হযরত হুসাইন মানসুর হাল্লাজ (রঃ) – পর্ব ২
হযরত হুসাইন মানসুর হাল্লাজ (রঃ) – পর্ব ১ পড়তে এখানে ক্লিক করুন
হযরত হুসাইন মানসুর হাল্লাজ (রঃ)-এর সঠিক জন্মস্থান জানা যায় না। তবে তাঁর বাল্য ও কৈশোর অতিবাহিত হয় বাগদাদে। আঠারো বছর বয়সে তিনি তশতরে চলে যান। সেখানে হযরত আবদুল্লাহ তশতরী (রঃ)-এর সংস্পর্শে দু’বছর কাটান। তারপর বসরা। বসরা থেকে দাওহারকা। সেখানে হযরত আমর ইবনে ওসমান মক্কী (রঃ)-এর সাহচার্যে আসেন। আর এখানেই তিনি বিবাহ করেন। হযরত ইয়াকুব আতা (রঃ)-এর কন্যাকে।
অতঃপর হযরত ইয়াকুব (রঃ)-এর সঙ্গে মনোমালিন্য হওয়ায় তিনি বাগদাদে হযরত জুনায়েদ (রঃ)-এর দরবারে চলে আসেন। এখানে বেশ কিছুদিন কাটিয়ে তিনি চলে যান মক্কায়। সেখানে এক বছর কাটান। তারপর একদল সুফী সাধকের সঙ্গে তিনি আবার বাগদাদে আসেন। এই সময় তিনি হযরত জুনায়েদ বাগদাদী (রঃ)-এর কাছে একটি জটিল মাসআলার উত্তর জানতে চান। কিন্তু হযরত জুনায়েদ (রঃ) তাঁর প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে বললেন, তুমি খুব শীঘ্র ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলবে। হযরত মানসুর (রঃ) বলেন, আমি যেদিন ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলব। সেদিন আপনার অঙ্গেও এ সুফী পোশাকের পরিবর্তে মামুলী পোশাক দেখা যাবে।
দু’জনের ভবিষ্যাদ্বাণীই সফল হয়। পরবর্তীকালে, তাঁর আপাতঃ শরীয় বিরোধী কার্যকলাপের জন্য দেশের সমগ্র আলেম সমাজ যখন তাঁকে হত্যা করার ফতোয়া দেন, তখন কেবল হযরত জুনায়েদ (রঃ)-ই ফতোয়ায় সই করেননি। কেননা, তখন পর্যন্ত তিনি প্রকৃত সুফীই ছিলেন। সুতরাং তাঁর পক্ষে হযরত হাল্লাজ (রঃ)-এর হত্যার সিদ্ধান্তে সম্মতি পোষণ করা সম্ভব ছিল না। দেশের খলীফা বললেন, মানসুর (রঃ)-এর বিরুদ্ধে এ ফতোয়াকে যদি শুদ্ধ প্রমাণ করতে হয়, তবে হযরত জুনায়েদ বাগদাদী (রঃ)-এর স্বাক্ষর একান্ত জরুরী।
উপায়ান্তর না দেখে হযরত জুনায়েদ (রঃ) সুফীর পোশাক পরিত্যাগ করে খানকা থেকে মাদ্রাসায় চলে গেলেন। আর সেখানে প্রকাশ্য আলেমের পোশাক পরে ফতোয়ায় সই করলেন। তাতে তিনি মন্তব্যে লেখেন, প্রকাশ্য কাজকর্মের দিক থেকে মানসুর প্রাণদণ্ডের উপযুক্ত। আর ফতোওয়া প্রদান করা হয় সাধারণতঃ বিচার বা ব্যবস্থা অনুসারেই। গুপ্ত অবস্থা মানুষের জন্য দেখা সম্ভব নয়। তার বিচার ব্যবস্থা আল্লাহই করে থাকেন।
হযরত জুনায়েদ (রঃ)-এর কাছে মাসআলার উত্তর না পেয়ে হযরত হাল্লাজ (রঃ) মনে এত বেশী দুঃখ পান যে, তাঁকে কিছু না বলেই স-স্ত্রীক তশতরে চলে যান।
সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া
হযরত হুসাইন মানসুর হাল্লাজ (রঃ) – পর্ব ৩ পড়তে এখানে ক্লিক করুন