায্য না করেন, তবে এই পাথর ছুঁড়ে আমি এই মসজিদের সব লণ্ঠন টুকরো করে ভেঙ্গে ফেলব। এই কথা বলে তিনি কাবা শরীফ তাওয়াফ করতে শুরু করলেন। আর ঠিক এই সময়ে কোন এক অচেনা লোক এসে তাঁর হাত একটি টাকার থলে তুলে দিয়ে চলে গেলেন। হযরত হাফস (রঃ) সে টাকা বিলিয়ে দিলেন অভাবগ্রস্ত মানুষের। তারপর হজ্ব সম্পন্ন করে ফিরে এলেন বাগদাদে।
হযরত জুনায়েদ বাগদাদী (রঃ) তাঁকে বললেন, আমার জন্য কী উপহার এনেছেন? হযরত হাফস (রঃ) উত্তর দিলেন, আপনার জন্য এবারের উপহার হল, যদি কেউ আপনার সঙ্গে কোন অপরাধমূলক আচরণ করে, তাহলে সে অপরাধ আপনি নিজের বলে মনে করবেন। তবে আপনার প্রবৃত্তি যদি এতে শান্ত না হয়, তাহলে তাকে ধমকে দিন। বলুন, অপরাধী ব্যক্তিকে যদি ক্ষমা করতে না পারেন, তবে তার সঙ্গে আপনার বিচ্ছেদ ঘটবে। অর্থাৎ, এভাবে তাকে সন্ত্রস্ত করে তুলে তার দ্বারা নিজের ইচ্ছা পালন করান।
সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া
হযরত আবু হাফস হাদ্দাদ খোরাসানী (রঃ) – পর্ব ৬ পড়তে এখানে ক্লিক করুন