মোরগ রাজাঃ ষষ্ঠ কিস্তী

বিরিপুর রাজ্যে প্রবেশের দুটি পথ। একটি নদী পথ। আরেকটি স্থল পথ। রাজ্যের পূর্ব পাশে বয়ে চলছে বিরিধারা নদী। গিরিপুর পর্বতমালা হতে বের হয়ে বিরিপুরের পূর্ব সীমান্ত দিয়ে সমুদ্রে মিলিত হয়েছে বিরিধারা। বহির্বিশ্বের সাথে যোগাযোগের প্রধান উপায় এই বিরিধারা। পাশের গিরিপুরের সাথেও চলাচল, ব্যবসাবাণিজ্য মূলত এই পথেই। আর সেই যুগে স্থল পথের চেয়ে নৌপথই ছিল মানুষের অধিক পছন্দনীয়। তবে গিরিপুর ও বিরিপুরের মাঝে যে গিরিপুর পর্বতমালা আছে তাদিয়েও যাতায়াত করা যায়। তা বেশ কষ্টসাধ্য ও বিপদসংকূল।
মোরগ রাজা যুদ্ধ কৌশল নিয়ে বসলেন। আক্রমন কোন পথে হবে। তাঁর অরিজিনাল সৈন্যবাহিনীর সাথে যুক্ত হয়েছে রুন্ডি আর গিরিপুরের নতুন রিক্রুট করা বিপুল বাহিনী। পুরোদমে তাদের কে ট্রেইন আপ করে নিচ্ছেন সেনাধ্যক্ষগণ। রাজা সেনাপ্রধান ও উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন অধ্যক্ষদের নিয়ে বসলেন। যুদ্ধ কৌশন কি হবে এই হল এজেন্ডা। রাজা বললেন আমাদের মোরগ বাহিনী আমাদেরকে বিশেষ সুবিধা দিবে সন্দেহ নাই। তবে আমরা সবশ্যই শুধু মোরগ বাহিনীর উপর নির্ভর করব না। আমরা সব রকমের চিন্তাভাবনা করতে চাই। সব ধরনের সুবিধা অসুবিধা যাচাই করতে চাই। মোরগের সুবিধাকে আমি আমাদের জন্য অতিরিক্ত সুবিধা হিসেব দেখতে চাই। আমি আমরা এমন প্রস্তুতি নেব মোরগবাহিনী ছাড়াই আমরা জয় লাভ করব। রুন্ডি ও গিরিপুর আমাদের হাতে আসার পর আমাদের সক্ষমতা অনেক বেড়ে গিয়েছে। আমাদের সৈন্যবাহিনীকি কে দুভাগে বিভক্ত করে দুদিক থেকে আক্রমন করতে চাই। আমাদের একটা বাহিনী গিরিপর্বতমালার পশ্চিম কোল ঘেঁসে গিরিপুর পার হয়ে বিরিপুরের পশ্চিম সীমান্ত দিয়ে বিরিপুরে প্রবেশ করবে। আরেকটা বাহিনী বিরিধারা নদী হয়ে বিরিপুরের পূর্বদিক হতে প্রবেশ করবে। দুদিক থেকে আক্রমন করে আমরা পাখতুন কে হতভম্ভ করে দিতে চাই। আর গিরিপুরের সীমান্তে পাহারা আরো নিবিড় করা চাই। একটা কাক পক্ষীও যাতে বিরিপুরে প্রবেশ করতে না পারে। আরেক টা কথা মনে রাখবে জয় ছাড়া আমাদের আর কোন নীতি নাই। কোন ধরনের নিয়ম নীতি, ট্র‍্যাডিশন যা কিছুই আমাদের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে তা আমরা মানব না। যুদ্ধ জয়ের জন্য যা করা দরকার আমরা তাই করব। রাতে আক্রমন করা যাবে না, অতর্কিতে হামলা করা যাবে না, পিছন থেকে আক্রমন করা যাবে না এই সব বস্তাপঁচা আন্তর্জাতিক নিয়ম নীতি গোল্লায় যাক। দুনিয়া বিজয়ীদের, বিজিতদের জন্য না। নৌপথে তীরন্দাজ বাহিনী যাবে সব থেকে বেশি। দশ হাজার তীরন্দাজ বাহিনী। আর অন্যান্য সৈন্যমিলে দশ হাজার মোট বিশ হাজারের একটি বাহিনী যাবে গিরিধারা নদী দিয়ে। এদের ব্যাক আপ হিসেবে আর দশ হাজারের আরেকটি বাহিনী আসবে পেছন থেকে। অন্য দিকে এক লক্ষ্য সৈন্যের এক বিশাল বাহিনী দ্বারা বিরিপুর আক্রান্ত হবে পশ্চিম পাশ দিয়ে। বিশ হাজার তীরন্দাজ, দশ হাজার অশ্বারোহী বাহিনী, আর তিরিশ হাজারের পদাতিক বাহিনী। সৈন্যরা গিরিপুর সীমান্ত পার হয়ে বিরিরাজ্যে অগ্রসর হতে থাকবে।
আহলুন গুপ্তচর প্রধান মৌরসির নিকট থেকে মোরগ রাজার যুদ্ধপরিকল্পনার এ টুকুই জানতে পেরেছেন। এটুকুও বিশাল পাওয়া। তাছাড়া আরও পাওয়া যাবে। এই সংবাদ অনেক দামী আহলুনের জন্য। এখন ফাইনাল পরিকল্পনাতে প্রবেশ করতে হবে। পাখতুন, আহলুন এবং প্রধান সেনাপতি যুদ্ধের মূল পরিকল্পনা সেট করতে বসলেন। নিজেদের রাজ্যের ম্যাপ নিয়ে অনেক মাপ-ঝোঁক, হিসেব নিকেশ হল। প্রশিক্ষিত সৈন্যদের মাঝে, পাঁচ হাজার অশ্বারোহী বাহিনী, তিরিশ হাজার পদাতিক বাহিনী, আর দশ হাজার তীরন্দাজের এক সুবিশাল বহর। আর দেশের পুরুষদের সকলেই এক এক জন সৈনিক। পঁচিশ বছর পর্যন্ত তাদের বাধ্যতামূলক সামরিক ট্রেনিং তো নিতেই হয়। আহলুনের মতে মোরগ রাজার বিশাল বাহিনীর কথা শুনে আমাদের ভয় পেলে চলবে না। তার বাহিনি বলতে গেলে ভাড়াটে বাহিনী। গিরি আর রুন্ডি থেকে জোর করে ধরে নিয়ে আসা হয়েছে যুদ্ধের জন্য। আমাদের সৈন্যরা ভাড়াটে নয়। তারা দেশের জন্য যুদ্ধ করবে। যারা দেশের জন্য শহীদ হওয়াকে মনে করে অমিয় সুধা। আমাদের পুরো দেশটাই বলতে গেলে দুঃসাহসী সৈনিকদের বিশাল এক ক্যান্টনমেন্ট।
অবশেষ স্থির হল দশ হাজার সৈন্যের একটা বাহিনী বিরিধারা নদী দিয়ে অগ্রসর হবে। মোরগ রাজার বাহিনীকে কোনভাবেই বিরিপুরের সীমান্তে ঢুকতে দেয়া হবে না। ওরা অক্রমন করার পূর্বেই আমরা আক্রমন করব। আর আমাদের সৈন্যদের একটা গ্রুপ গিরিপর্বত মালায় অবস্থান নেবে। মোরগরাজার বাহিনী অগ্রসর হওয়া মাত্রই সামনে পেছনে দুদিক থেকে আক্রমন করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দিতে হবে। এদিকে রাজকুমারী শিরি একদল নারীদের কে নিয়ে এক বিশাল বহিনী তৈরি করলেন যাঁরা যুদ্ধক্ষেত্রে আহত সৈনিকদের চিকিৎসা সেবা দিবেন। তাঁরাও যুদ্ধক্ষেত্রে তাঁবুতে অবস্থান করবেন।
যুদ্ধের আগে রাজা পাখতুন বিরিজাতির উদ্দেশ্যে যে ভাষণ দেন তার কিছু অংশ তুলে ধরা হল। “হে বীরপ্রসু বিরিমাতার বীর সন্তানেরা, মোরগ রাজা নামের এক দূর্বৃত্ত আমাদের দিকে তাকিয়ে চোখ রাঙিয়েছে। কিন্তু আমি জানি তোমরা তার বিষদাঁত ভেঙে চুরমার করে দিবে। আমাদের সোনার রাজ্য আমরা কোনভাবেই একটা ধূর্ত, দুশ্চরিত্র, অত্যাচারি, অনাচারি শয়তানের হাতে তুলে দিব না। আমি জানি তোমাদের আছে পর্বত সমান দেশ প্রেম, বিরিমাতার প্রতি অপরিসীম ভালবাসা। তোমাদের জয় হবেই। তোমাদের সঙ্গবদ্ধ শক্তির নিকট শয়তানি শক্তির পরাজয় হবেই। মনে রাখবে, আমরা মানুষের পক্ষে, ন্যায়ের পক্ষে। এই দুনিয়ার ভাল-মন্দ, ন্যায়-অন্যায়, শুভ-অশুভ যাঁর হাতে তিনি অবশ্যই আমাদের সাহায্য করবেন। আমাদের হাতেই রচিত হবে অত্যাচারি, দুরাচার, দুর্মতি মোরগ রাজার করুন সমাধি।

গল্পের প্রথম অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন

"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভানুধ্যায়ী এবং সম্মানিত অবদানকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

দুঃখিত!