হযরত আবু আমর নাখীল (রঃ) – পর্ব ১
উচ্চস্তরের সূক্ষ্ণ তত্ত্বদর্শী তাপস ছিলেন হযরত আবু আমর নাখীল (রঃ)। তাঁর ত্যাগ-তিতিক্ষা কিংবদন্তী স্বরূপ। চিন্তা প্রকাশে তাঁর দৃঢ়তাও ছিল বিষ্ময়কর। খোরাসনের নিশাপুর ছিল তাঁর বাসভূমি। তিনি হযরত জুনায়েদ বাগদাদী (রঃ)-এর সমসাময়িক ছিলেন। হযরত আবু ওসমান (রঃ) ছিলেন তাঁর মুর্শিদ।
হযরত শায়খ আবুল কাসেম নসরবাদী (রঃ) গজল শুনতে খুব ভালোবাসতেন। হযরত আবু আমর (রঃ) তাঁকে জিজ্ঞেস করেন, আপনি গজল শোনেন কেন? উত্তরে আবুল কাসেম (রঃ) বলেন, বসে বসে পরনিন্দা শোনার চেয়ে গজল শোনা অনেক ভালো। তিনি বলেন, গজল শুনতে গিয়ে আপনি যদি একটা অবৈধ কাজ করে বসেন তো, সেটা শত বছরের পরনিন্দা অপেক্ষাও জঘন্য ব্যাপার।
শোনা যায়, হযরত আমর (রঃ) প্রতিজ্ঞা করেন, চল্লিশ বছর পর্যন্ত আল্লাহর সন্তুষ্টি ছাড়া তিনি তাঁর কাছে আর কিছু চাইবেন না। আবদুর রহমান নামে এক ধার্মিক ব্যক্তির সঙ্গে তিনি তাঁর কন্যার বিবাহ দেন। একবার কন্যা দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়। কোন চিকিৎসা তাঁকে-সুস্থ করতে পারলেন না।
তখন আবদুর রহমান তাঁর স্ত্রীকে বললেন, তোমার এ অসুখের চিকিৎসা একমাত্র তোমার পিতাই করতে পারেন। অর্থাৎ তিনি যদি একটি পাপ কাজ করতে রাজি থাকেন, তা হলে তুমি ভালো হয়ে যেতে পার। কথাটা তিনি খুলেই বললেন, তাঁর পিতা আল্লাহর কাছে সন্তুষ্টি ছাড়া কিছুই চাইবেন না বলে প্রতিজ্ঞা করে বসে আছেন। সে প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করে তিনি যদি আল্লাহর কাছে তোমার আরোগ্য কামনা করেন, তা হলে কাজ হতে পারে।
সে কথা শুনে আবদুর রহমান (রঃ)-এর স্ত্রী ঐ রাতেই পালকি চড়ে বাপের বাড়ীতে গিয়ে হাজির। বিশ বছর পর মেয়েকে দেখে আবু আমর (রঃ) খুব খুশী। কিন্তু অত রাতে তাঁর আগমন ঘটল কেন, তা জানতে বড় কৌতূহল হল তাঁর। কন্যা কিছুক্ষণ ভূমিকা করলেন।
যেমন, তাঁর মতো পিতা ও আবদুর রহমান (রঃ)-এর মতো স্বামী পেয়ে সে ধন্য, ইত্যাদি। তারপর মানুষের প্রাণ যে কত প্রিয় বস্তু তাও উল্লেখ করলেন। শেষে জানালেন তিনি রোগাক্রান্ত। কোন চিকিৎসায় কাজ হয়নি। এখন তিনি যদি প্রতিশ্রুতি লঙ্ঘন করে আল্লাহর দরবারে তাঁর জন্য দোয়া করেন, তা হলে তিনি সেরে উঠতে পারেন। কন্যার কথা শুনে তিনি বললেন, তাঁর দোয়ায় আজ কাজ হলেও কাল তো মৃত্যুর মুখোমুখি হতেই হবে। সুতরাং প্রতিজ্ঞাভঙ্গ জনিত পাপ কর্মে তাঁকে লিপ্ত না করাই উচিত । তিনি যদি প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করেন, তা হলে কন্যাটি তাঁর কুসন্তান হিসেবে গণ্য হবে।
কন্যা আর কী করেন। আশাহতচিত্তে বাপের কাছ থেকে বিদায় নিলেন। মৃত্যু যে নিকটবর্তী, সে সম্বন্ধে তাঁর আর কোন সংশয় রইল না। পিতা বললেন, যদি তেমন হয়েই থাকে, তা হলে তিনি গিয়ে তাঁর জানাজা পড়ে আসবেন। কিন্তু আশ্চর্য, স্বামীর বাড়ীতে পদার্পণ করা মাত্র তিনি সম্পূর্ণরূপে সুস্থ হয়ে উঠলেন। শোনা যায়, পিতার মৃত্যুর পরও চল্লিশ বছর তিনি বেঁচে ছিলেন।