রাজকন্যা বানেছা পরী– তৃতীয় খন্ড

রাতুলের দাদা মাওলানা মনির উদ্দিন । খুব জানা শোনা মানুষ । বয়স প্রায় সত্তরের কাছাকাছি । স্বনাম ধন্য ব্যক্তি । বিভিন্ন কাজে তাঁর কাছে সর্বদাই লোকজন আসতে থাকে ।
তিনি একজন সাদা মনের মানুষ । সবার উপকার করার চেষ্টা করেন যথাসাধ্য । জিন-ভুতে ধরা রোগীদের তিনি আরোগ্য করে থাকেন । রাতুল যেই দিন দাদু বাড়িতে পৌঁছল, তার পরের দিনের ঘটনা । সকাল সাতটা বাজে । নরম সূর্য । জামশেদ, রাতুল আর অহনা একসঙ্গে তাদের বাড়ির সামনের আম বাগানে দাঁড়িয়ে কথা বলছে । গাছ ভর্তি আমের মুকুল । ছোট ছোট আম । একটু দুরেই একটা সজনে গাছ । মাথার চুলের মত সজনে ধরে আছে । খুব মনোহর দৃশ্য । ধারে কাছেই শোনা যাচ্ছে দোয়েলের শিস । টুনটুনির টুনটূন । রাখাল গরু নিয়ে যাচ্ছে । বড় হাওড়ের দিকে । একটু দূরেই উজাড় বাড়ি । তিন জনেই বার বার সেদিকে তাকাচ্ছে । ভয়ে ভয়ে । কখন কী ঘটে যায় কে বলতে পারে ! গল্প করার এক ফাঁকে রাতুল বন্ধু জামশেদকে জিজ্ঞেস করল,
তোমার সমস্যার কথা তো কিছু বললে না ?
বলব । সে জন্যই তো মোবাইল করে আসতে বললাম ।
শুরু কর ।
জামশেদ ইংগিতে অহনাকে নির্দেশ করল । রাতুল বলল, কোন সমস্যা নেই । ওর সামনে বলতে পার । ও হল আমাদের রহস্যকন্যা । তোমার সমস্যার সমাধান হয়ত ও ই তোমাকে বলে দিতে পারবে ।
অহনা কিছুটা অপমানিত হল । সে চলে যেতে চাইছে । জামশেদ সরি বলে অহনার মান ভাঙাল । তারপর বলল, বন্ধু, আমার সমস্যা সেই একটাই । পরী রাজকন্যা ।বানেছা ।খুব ডিস্টার্ব করছে ।রাত-বিরাত নাই । যখন তখন আমার ঘরে চলে আসে । সহজে যেতে চায় না । এসেই বলে, বাঁশি বাজাও । বাজাইতে না চাইলে হুমকি ধামকি দেয় ।
অহনা বলল, এখন আর আগের মত বিয়ে করতে চায় না ?
তা চায় । কিন্তু আমি রাজি হই না ।
কেন রাজি হও না ? রাতুল প্রশ্ন করল ।
পরী আর মানুষে কোনদিন বিয়ে হয় ?
কেন হবে না ? বিয়ে হতে তো কোন বাঁধা নেই । কিন্তু সমস্যা অন্য জায়গায়।বলল অহনা।
কোন জায়গায় ? বলল জামশেদ ।
অহনা বলল, আসলে সে তোমাকে ভালোবাসে না । ভালোবাসে তোমার বাঁশির সুর ।যখন তোমার বাঁশিতে সুর থাকবে না; তখন কী হবে ? সে তোমাকে কলার খোসার মত ছুড়ে মারবে ।
রাতুলও অহনার সাথে সহমত পোষণ করল । আর জামশেদ অহনার বুদ্ধি দীপ্ত মন্তব্য শুনে মুগ্ধ হয়ে গেল । তারপর অহনার উদ্দেশ্য বলল, তাহলে আমার উপায় কী ?
উপায় একটা আছে । কিন্তু সে তুমি পারবে না । বিজ্ঞের মত বলল অহনা ।
কী ? জিজ্ঞেস করল জামশেদ ।
তুমি উল্টো সুরে বাঁশি বাজাবে । তোমার বাঁশির যে সুর শুনে বানেছা মুগ্ধ হয়েছিল; এর বিপরীত সুর । কিন্তু আমি আবারও বলছি, সে তুমি পারবে না ।
কেন পারব না ? আমি অবশ্যই পারব । বলল জামশেদ ।
না । তুমি অবশ্যই পারবে না । অহনা জোর দিয়ে বলল ।
জামশেদ মাথা নিচু করে আছে । রাতুল বলল, কেন পারবে না, সেইটা বল ।
পারবে না; কারণ জামশেদ ভাই বানেছাকে ভালোবাসে । গভীরভাবে ভালোবাসে । সে আমি তার চোখ মুখ দেখেই বুঝতে পেরেছি । কি জামশেদ ভাই আমি ঠিক বলিনি ?
জামশেদ কোন জবাব দিল না । চুপ করে থাকল । কারো বুঝতে বাকি থাকল না যে, এই নীরবতা সম্মতির লক্ষণ ।

গল্পের চতুর্থ অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন

"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভাকাংখী এবং সম্মানিত আবেদনকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

সম্পর্কিত পোস্ট

দুঃখিত!