হযরত আবু আলী শাকীক বখলী (রঃ) – পর্ব ৩
হযরত আবু আলী শাকীক বখলী (রঃ) – পর্ব ২ পড়তে এখানে ক্লিক করুন
শ্রমজীবী মানুষের মতো মেহনত করে তিনি তাঁর জীবিকানির্বাহ করতেন। তা দেখে একজন ধনী ব্যক্তি বললেন, কাজ করে খাচ্ছেন বলে মানুষ আপনাকে হেয় চোখে দেখছে। তাঁর চেয়ে বরং আমি আপনাকে টাকা দেই। আপনি তা ইচ্ছামতো খরচ করুন। তিনি বললেন, যদি পাঁচটি জিনিসের ভয় না থাকত, তাহলে আপনার প্রস্তাবটি মেনে নেওয়া যেত। যেমন-
(১) আমাকে দান করলে আপনার টাকা কমে যাবে।
(২) আমার কাছে থেকে টাকা চুরিও যেতে পারে।
(৩) হতে পারে আমাকে টাকা দেওয়ার পর আপনার মনে কষ্ট হবে।
(৪) এমনও হতে পারে, আমার কোন ক্রটি হলে আপনি টাকা ফেরত নেবার চেষ্টা করবেন।
(৫) মৃত্যুর পর আমি যে খালি হাত সে খালি হাতেই হয়ে যাব।
এক ব্যক্তি এসে বললেন, আমি এবার হজ্জযাত্রার ইচ্ছে করছি। আমার জন্য দোয়া করুন। তিনি বললেন, আপনার পাথেয় আছে তো?
তিনি বললেন, হ্যাঁ, আমার চারটি জিনিস আছে। যথা-
(১) আমি কাউকে আল্লাহর চেয়ে বেশী দাতা মনে করি না।
(২) আমার দৃঢ় বশ্বাস যে, আমার জন্য নির্দিষ্ট রুজিতে কেউ ভাগ বসাতে পারবে না।
(৩) আল্লাহ সর্বস্থলে বিদ্যামান।
(৪) আল্লাহ আমার ব্যবস্থা সম্পর্কে সম্যক ওয়াকিফহাল।
তাঁর কথা শুনে হযরত শাকীক (রঃ) বললেন, হ্যাঁ, আপনার সম্বল আছে। আপনি হজ্জে যেতে পারেন। আশা করি, আল্লাহ আপনার বাসনা পূর্ণ করবেন।
একবার হজ্জযাত্রার সময় তিনি বাগদাদে আসেন। বাগদাদের খলীফা তখন হারুনুর রশীদ। তাঁর আগমনবার্তা পেয়ে তিনি পরিপূর্ণ ভক্তি ও বিনয় সহকারে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে আসেন এবং কিছু মূল্যবান উপদেশ প্রার্থনা করেন। তিনি বললেন, আপনি মনে করেন, আপনি খোলাফায়ে রাশেদীনের উত্তরাধিকারী। আল্লাহ পাক আপনার বিবেক, সততা ও ইনসাফ সম্বনদ্ধে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন।
আল্লাহ আপনাকে তরবারি, বেত্র-দণ্ড ও ধন-সম্পদ এজন্য দিয়েছেন যে, আপনি যে, আপনি ধন সম্পদ দ্বারা দ্বীন- দুঃখীদের সাহায্য করবেন। শরীয়তের বিধান যারা মানে না, বেত্র-দণ্ডের দ্বারা তাঁদের পথে আনবেন। যারা অন্যায় ভাবে হত্যাকাণ্ড ঘটায়, অস্ত্রে সে ঘাতকের শিরচ্ছেদ করবেন। আপনি যদি এ দায়িত্ব পালন না করেন, তাহলে রোজ কিয়ামতে আপনাকে জাহান্নামীদের বানিয়ে দেওয়া হবে। আপনার উপমা সমুদ্র। আর আপনার অমাত্যবর্গ ও রাজকর্মচারীরা হলেন তা থেকে বর্হিগত শাখানদী। অতএব ন্যায়নিষ্ঠ শাসনই অবশ্য কর্তব্য, যাতে আপনার কর্মচারীরাও ন্যায়ানুবর্তী হয়।
তারপর খলীফা হারুনুর রশীদের জিজ্ঞেস করলেন, মনে করুন, আপনি রয়েছেন ধু-ধু এক মরুর তাপদগ্ধ মধ্যাহ্নে, পিপাসার্ত হয়ে ছটফট করছেন, অথচ কোথাও এক ফোঁটা পানি নেই। তখন যদি কেউ এসে আপনাকে বলে, আপনার অর্ধেক রাজত্ব লিখে দিলে এক গ্লাস পানি দিতে পারি, তখন প্রাণ রক্ষার তাগিদে আপনি কি তা দিতে রাজি হবেন? খলীফা বললেন, নিশ্চয়ই। তখন আবার প্রশ্নঃ ঐ পানি পান করার পর আপনার প্রস্রাব যদি বন্ধ হয়ে যায়, প্রবল বেগ থাকা সত্বেও প্রস্রাব যদি নির্গত না হয়, তখন এ ক্লেশ দূর করে দেওয়ার বিনিময়ে যদি কোন চিকিৎসক বলেন যে, আপনার রাজ্যের বাকী অধাংশ দিতে হবে, তখন কি আপনি রাজি হবেন?
খলীফা আবারও উত্তর দিলেন, নিশ্চয়ই। কেননা, ধন-মান-রাজ্য সব কিছুর চেয়ে প্রাণের মূল্য অনেক বেশী। হযরত শাকীক (রঃ) এবার বললেন, তাহলে বুঝুন, যে রাজ্য, সম্পদ পানির মুল্যে বিক্রি হয়ে যায়। তা কিছুতেই গৌরবের বস্তু নয়।
তাঁর এ কথা শুনে খলীফা হারুনুর রশীদ অনেকক্ষণ ধরে কাঁদলেন। তারপর তাঁর কাছে থেকে বিদায় নিয়ে ধীরে ধীরে চলে গেলেন। হযরত শাকীক (রঃ) আবার মক্কায় চলে গেলেন। সেখানে তাঁকে ঘিরে অসংখ্য মানুষের ভিড়। তিনি তাঁদের বললেন, এখানে রুজির সন্ধান করা নির্বুদ্ধিতা। মক্কায় তখন অবস্থান করছেন হযরত ইব্রাহীম (রঃ)। হযরত শাকীক (রঃ) তাঁকে জিজ্ঞেস করেন, আপনি এখানে জীবিকার ব্যাপারে কি করেন? তিনি উত্তর দেন, খাবার পেলে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি, না পেলে ধৈর্য্যধারণ করি। এবার প্রশ্ন করলেন হযরত আদম (রঃ)- এ ব্যাপারে আপনি করেন? তিনি জবাব দিলেন, আমার হাতে কিছু এলে ধৈর্যধারণ করি। তাঁর উত্তর শুনে হযরত ইব্রাহীম (রঃ) স্বস্নেহ তাঁর মাথায় চুমু দিয়ে বললেন, আপনি আমার গুরু।
সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া
হযরত আবু আলী শাকীক বখলী (রঃ) – শেষ পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন