আমার সমবয়সী এক খালাতো ভাই ছিল। নাম আবির। সমাজে তাদের অবস্থান বেশ ভালো। তখন আমাদের অবস্থা ছিল ‘‘দিনে এনে দিনে খাওয়া’র মতো।’’ কেমন জানি আমার মনে হতো নানু আমার চেয়ে খালাতো ভাই আবিরকে বেশি ভালোবাসত। তাকেই বেশি বেশি করে লজেন্স দিত। সে নানা বাড়ি আসা মাত্রই নানীর শাড়ির অাঁচলের গিট থেকে টাকা বের করে দিতো ইত্যাদি ইত্যাদি।
একবার ঈদের সময় বেড়াতে গেলাম নানাবাড়ি। তখন আমি খুবই ছোট্ট ছিলাম। বয়সটা ঠিক মনে পড়ছে না। হিসেব করে গেলাম সেলামি কার থেকে কত পাব। গিয়ে দেখি যাওয়া মাত্রই মামা আমায় টাকা যাচে, অথচ তাকে আদৌ সালাম করিনি। তাহলে এ কিসের টাকা? যাকগে বিনা সালামে সেলামি পাওয়া গেল। গেলাম নানীজানের কাছে। উনি এই ঈদের খুশির আমেজে ঘরের কোণে বসে বসে মনের সুখে তামাক টানছে। যাওয়া মাত্রই পা ছুঁয়ে সালাম।
-এবার আমার পাওনা মিটিয়ে দিন
-কিসের পাওনা?
-কেন? সালামের।
-আচ্ছা আগে বস। কিছু খাও। তারপর…..
-এর কোন মানে হয় না। একটু দেরী হলেই আবার সেলামিটা হারাতে বসব। আবির আমার পিছু ধরেছে।
-কিরে আবির? এই নে তোর টাকা। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এক্ষুণি পালা।
টাকা নিয়ে পকেটে ঢুকাতে না ঢুকাতে আবিরের প্রবেশ। ভাগ্যিস সে টের পেল না। এবার শুরু হল আবিরের নাটক।
-নানু তাড়াতাড়ি সেলামি দিয়ে দাও। আমার একটু তাড়া আছে।
-আরে নাতি কবে টাকা দেখলাম তা তো মনেই পড়ছে না। পারলে পান-সুপুরি কেনার জন্য আমাকে কিছু টাকা দে। দোয়া করব।
-টাকা দেওয়ারও দরকার নেই, তোমার দোয়ারও দরকার নেই আমি চললাম।
এ বলে সে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেল। এদিকে আমি এ কান্ড দেখে তাজ্জব হয়ে গেলাম।
কিছুক্ষণ হচ্ছে নানীজান আমাকে চকচকে একটা দশ টাকার নোট দিয়েছেন অথচ আবিরকে সে বলল যে, ‘‘কবে টাকা দেখলাম মনেই পড়ছে না’’ এত বড় ডাহা মিথ্যা বোধ হয় নানী কাউকে বলেননি।
সে দিনের সে ঘটনা দেখে আমার বুঝতে বাকি রইল না যে, নানাজান আমাকে কতই না ভালোবাসতেন।