হযরত আবু বকর ওয়াসেতী (রঃ) – পর্ব ১

বিশ্বনন্দিত তাপস জুনায়েদ বাগদাদী (রঃ) এর প্রধান অনুগামীদের অগ্রগণ্য ছিলেন হযরত আবু বকর ওয়াসেতী (রঃ)।  ফরগনা প্রদেশে তাঁর বসবাস ছিল।  পরে পাকাপাকিভাবে বাস করতে থাকেন ওয়াসেত নামক স্থানে।  অতি সূক্ষ্ম ও নিগূঢ় ওত্ত্ব আলোচনায় তাঁর সমকক্ষ তাপস বড় একটা দেখা যায় না।  এ জন্য সাধারণের কাছে তিনি দুর্বোধ্য ছিলেন।  তাঁর পান্ডিত্য ছিল অসাধারন ও গভীর  যুক্তিপূর্ণ।  আবার এবাদতের ক্ষেত্রেও তিনি ছিলেন আদর্শ-স্থানীয়। 

তাঁর পান্ডিত্য এবং প্রজ্ঞার ধার এত তীক্ষ্ণ ছিল যে, প্রায়শ অন্যান্য বিদগ্ধজনের সঙ্গে তাঁর মতানৈক্য ঘটত।  এ জন্য কমবেশি সত্তরটি শহর থেকে তাঁকে বের করে দেয়া হয়।  শেষে তিনি বাওয়ারদে নামক স্থানে উপনীত হন।  এখানে তাঁর বহু অনুরাগী সৃষ্টি হয়।  আর তিনি জনসমক্ষে ভাষণ দিতে শুরু করেন।  কিন্তু দুঃখের কথা, তাঁর বক্তব্যের মর্ম অনুধাবন করতে পারলেন না কেউ।  অতএব, সেখান থেকেও তাঁকে বিদায় নিতে হয়।  তিনি চলে আসেন মার্ভে।  তাঁর জীবনের বাকী দিনগুলি এখানেই অতিবাহিত হয়।  সুতরাং অনুমান করা যায়, মার্ভবাসী তাঁর কথা অন্তত কিছুটা হলেও উপলব্ধি করতে সক্ষম হন। 

বয়ঃপ্রাপ্ত হওয়ার পর আল্লাহর এবাদতে তিনি এমন বিভোর হন যে, আহার-নিদ্রার কথা তাঁর স্মরণ থাকত না।  একবার তিনি এক বাগানে গেছেন।  একটি ছোট পাখি উড়ে এসে তাঁর মাথায় বসতে যেতেই তিনি তাঁকে ধরে ফেলেন হাতের মুঠোয়।  কিছুক্ষণ পরে অন্য পাখি এসে তাঁর মাথার ওপর ঘুরতে থাকে।  আর চিৎকার করতে থাকে।   তাঁর মনে হল, হয়ত তাঁর মুঠোয় বন্দী পাখি ঐ পাখিটির বাচ্চা বা স্ত্রী হবে।  তিনি পাখিটিকে ছেড়ে দিলন।

কিছু দিন পর তিনি রোগাক্রান্ত হলেন।  দীর্ঘ একটি বছর এভাবে চলে গেল।  এক রাত্র তিনি স্বপ্নযোগে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে দেখলেন।  তিনি তাঁর কাছে নিবেদন করলেন অসুস্থতাহেতু তিনি দাঁড়াতে না পেরে বসে বসে নামাজ আদায় করছেন।  অতএব, তিনি যেন আল্লাহর দরবারে তাঁর আরোগ্য লাভের জন্য দোয়া করেন।  রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, ঐ পাখিটির অভিসাপের জন্য আপনার এই অবস্থা।  কারণ আপনি তাঁর সঙ্গীকে আটকে রেখে তাঁর মনে ব্যথা দিয়েছেন।   সুতরাং এ ব্যাপারে কোন রকম দোয়া কবুল হবে না। 

আর কিছু দিন গেল।  তিনি বালিশে হেলান দিয়ে আধ শোয়া অবস্থায় পড়ে আছেন।  দেখলেন, ঘরের কোণ থেকে মুখে একটি বেড়ালের বাচ্চা নিয়ে একটি বিরাট অজগর সাপ ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে।  দেখামাত্র তিনি সাপটিকে লাটি দিয়ে আঘাত করলেন।  আর তাঁর মুখ থেকে বিড়াল ছানা খসে পড়ল।  মা-বিড়াল কোথায় ছিল সেটি বাচ্চাকে নিয়ে পালিয়ে গেল।  আশ্চর্য! সঙ্গে সঙ্গে তিনি ফিরে পেলেন তাঁর শরীরের সবলতা।  সম্পর্ণ সুস্থ হয়ে উঠলেন তিনি।  আর বসে নয়, দাঁড়িয়ে নামাজ পড়তে লাগলেন।  ঐ রাতে আবার স্বপ্ন দেখলেন রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে।  তিনি তাঁকে তাঁর সুস্থতাঁর সু-সংবাদ দিলেন।  নবীজী জানালেন, বেড়ালের স-কৃতজ্ঞ  আন্তরিক দোয়ার বরকতেই তিনি আজ আরোগ্য লাভ করেছেন।

সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া

হযরত আবু বকর ওয়াসেতী (রঃ) – পর্ব ২  পড়তে এখানে ক্লিক করুন

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।