হযরত আবু বকর ওয়াসেতী (রঃ) – পর্ব ৫
হযরত আবু বকর ওয়াসেতী (রঃ) – পর্ব ৪ পড়তে এখানে ক্লিক করুন
(৪৭) তওহীদের মর্ম তিনিই জেনেছেন, যিনি আরশ থেকে জমিন পর্যন্ত সবকিছুকে তওহীদের দর্পণে দেখে তাঁর রহস্য উন্মেচন করেছেন।
(৪৮) আল্লাহর এবাদত ও পায়বরী করে কারণে আনন্দ অনুঅভব করে আর সে এবাদত আকৃষ্ট থাকা ভয়ানক কাজ।
(৪৯) অলৌকিক প্রর্দশন করে আনন্দ প্রকাশ করা অহমিকা নিদর্শন।
(৫০) আল্লাহর অবদানমালাকে তোমাদের এবাদতের বিনিময় বলে মনে করো না। বরং নিজেদের ক্ষুদ্র মনে কর। তা হলে তোমাদের এবাদত এবং পায়রবীকেও ক্ষুদ্র মনে হবে। তাঁরপর আল্লাহর নেয়ামতসমূহকে তোমাদের প্রতি তাঁর অনুগ্রহের দান বলে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন কর।
(৫১) শারীরিক আমল অপেক্ষা কলবী আমলের মূল্য অনেক বেশী। কেননা, আল্লাহর কাছে দৈহিক আমলের মূল্য যত বেশী হত, তা হলে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে দীর্ঘ চল্লিশ বছর দৈহিক আমল থেকে সরিয়ে রাখা হত না। অবশ্য এর মর্ম এমন নয় যে, আমল থেকে একেবারে চিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। বরং এর তাৎপর্য হল, কলবী আমলের দ্বারা এমন অবস্থার সৃষ্টি কর যেন দৈহিক আমলের দরকার না হয়।
(৫২) দাস যখন আল্লাহ আকবর কালামটি উচ্চারণ করে তখন সে এ কথা স্বীকার করে যে, আল্লাহ তাঁর চেয়ে বড় এবং মহান।
(৫৩) শিশু যেমন মার্তগর্ভ থেকে নিখুঁত নিষ্পাপ হয়ে বেরিয়ে আসে, রোজ কিয়ামতে ভাগ্যবান বান্দাদের অবস্থা তেমন হবে। অর্থাৎ আল্লাহর বন্ধুদের প্রেম সেদিন সম্পূর্ণ নিখুঁত নির্দোষ ও বিশুদ্ধ হিসেবে প্রতীয়মান হবে।
(৫৪) বিশ্বাসী তিন শ্রেনীর। যথা (১) আল্লাহ যাদের জ্যোতি দান করে উপকার করেছেন। আর তাঁরা ঐ জ্যোতির সাহায্যে পাপ থেকে পবিত্র ও কুফর-শিরক থেকে নিরাপদ থাকে। (২) আল্লাহ তাঁদের জ্যোতি দান করে এই উপকার করেছেন যে, সেই জ্যোতির সাহায্যে তাঁরা সগীরা ও কবীরা গুনা থেকে পবিত্র থাকে। (৩) আল্লাহ তাঁদের জ্যোতি দ্বারা এই সাহায্য করেছেন যে, তাঁরা ধর্ম-বিমুখ ও নাহক খেয়ালবিশিষ্ট লোকদের থেকে দূরে থাকে।
(৫৫) আল্লাহ বন্ধুদের ছোট জানা ও হঠাৎ ক্রুদ্ধ হওয়া কেবল প্রবৃত্তির দাসত্বের কারণে এমন কি ঐ দাসত্বের কারণে মানুষ ভৃত্যের পর্যায়ে থেকেও প্রভুত্বের দাবী জানায়।
(৫৬) যিনি আল্লাহর পরিচয় জেনেছেন তিনি তাঁর মধ্যেই তলিয়ে গেছেন। আর যিনি তাঁকে জানার আগ্রহের সমুদ্রে নিমজ্জিত, তিনি তাতে বীলিন হয়েছেন। আর যিনি জান্নাতের কামনা ও জাহান্নামের ভয় বিষর্জন দিয়ে সৎ কর্মে নিয়োজিত হয়েছেন, তিনি সৎকর্মের সুফল পেয়েছেন। আর যিনি আল্লাহর গজবের শিকার হয়েছেন, তিনি তাতে কঠিনভাবে আবদ্ধ হয়েছেন।
(৫৭) ভীতির চরম অবস্থা হল দাস প্রতি মুহূর্তে মনে করে যে আল্লাহ তাঁর প্রতি কোঠর দৃষ্টি দিয়ে দেখছেন। সম্ভঃবতা শীঘ্রই তিনি তাঁকে কঠিন আযাবে ফেলে দেবেন। আর আল্লাহর ভয়ে ভীত মানুষের অন্তরে তাঁকে সদা-দর্বদা আল্লাহর এবাদতে নিরত রাখে।
(৫৮) আল্লাহ তাঁর দাসের প্রতি অনুগ্রহের দৃষ্টি বর্ষন করবেন কি করবেন না, তা নিয়ে চিন্তা না করা চাই।
(৫৯) প্রকাশ্যে সৃষ্টির এবং গোপনে মনে বেঁধে রেখো
(৬০) অন্যতম স্বভাবের বৈশিষ্ট্য হল, দাস কোন মানুষের অসদাচরণ করে না এবং কোন লোকও তাঁর সঙ্গে শত্রুতা করে না।
(৬১) যে মানুষের সেবায় আত্মনিয়োগ করে, তাঁর দেহের ঘামের মূল্য আল্লাহর দরবারে লজ্জা ও অনুতাপ মূল্যবান।
(৬২) সততায় অবিচল থাকার মধ্যে এমন পুণ্য নিহিত থাকে যা সমগ্র পূন্যের মূল্য। আর যদি অবিচল মূল্য বস্তুর বিপুপ্ত ঘটে, তবে তাঁর সমস্ত পুণ্যই অসস্পূর্ণ থাকে।
(৬৩) ধর্মের কাজে সতর্কতা ও বিচক্ষণতা এমন জ্যোতি, যার দ্বারা অন্তরে অন্তস্থল পর্যন্ত উদ্ভাসিত হয়, এবং তা এমন এক মারেগফাত যার সাহায্য সৃষ্টি সমস্ত কিছু নিরীক্ষন করা যায়।
(৬৪) আল্লাহ জ্ঞানী ও সর্তক ব্যক্তিকে এমন সামর্থ্য দান করেন যে, তাঁর মাধ্যমে অন্তরের অবস্থাও অবলোকন করা যায়।
(৬৫) এ যুগে মানুষ নিজেদের অশিষ্টাচারকে ইসলামের চিহ্ন এবং লালসার প্রাবল্যকে সাহসিকতাঁর নিদর্শন বলে থাকে, যার ফলে এরা স-ক্রোধে কথা বলে ও অহমিকাসুলভ সম্ভাষণ করে।
(৬৬) আল্লাহ আমাকে এমন এক যুগে প্রেরণ করেছেন, যে যুগে না আছে শিষ্টাচার, না আছে নির্মলতা, না আছে ইসলাম।
(৬৭) আল্লাহ দুনিয়াকে এভাবে সৃষ্টি করেছেন যে, এর মধ্যে কুকুরের সংখ্যাই বেশী। এ ধরনের ফেরেশতার সংখ্যা কম-যারা এখান থেকে মুক্তি লাভের প্রত্যাশী অথচ অসফল। অর্থাৎ তিনি বেশী সংখ্যক মন্দ লোক ও অল্প সংখ্যক ভালো সৃষ্টি করেছেন। আর সবাইকে একই জমিনের ওপর রেখে দিয়েছেন। কিন্তু সৎ লোক অসৎ লোকের আবাসভূমি দুনিয়া থেকে বের হওয়ার জন্য সদা-প্রত্যাশী। কিন্তু তাঁদের জন্য তা সম্ভব নয়।
সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া
হযরত আবু বকর ওয়াসেতী (রঃ) – শেষ পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন