প্রতিহিংসা— দ্বিতীয় অংশ

 

আর কাকু ও তখন জব্দ। হিঃ…..হিঃ…..হিঃ… সে বেশ মজা ।

‘টিকিট পেয়েছিস’?

‘না। দেখছি’।

‘দেখ। কনফার্ম কর দেখে নিয়ে, প্লীজ। এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইট তিনটেয়। মোটে তো দেড় ঘন্টা লাগে। গাড়ি থাকবে এয়ারপোর্টে’।

আমার কিন্তু বেশ মায়া হোল কাকুর জন্য এ’বার।

আমি গিয়ে কাকুকে বললুম-‘ তুমি না কাকু, আমাকে এখন দাও কম্পুটার। আমি ডাউনলোড, প্রিন্ট সব করছি টিকিটের। তুমি রান্না কর গিয়ে আর বলো, যদি যেতে চাও তবে ট্রলি ব্যাগ আর অ্যাটাচি ও গুছিয়ে নি আমি’।

আমার ঝকঝকে মুখের দিকে খানিকক্ষণ চেয়ে থেকে কাকু একটু বিরক্তভাবে বলল -‘যাবো, আর কি উপায়? কি জ্বালাতন রে বাবা। দাদার পুলিশী ডিটেকটিভগিরির চাকরির না কাঁথায় আগুন। ছ্যা…তবে তুমি আমাদের জিনিষপত্র– কম্পাস আর মেটাল ডিটেক্টারগুলো কিন্তু সঙ্গে নিয়ে নিও। আর চেক ইন লাগেজে ঢুকিয়ে রেখো, কেবিন হ্যান্ডব্যাগে নয় কিন্তু।

আমার কেবিন ট্রলিতে তোমার প্রসাধন সামগ্রী ও তো নিতে হবে। আমার সব কাজেই দেখি বাগড়া পড়ে…..কি গেরো রে বাবা……………’’
আমি আবার হিঃ…….হিঃ…….হিঃ…. করে হেসে দিলাম শুনেই । কাকু ও না দারুণ ছেলে একটা। যখন যা মাথায় ঢুকলো তাই নিয়েই চঞ্চলের মতন ব্যস্ত হয়ে থাকে আমার কাকু। আর হবে না কেন ছেলেমানুষ কাকু? বয়স তো মোটে পঁচিশ বছর।

তা কাকু আমাকে এক্কেবারে চঞ্চলের মতন একটা রাজ পুত্তুর ছেলে সাজিয়ে নিয়ে ঠিক এগারোটার সময় ট্যাক্সি ধরে রওনা হ’লো। বেলা একটায় এয়ারপোর্টে গিয়ে এন্ট্র্যান্সে টিকিট আর আই০ ডি০ দেখিয়ে ঢুকে সামনেই একসারি নরম গদির কালো চেয়ার দেখে গিয়ে খানিক বসে কেবিন ব্যাগ গুছিয়ে নিলো, কাকু।

এয়ারপোর্টে ঢুকে আর পকেটে কিছু তো রাখাই যায় না সিকিউরিটি চেকিংয়ের ঠ্যালায়। কেবিন ব্যাগেজে ও নানান ঝামেলা করে। এটা নিতে পারবে না, ওটা বার করে দাও….জ্বালাতনের একশেষ। ছোট্ট মেটাল ডিটেক্টারটা তো আমি ট্রলি লাগেজে ঢুকিয়েছি, তাই রক্ষা। আগে প্রথম যে বার আসে তখন তো কাকু এয়ারপোর্টের সব নিয়ম কানুন জানতোই না। তখন নতুন লাগেজ চেন, ছোট কাঁচি, সেভিং ব্লেড, মিনারেল ওয়াটারের নতুন কেনা ভর্তি বোতল… অনেক কিছু খুইয়েছে। তাই কাকু খুব সাবধানী এখন আর এই বায়ুপথ যাত্রায় মোটেই রাজী হ’তেই চায় না।

কাকু লম্বা লাউঞ্জের শেষের দিকে গিয়ে বাথরুম হ’য়ে এসে সেকেন্ড গেটে একটু পরে গেলো। বেনারসের লাল বাহাদূর শাস্ত্রী এয়ারপোর্টেই মাত্র এই ডবল এন্ট্রি সিস্টেম আছে।

তারপরে এক্সরে করিয়ে চেক ইন লাগেজ জমা দিয়ে দুটো বোর্ডিং পাশ হাতে নিয়ে সিকিউরিটি চেকিং সেরে একঘণ্টা বসে থাকবার পরে দু’নম্বর গেটের জন্য গেট কল হয়ে যেতে তখন কাকু আমার চকচকে হাত ধরে গিয়ে চলন্ত সিড়িতে উঠলো।

তারপরে আবার কোলাপসিবল গেটের সামনে গিয়ে থাকো বসে। গয়া থেকে ফ্লাইট সবে এসেছে। প্যাসেঞ্জার ও লাগেজ নামছে। সব শেষ হ’লে তখন না আমাদের ডিপার্চার গেট খুলবে। তখন লাইন দিয়ে বোর্ডিং পাশ মেশিনে চেক করিয়ে ছাড়পত্র পেলে তবে প্লেনের কানেক্টিং প্যাসেজের সরু আর ঢালু পথ দিয়ে গিয়ে প্লেনের দরজায় আর একবার পাশ দেখিয়ে কাউন্টার পার্টটা জমা দিয়ে তখন না প্লেনের পেটে ঢোকা। সে কি সহজ কাজ? কাকুর ভাষায় তার চেয়ে ততক্ষনে একটা খুনের রহস্যের কিনারা করে ফেলা অনেক সহজ।

কে জানে বাবা? আমার তো দু’টোই কঠিন বলে মনে হয় বেশ। কাকুর কথা অবশ্য আলাদা। খুব বুদ্ধি কাকুর। খামোকা কেন যে বড় কাকু আমাকে বলে মাষ্টার বন্ড, তা কে জানে?

তা ফ্লাইটটা মন্দ নয়। বেশ একটু জলখাবার ও পেলুম খেতে। স্পাইসজেটে তো সে’টুকু ও দেয় না। বাজে। প্লেনটা রানওয়েতে পৌঁছে সোজা একছুটে দিব্যি সোঁ করে আকাশে উঠে গেলো। সোজা পঁয়ত্রিশ হাজার ফিট। মেঘ টেঘ মানে বাদলকে ছাড়িয়েই গেল। একঘন্টা বিশ মিনিট পরে ঘড়ড় ঘড়ড় ঘড়ড় ঘড়ড় শব্দ করে প্লেনের চাকা দিল্লীর মাটি ছুঁয়ে নিলো।

লাগেজ নিয়ে গেট দিয়ে বেরিয়ে এসে কারে চড়ে যখন যথাস্থানে গিয়ে হাজির হ’লুম আমরা, তখন রাত হয়ে গেছে, প্রায় সাতটা বাজে। জায়গাটা এয়ারপোর্ট থেকে বেশ খানিকটা দূরে। কি গ্রীন পার্ক না গার্ডেন না কি যেন নাম। বড় বড় গেটওয়ালা সব বাড়ী। বড়লোকের পাড়া। যে খানে গাড়ী থেকে আমরা নামলুম সেই বাড়িখানা ও বেশ বড় আর কে একজন ডঃ সানিয়েল সেই বাড়ির মালিক।

বড় কাকু আর একজন মনে হয় পুলিশের কেউ ছিলেন গেটে আমাদের অপেক্ষায় বাড়ির মালিক ছাড়া ও। আর ও একজন ছিলেন সাথে। দেখতে বেশ শীর্ণ চেহারার ভদ্রলোক। নাম অবিনাশ। বাড়ির মালিকের দূরসম্পর্কের ভাই। এই বাড়িরই তিনতলার বাসিন্দা। বড় কাকু মানে চঞ্চলের বাপী পরিচয় করিয়ে দিলেন।

সাদা পোষাকের সবল চেহারার ভদ্রলোক ও সি মিঃ মিত্তল। অবিনাশ না কি আসামী রূপে সাসপেক্টেড। ওসি নিজেই তাকে ধরেছেন। আরো একজন সাসপেক্ট ও না কি আছেন।

এ তো বেশ মজা।

গল্পের তৃতীয় অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন

"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভানুধ্যায়ী এবং সম্মানিত অবদানকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

দুঃখিত!