হযরত হুসাইন মানসুর হাল্লাজ (রঃ) – পর্ব ৮
হযরত হুসাইন মানসুর হাল্লাজ (রঃ) – পর্ব ৭ পড়তে এখানে ক্লিক করুন
তিনি নাকি যৌবনে এক তরুণীর প্রতি দৃষ্টিপাত করেন। সে কথা তাঁর মনে এল। আর বললেন, এতদিন পর আজ তার প্রতিশোধ নেয়া হল। এবার হযরত শিবলী (রঃ) এসে তাঁকে তাসাওউফ বা সাধনা সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করলেন। তিনি বললেন, আপনি যা দেখছেন তা তাসাওউফের নিম্ন শ্রেণী। তাহলে উচ্চ কোনটি? শিবলী (রঃ) জিজ্ঞেস করলেন। তিনি বললেন, সেটি আপনার জ্ঞানের বাইরে।
এবার তাঁর ওপর পাথর ছোঁড়া শুরু হল। এমন কি হযরত শিবলী (রঃ) ও একটি ঢিল নিক্ষেপ করলেন। আর হযরত হাল্লাজ (রঃ) আর্তনাদ করে উঠলেন। লোকে তাঁকে বললেন, এত পাথর ছোঁড়া হচ্ছে, অথচ আপনি নির্বিকার। কিন্তু শিবলী (রঃ)-এর সামান্য ঢিলের আঘাতে আপনি অমন চিৎকার করলেন কেন? তিনি বললেন, যারা পাথর নিক্ষেপ করছে তারা রয়েছে অজ্ঞানতার আঁধারে। কিন্তু হযরত শিবলী (রঃ)-এর মতো জানাশোনা লোক আমার ওপর ঢিল ছুঁড়ছেন, এ দুঃখ কি সহ্য করা যায়?
শূলে চড়িয়ে প্রথমে তাঁর হাত কেটে দেয়া হয়। তিনি মন্তব্য করলেন, এ লোকটির এই হাত কাটা সহজ বটে, কিন্তু যে অদৃশ্য হাত দিয়ে সে আরশের ওপর থেকে গৌরবের মুকুট টেনে আনছে, তা কে কাটতে পারে? তারপর তাঁর পা কাটা হল। তখনও তাঁর সহাস্য মন্তব্য; এই পায়ের সাহায্যে পৃথিবীতে চলাফেরা করেছি। আর এখন এই এই পা কেটে ফেলা হল। কিন্তু আমার যে অদৃশ্য পা আছে, জান্নাতে আমি তাঁর সাহায্যেই বিচরণ করব। তোমাদের ক্ষমতা থাকলে সে পা কেটে নাও দেখি! বলে দু’হাতের রক্ত নিয়ে তিনি মুখে মাখতে লাগলেন। এ আপনি কি করছেন? তাঁকে সবাই বলে। তিনি বললেন, আমার শরীরের রক্ত ঝরছে প্রচুর। তাই মুখখানি সাদা হয়ে গেছে। তোমাদের মনে হতে পারে, বুঝি বা ভয়েই মুখখানি সাদা হয়ে গেছে। তাই মুখে রক্ত মেখে লাল করে নিলাম।
তারপর তিনি হাতে রক্ত মাখতে লাগলেন। বললেন, ওজু বানাচ্ছি। লোকে বলে কি রকম? তিনি বললেন, দু’রাকায়াত এশকের নামায আছে, যা রক্ত দ্বারা ওজু করে আদায় করতে হয়।
এরপর তাঁর চোখ উপড়ে ফেলা হল। আর এ দৃশ্য দেখতে না পেরে জনগণ কান্নায় ভেঙে পড়ল। অবশ্য কেউ কেউ তখনও তাঁর দিকে পাথর ছুঁড়ছিল। এবার তাঁর জিভ কাটতে উদ্যত হলে তিনি একটু থামতে বললেন। তারপর শূন্যে দৃষ্টি ছড়িয়ে বললেন, প্রভু! এরা যে আমাকে এত কষ্ট দিল এজন্য এদের আপনার অনুগ্রহ থেকে বঞ্চিত করবেন না। যদিও তারা আমার হাত পা কেটেছে, তবুও তারা সবাই রয়েছে আপনার পথে। তারা যদি আমার মাথাও কেটে নেয়, তবুও তাদের উদ্দেশ্য শুধু আপনারই দীদার লাভ করা।
এবার তাঁর নাক ও কান কেটে দেয়া হল। তাঁর ওপর প্রস্তর নিক্ষেপ তখনও বন্ধ হয়নি। তাঁর শেষ কথা হলঃ আমি একত্ববাদের প্রেমিক। একত্বের প্রতি প্রেম হল, এককে একই জানা আর অন্য কাউকে সেখানে স্থান না দেয়া। তারপর তিনি এই আয়াতটি পাঠ করলেন; যারা ঈমান আনে না এবং কিয়ামতকে অবিশ্বাস করে তা থেকে পালিয়ে যায়, অথচ তারা অন্তরে জানে যে, এ অবধারিত সত্য, তাঁরাই সহাস্যে রাসূলে করীম (সঃ)-কে তাড়াতাড়ি কিয়ামত এনে দেখাতে বলে। আর যারা ঈমান আনে (সেই ভয়ঙ্কার দিনে নাম শুনে) ভয়ে ভীত হয় ও কুকর্ম থেকে বিরত থাকে, তাঁরাই কিয়ামতকে সত্য বলে জানে ও মনে প্রাণে বিশ্বাস করে।
সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া
হযরত হুসাইন মানসুর হাল্লাজ (রঃ) – পর্ব ৯ পড়তে এখানে ক্লিক করুন