খুনের আগে খুন– দ্বিতীয় অংশ

অনিতামাসি প্রমথর মায়ের দূর-সম্পর্কের বোন। আমার সঙ্গে ওঁর পরিচয় আমেরিকাতে। প্রমথর কাছে ওঁর সম্পর্কে যতটুকু জেনেছি, সেটা হল বিয়ের পরপরই উনি বরের সঙ্গে আমেরিকায় চলে যান। সেখানেই ওঁদের একটি মেয়ে হয়; দুঃখের কথা, মেয়েটি বেশি দিন বাঁচে নি – বছর পাঁচেক বয়সে মারা যায়। তার অল্প কিছুদিনের মধ্যেই অনিতামাসির বর মণ্টুমেশো একটি কম বয়সী নার্সের প্রেমে পড়ে বাড়ি ছেড়ে চলে যান। সে নিয়ে অনেক কেলেঙ্কারি হয়েছিল। পরে ওঁদের ডিভোর্স হয়ে যায়। মণ্টুমেশো ডাক্তার ছিলেন, সুতরাং বেশ ভালোই খেসারত পেয়েছিলেন অনিতামাসি। এরপর উনি একটা স্কুলে কাজ নেন। সেখানে বোধহয় বছর দশেক কাজ করেন। আমি যখন ওঁকে দেখি, তখন উনি স্কুলের চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন। বাড়ি বিক্রি করে পাকাপাকি দেশে এসে থাকার প্ল্যান করছেন। সে প্রায় আট বছর আগের কথা। তারপর আমরাও দেশে ফিরে এসেছি, কিন্তু যোগাযোগ আর হয় নি। এরমধ্যে, একদিন হঠাত্ করে অশোক রায়ের সঙ্গে দেখা। অশোক নিউ ইয়র্কে আমাদের সঙ্গে আড্ডা দিতে প্রায়েই আসতো। ও ছিল কুইন্স আর ব্রুকলিনের বাঙালী গ্রুপের সঙ্গে আমাদের যোগসূত্র। নিউ ইয়র্কের এই দুটো পাড়া দুদিকে হলে কি হবে, হেন লোক নেই অশোককে চিনতো না। হ্যাণ্ডসাম চেহারা, কথায়বার্তায়ও চৌকশ – নিউ ইয়র্কের সব বৌদিদের প্রিয়পাত্র। একদিন দীপাবৌদির বাবা-মা-কে নিয়ে নায়গ্রা যাচ্ছে, একদিন কবিতাবৌদির বাচ্চাদুটোকে নিয়ে ব্রঙ্কস জু-তে যাচ্ছে। সবিতাবৌদি মল-এ গিয়ে টুকটাক জিনিস কিনতে ভালোবাসেন, কিন্তু বর দ্বিজেনদা কিছুতেই মল-এ যাবেন না। সুতরাং অশোককে ছাড়া সবিতাবৌদির চলে না।
প্রমথ একদিন দ্যুম করে বলেই ফেলল, “হ্যাঁরে, অশোকটা লম্পট নাকি রে? সব বৌদিদের সঙ্গে এতো ভাব – ফষ্টিনষ্টি করছে নিশ্চয়! “
“কী যে বলেন স্যার “, একেনবাবু বললেন। “এরকম একজন পারফেক্ট জেণ্টেলম্যান!“
“কিরকম গোয়েন্দা মশাই আপনি, ইনভেস্টিগেট না করেই কনক্লুশন ছাড়লেন।“
“তুই, ইনভেস্টিগেট কর না, ওঁকে জ্বালাচ্ছিস কেন? “
ফ্র্যাঙ্কলি, প্রশ্নটা আমার মাথাতেও এসেছিল বটে। থার্টি ফার্স্ট-এ কল্লোল ক্লাবের ফাংশানে অমিতাবৌদি যেরকম ঘন হয়ে অশোকের সঙ্গে নাচছিলেন, সেটা সবারই চোখে পড়েছিল। এটা ঠিক যে, অমিতাবৌদি সেদিন একটু টিপসি হয়ে গিয়েছিলেন। ইনফ্যাক্ট, অমিতাবৌদি আমার আর প্রমথর সঙ্গেও নেচেছিলেন। আমি খুব সতর্ক হয়ে ওঁর শরীর থেকে যতদূর ফাঁক রেখে নাচা সম্ভব, সেইভাবেই নাচছিলাম। উনিই আমাকে ধমকালেন, “বাপি, এতো স্টিফ হচ্ছ কেন, আমি কি তোমায় খেয়ে ফেলবো! “
সেই অশোক এখন কলকাতায় মাঝেমাঝেই আসে। একটা ইমপোর্ট এক্সপোর্টের বিজনেস করছে। আমাদের দুপুরবেলা খেতে ডেকেছিল ওর বাড়িতে। একেনবৌদি হুটহাট কোথাও গিয়ে খেতে চান না। তাই আমরা তিনজনই গেলাম, যদিও প্রমথর ঘোরতর আপত্তি ছিল। “থাকে তো একা, কি হাবিজাবি খাওয়াবে কে জানে।“ কিন্তু আমাদের চাপে পড়ে ব্যাজার মুখ করে এলো।

গল্পের তৃতীয় অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন

দুঃখিত!