হযরত আহমদ মাসরুক (রঃ)
হযরত আহমদ মাসরুক (রঃ)- এর জন্ম শাহী বংশে। তিনি বাস করতেন বাগদাদ শহরে। আর অধিকাংশ সময় কাটাতেন কুতুবে মাদার (রঃ)-এর সাহচর্যে। তিনি নিজেও একজন বিখ্যাত কুতুব ছিলেন। বর্তমান যুগের কুতুব কে? এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি চুপ করে থাকেন। অর্থাৎ তিনি নিজেই এ যুগের কুতুব। তাই কথা বললেন না। তাঁর জন্ম তুস শহরে। কমবেশী চল্লিশ জন তাপসের কাছে তিনি অধ্যাত্ন জ্ঞানে পাঠ গ্রহন করেন। বিশেষ করে হযরত মুহাসেবী (রঃ) ও হযরত সাররী সাকতী (রঃ)- এর দরবারে এসে দীর্ঘক্ষণ কথাবার্তা বলেন। কথাগুলি খুবই বুদ্ধিদীপ্ত এবং বলার ভঙ্গিও ছিল বেশ আকর্ষণীয়।
ভাষা ছিল সরল, প্রাঞ্জল। কথা প্রসঙ্গে তিনি বললেন, আমার সম্বন্ধে আপনার মনে কোন সন্দেহ উঁকি দিলে নিঃসঙ্কোচে তা বলতে পারেন। তিনি বললেন, সন্দেহের কিছু নয়, তবে আমার মনে হয় আপনি একজন ইহুদী। আগন্তুক বৃদ্ধ প্রকৃতই ইহুদী ছিলেন। হযরত আহমদ মাসরুক (রঃ) – অলৌকিক শক্তির পরিচয়ে মুগ্ধ হয়ে তিনি তাঁর কাছে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হন। আগন্তুক বলেছিলেন, আমি বহু দেশ ভ্রমন করেছি, ভু লোকের সংস্রবে এসেছি। নানা ধর্মের খোঁজ নিয়েছি। কিন্তু সত্যি বলতে কি, কোন লোক বা ধর্মের মধ্যে বিশুদ্ধ সারবস্তু দেখতে পাইনি। অবশেষে আপনার দরবারে হাজির হয়েছি। আর আপনাকে পরীক্ষা করে খাঁটি ব্যক্তি হিসেবে পেয়েছি।
হযরত আহমদ মাসরুক (রঃ) তাঁর অনুসারীদের বলতেন। যথাঃ
১। যে ব্যক্তি আল্লাহকে ছেড়ে অন্য কিছুতে খুশী হয়, তার সব খুশী দুঃখ ও অখুশীতে পরিণত হয়। যে ব্যক্তি তার অন্তরকে আল্লাহর দিকে ফেরায়, তার সর্বাঙ্গ পাপ থেকে থেকে মুক্ত হয়।
২। যে ব্যক্তি আল্লাহর দ্বারা খুশী না হয়, সে সর্বদা দুঃখ ও অখুশীর কবলে আবদ্ধ থাকে।
৩। যে ধর্মনিষ্ঠ হয়েছে, সে সহজে সংসারবিরাগী হতে পারে।
৪। দুনিয়ার প্রতি আকৃষ্ট না হওয়াই হল প্রকৃত ধর্মনিষ্ঠা।
৫। বিশ্বাসীদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনই হল আল্লাহর প্রতি সম্মান প্রদর্শন। এ ধরণের সম্মান প্রদর্শনকারীরাই ধর্মনিষ্ঠার সীমায় উপনীত হয়ে থাকে।
৬। তওবার মাটিতে পা রাখার আগে অলৌকিকতার আশা করা মূর্খতার আসনে বসার নামান্তর।
৭। তওবার স্থান ঠিক করার আগে একীনের সন্ধান করা আর গাফিলতির প্রান্তরে বিচরণ করে উদ্দেশ্য সিদ্ধি করা একই কথা।
৮। আশা ও আকাঙ্খা থেকে ভয় ও নৈরাশ্য বেশী থাকা চাই। কেননা, জাহান্নাম অতিক্রম করেই জান্নাতে পৌঁছাতে হবে।
৯। আরীফ-ব্যক্তি আল্লাহর নৈকট্য প্রাপ্ত হলেই সর্বদা ভীত-সন্ত্রস্ত থাকে।
১০। মারেফাতের বৃক্ষ ফেকেরের পানি, গাফিলতির বৃক্ষ অজ্ঞতার পানি, তওবার বৃক্ষ লজ্জার পানি এবং মহব্বতের বৃক্ষ আনুকূল্যের পানি দ্বারা তরতাজা হয়ে থাকে।
১১। আকাঙ্খা পরায়ন ও প্রত্যাশী ব্যক্তির জন্য বেশী করে তওবা করা প্রয়োজন।
১২। অধিক পরিমাণে তওবা ছাড়া উদ্দেশ্য হাসিল করা অসম্ভব।
১৩। আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও দাসত্ব অবলম্বন করা যোহদের পরিপন্থী।
১৪। তোমরা যেদিন ভূমিষ্ঠ হয়েছ, সেদিন থেকেই তোমাদের মূল্যবান আয়ু ও অমূল্য সময় তিলে তিলে ক্ষয় হতে শুরু হয়ে গেছে।