হযরত শায়েখ মুহাম্মদ আলী হাকীম তিরমিজি (রঃ) – শেষ পর্ব
হযরত শায়েখ মুহাম্মদ আলী হাকীম তিরমিজি (রঃ) – পর্ব ৩ পড়তে এখানে ক্লিক করুন
হযরত মুহাম্মদ আলী (রঃ)-এর উপদেশবাণী ছিলঃ
১. বিশুদ্ধ চিত্তে যিনি এবাদত করেন, তিনি এমন উচ্চ মর্যাদার অধিকারী হন যে, মানুষ তাঁকে যথেষ্ট শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শন করে তাছাড়া তিনি নিজের রিপুকে নিয়ন্ত্রণ করে আল্লাহর গুঢ় তত্ত্ব প্রকাশ করতে থাকেন।
২. রিপু ইবলিসের কাজ করে। অতএব তার থেকে সদা-সর্বদা সতর্ক থাকা দরকার। ইবলিস থেকেই নফসের উৎপত্তি। তাই দুইয়ের সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য। প্রসঙ্গ ক্রমে একটি ঘটনা উল্লেখ করা হয়।
হযরত আদম (আঃ) ও হযরত হাওয়া আল্লাহর মার্জনা পাওয়ার পর যখন পুনরায় একসঙ্গে বসবাস শুরু করেন, তখন হযরত আদম (আঃ)-এর অনুপস্থিতিতে ইবলিস হযরত হাওয়ার কাছে হাজির হয়ে বলল, আমার পুত্র খান্নাসকে কিছুক্ষণের জন্য আপনার কাছে রেখে গেলাম। পরে এসে তাকে নিয়ে যাব। হযরত আদম (আঃ) ফিরে এসে ইবলিস তনয়কে দেখতে পেলেন। আর রাগে ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে টুকরো টুকরো করে কেটে গাছের ডালে ঝুলিয়ে দিলেন। আর হযরত হাওয়ার ওপরও তিনি অসুন্তুষ্ট হলেন। ইবলিসের পুত্রকে কেন তিনি জায়গা দিলেন? তার শত্রুতার কথা তিনি কি ভুলে গেছেন? ইত্যাদি।
কি একটা কাজে তিনি আবার বাইরে গেলেন। আর ইবলিস সেই ফাঁকে আবার এসে হযরত হাওয়াকে খান্নাসের কথা জিজ্ঞেস করল। হযরত হাওয়া সব কথা খুলে বললেন। তাতে ইবলিস চটল বটে, কিন্তু সেটা বুঝতে না দিয়ে খান্নাস বলে ডাক দিল। আর ডাক দেওয়া মাত্র তার খণ্ডিত দেহাংশ জোড়া লেগে আস্ত জ্যান্ত খান্নাসের অবয়বে দাঁড়িয়ে গেল। আর ইবলিস আবারও হযরত হাওয়ার ইচ্ছার বিরুদ্ধে খান্নাসকে সেখানে রেখে চলে গেল। একটু পরে হযরত আদম (আঃ) ফিরলেন। আবারও সে একটা ঘটনা। এবার খান্নাসকে হত্যা করে পুড়িয়ে ছাই করে ফেললেন। সে ছাইয়ের অর্ধেক উড়িয়ে দিলেন আকাশে, বাকী অর্ধেক মিশিয়ে দিলেন সমুদ্রের পানিতে। আবার তিনি বাইরে গেলেন। আবার ইবলিসের প্রবেশ ঘটল।
খান্নাসের পরিণত থেকে এবারও সে ঘাবড়ে গেল না। তার নাম ধরে ডাক দিল। আর আকাশে ও সমুদ্রে নিক্ষিপ্ত ছাই একত্রিত হয়ে জীবন্ত খান্নাসের অবয়ব ধারণ করল। আর এবারও হযরত হাওয়ার অনুমতি ছাড়াই খান্নাসকে সেখানে রেখে সে চলে গেল। পরবর্তীতে খান্নাসের পরিণতি হল এই যে, তাকে এবার টুকরো টুকরো করে কেটে রান্না করা হল। আর হযরত আদম (আঃ) ও হযরত হাওয়া দুজনে তা খেলেন। ইবলিস এ কথা জানতে পেরে খুব খুশী। কেননা, সে এটাই চেয়েছিল। কেননা, তার সৃষ্টির উপাদান বংশানুক্রমে মানুষের বুকে বেঁচে রইল। অর্থাৎ, প্রতিটি মানব সন্তানই ইবলিসের পথে প্ররোচিত হবার প্রেরণা ভেতর থেকেই লাভ করবে। তাতে ইবলিসের পরিশ্রম বেশ কমে যাবে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক কুরআনে বলেছেন, সেই খান্নাস, যে কুমন্ত্রণা দেয়া মানুষের হৃদয়ে।
৩. আল্লাহ যাকে তার নিজের দিকে আকৃষ্ট করেন, তার মর্যাদাও বৃদ্ধি করেন।
৪. মকবুল দাস তিনিই যিনি আল্লাহর ধ্যানে তন্ময় হয়ে আল্লাহতেই নিজেকে বিলীন করে দেন।
৫. তিনিই আশীষধন্য যিনি তওবা করে আল্লাহর পথ অনুসন্ধান করেন।
৬. আল্লাহতে ধ্যানমগ্ন সাধক কয়েক শ্রেণীর। যথাঃ (ক) নবুয়তের এক-তৃতীয়াংশ মর্যাদাপ্রাপ্ত, (খ) নবুয়তের অর্ধেক মর্যাদাপ্রাপ্ত, (গ) নবুয়তের অপেক্ষা কিছু বেশী অগ্রসর হয়ে খাতেমু আওলিয়ায় পরিণত হয়ে যান।
হযরত মুসান্নেফ (রঃ) বলেন, যদি প্রশ্ন তোলেন, ওলীদের নবুয়তের মর্যাদা কিভাবে লাভ করা যায়? তো তার জবাবে রাসূলুল্লাহর (সাঃ) উক্তির স্মরণ করতে হবে। রাসূল (সাঃ) বলেন, সত্য স্বপ্ন নবুয়তের চল্লিশ ভাগের এক ভাগ। তাছাড়া যে বৈধ জীবিকা আহরণ করে, বিশুদ্ধ জীবন যাপন করে, তাকে নবুয়তের দরজাসমূহের এক দরজা দান করা হয়।
৭. প্রকৃত আওলিয়া উপবাসকে ভয় করেন না।
৮. যে পবিত্র কুরআন বুঝতে অক্ষম, তাকে জ্ঞানী বলা যায় না।
৯. রোজ কিয়ামতে হক্কুল এবাদের কোনরূপ দায়-দায়িত্ব জড়িত হবে না, প্রকৃত পরহেজগার সে-ই।
১০. মর্যাদাবান সে লোক, যাকে কোন পাপের কারণে অপদসস্থ হতে হয়নি।
১১. কোন লোভ-লালসা যার নেই, সে স্বাধীন, যে ইবলিসের কাছে দুর্বল নয়, সে আমীর। আর যে শুধু আল্লাহর উদ্দেশ্যে রিপুর সাথে শত্রুতা করে সে হল প্রকৃত জ্ঞানী।
১২. উপাসনার বিষয়ে যে খোঁজ-খবর রাখে না, তার নিজ প্রতিপালক সম্পর্কেও কোন খোঁজ-খবর নেই।
১৪. নিজের আত্মার পরিচয় জানা আল্লাহকে জানারই একটি উপকরণ।
১৫. একটি রিপু শতাধিক শয়তানের চেয়েও ভয়ঙ্কার।
১৬. আল্লাহই রুজিদাতা। অরএব, তাঁর ওপর নির্ভর করা দরকার।
১৭. আল্লাহ ছাড়া কারও শোকর করো না। আর কারও সামনে অবনত হয়ো না।
সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া
হযরত শায়েখ মুহাম্মদ আলী হাকীম তিরমিজি (রঃ) – পর্ব ১ পড়তে এখানে ক্লিক করুন