হযরত হুসাইন মানসুর হাল্লাজ (রঃ) – পর্ব ১

হযরত হুসাইন মানসুর হাল্লাজ (রঃ) আধ্যাত্ম জগতের এক বিস্ময়কর পুরুষ ছিলেন। তাঁর পাণ্ডিত্য ও বাগ্মিতা যেমন ছিল অসাধারণ, তেমনি তাঁর আধ্যাত্ম চেতনাও ছিল অপরিসীম। বহু গ্রন্থের প্রণেতা তিনি। কিন্তু বক্তব্য বিষয়ের গুঢ়ার্থ ছিল দুর্বোধ্য। এবাদতে তো কথাই নেই। তাঁর আল্লাহ্‌ প্রেমেরও কোন তুলনা ছিল না। আল্লাহ্‌ প্রেমে তিনি ছিলেন নিয়ত অস্থির। আল্লাহ্‌র বিরহ নলে তিনি দগ্ধ হয়েছেন দিন রাত। আর এজন্য জীবনে কষ্টও পেয়েছেন প্রচুর। শেষ পর্যন্ত নিজের অমূল্য প্রাণ উৎসর্গ করেছেন আল্লাহ্‌র ওয়াস্তে মানুষের হাতে।

মানুষ তাঁর কাজকর্মে বিরক্ত হতেন। তাঁর বহু কাজে আপত্তি ছিল সুফী দরবেশগণেরও। তারা সে সবের প্রতিবাদ করতেন। তাঁর চলাফেরা, কথাবার্তার মর্ম উপলদ্ধি করতে না পেরে তারা বলতেন, তাসাওউফে তাঁর কোন দখল নেই। অবশ্য হযরত আবদুল্লাহ খাফীফ (রঃ), হযরত শিবলী (রঃ), হযরত আবুল কাসেম নসরাবাদী (রঃ), ইবনে আতা (রঃ) প্রমুখ প্রাখ্যাত তাপসগণ তাঁকে উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন দরবেশ বলে মনে করতেন। আবার অনেকে তাঁকে কাফের বলেছেন। তাঁর ওপর অত্যাচার করেছেন। অনেকে বলেন, তিনি ছিলেন ইত্তেহাদী। সৃষ্টি ও স্রষ্টার মধ্যে কোন পার্থক্য দেখতে পেতেন না। মূলত এই গূঢ়তত্ত্ব সাধারণ মানুষের বোধগম্য নয়। বাগদাদের কিছু লোক হাল্লাজী বা তাঁর অনুসারী বলে দাবী করতেন আর নানা অপকর্মে লিপ্ত হতেন।

তিনি একবার বলেছিলেন ‘আনাল হক’। অর্থাৎ আমিই আল্লাহ্‌। তাঁর ওপর যে অকথ্য জুলুম হয়, তাঁর কারণই হল এ উক্তি। কিন্তু বর্তমান গ্রন্থকার হযরত ফরীদ উদ্দীন আত্তার (রঃ) বলেন, আমি এটাকেই অত্যন্ত আশ্চর্য মনে করি যে, হযরত মূসা (আঃ) যখন তূর পর্বতে আল্লাহ্‌র জ্যোতি দর্শন করেন, তখন গাছ থেকে ‘ইন্নী আনাল্লাহ’ নিশ্চয় আমি আল্লাহ্‌ এই শব্দ শোনা গিয়েছিল। বলা হয়, এ আওয়াজ ছিল স্বয়ং আল্লাহ্‌র, গাছের নয়। তা হলে হযরত মানসুর হাল্লাজের (রঃ) মুখ থেকে যখন ‘আনাল হক’ কথাটি বের হয়, তখন কেন বলা হবে না তাঁর মুখের বাণীটি আসলে আল্লাহ্‌র বাণী। হযরত হুসাইন মানসুর হাল্লাজ (রঃ) মুখের কথা নয়। হযরত ফরীদ উদ্দীন আত্তার (রঃ) আর বলেন, তাঁর বেলায়ও তো বলা যেতে পারে যে, তাঁর জবানে খোদ আল্লাহই ‘আনাল হক’ কথাটি উচ্চারণ করেছেন। এটি হযরত হাল্লাজ (রঃ)-এর কথা নয়। তিনি নিজে আল্লাহ্‌ হওয়ার দাবীও করেননি।

হযরত শায়খ ফরীদ উদ্দীন আত্তার (রঃ) বলেন, বাগদাদ শহরে হুসাইন মানসুর নামে এক জাদুকর ছিল, কেউ কেউ তাঁর সঙ্গে তাপসকে গুলিয়ে ফেলেছেন। আসল ঘটনা কিন্তু অন্য রকম। জাদুকরের জন্ম ওয়াসেত শহরে আর মানসুর হাল্লাহর (রঃ) বাস করতেন বাগদাদে।

যাই হোক, হযরত আবদুল্লাহ খফীফ বলেন, হুসাইন মানসুর (রঃ) আল্লাহ্‌র মারেফাতে জ্ঞানী ছিলেন। হযরত শিবলী (রঃ) বলেন, হযরত মানসুর হাল্লাজ (রঃ) ও আমি- আমরা দু’জন একই অবস্থায় লোক। পার্থক্য টুকু এই যে, আল্লাহ্‌র দাবীদার মনে করে মানুষ তাঁকে ধ্বংস করেছে, আর আমাকে পাগল মনে করে দূর করে দিয়েছে।

সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া

হযরত হুসাইন মানসুর হাল্লাজ (রঃ) – পর্ব ২ পড়তে এখানে ক্লিক করুন

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।