আমার জন্ম গ্রামেই কিন্তু আমি ছোট বেলা থেকেই শহরে থাকি। বাসার সবাই শহরে থাকে। শহরে থাকতে থাকতে গ্রামের সব কু – সংস্কার গুলা ভুলেই গেছি। তবুই মা একটু একটু মনে করিয়ে দেয় এটা কর ওটা কর, এটা করলে এই হয় এটা করা যায় না, বিরক্ত লাগে কথাগুলা।
–
আমাদের গ্রাম হরিহর পুর এখানে বিশাল এক রাজবাড়ি আছে। রাজ বাড়ির পাশেই আমাদের বাড়ি। প্রায় ৯ বছর হয় গ্রামে যাই না। গ্রামের বাড়িতে আমাদের চাকর ছাড়া আর কেউ থাকে না। চাকর ই দেখাশুনা করে।
–
৯ বছর পর গ্রামের মাটিতে পা রাখলাম। বাস থেকে নেমেই দেখি আমাদের বাড়ির চাকর “তোতা মিয়া” আমার জন্য গাড়ি রেডি করে রেখেছে।বাস স্ট্যান্ড থেকে ৩ কিলোঃ যেতে হয়। বাড়িতে গেলাম গিয়ে দুপুরের খাওয়া করে বিশ্রাম নিতে আমার রুম এ গেলাম।
–
বিকেল বেলা চাকর এসে আমাকে অনেক কিছু বলল।যে রাতে নাকি এখানে কি রকম ভয়ানক আওয়াজ শোনা যায়। কখনো কান্নার আওয়াজ আবার কখনো কখনো কে যেন কি অদ্ভুত গান গাইছে। সবাই মনে করে রাজবাড়ি থেকেই আওয়াজ টা আসে। চাকর আরো বলে গেল রাতে রুম থেকে বের না হতে। জানতে পারলাম কিছুদিন আগে নাকি ৩ জন কোথায় যেন উধাও হয়ে গেছে। সবাই মনে করে ঐ রাজবাড়িতে ভুত আছে আর ঐ ভুত ই উধাও করেছে ৩ জন কে। আমার আবার এই সব এ একদম বিশ্বাস ছিল না। শহুরে ছেলে আমি তাই ভুত আছে এটা বিশ্বাস করতাম না। রাতের খাবার এনে দিয়ে চাকর চলে গেল। আর বলে গেল তারাতারি খেয়ে ঘুমাতে। আমি রাতের খাবার শেষ করে আমার রুম এ গিয়ে “চাদের পাহাড়” উপন্যাস টা নিয়ে একটু বসলাম।
–
তখন রাত ১ টা পার হয়েছে, হঠাৎ কোথা থেকে যেন অদ্ভুত আওয়াজ আসতে শুরু করল। আমি ওদিকে মন না দিয়ে পড়তেছিলাম। কিন্তু আওয়াজ টা আমায় খুব জালাতন করতে শুরু করল। ভাবলাম কিসের আওয়াজ তা জানতে হবে, এই ভেবে হাতে লাইট নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম।
–
২ তলায় আমার থাকার ব্যাবস্থা হয়েছিল, সেখান থেকে নেমে নিচতলায় আসলাম। এত বড় বাড়িতে আমি একা কেমন যানি ভেবেই একটু বুক টা কেমন করছিল। আস্তে আস্তে বাড়ির মুল দরজায় এসে দাঁড়ালাম। তখন আওয়াজ টা বন্ধছিল। আবার হঠাৎ কিছুক্ষন পর আওয়াজ শুরু, আওয়াজ টা রাজবাড়ি থেকেই আসছিল। আমাদের বাড়ি থেকে রাজবাড়ি বেশি দূর না ৩ মিনিটের রাস্তা। আস্তে আস্তে এগিয়ে যাচ্ছি রাজবাড়ির দিকে।
–
আমি তেমন একটা ভয় পেতাম না,তবুও কেন যানি আজ ভয় ভয় লাগছে। হেটে চলেছি লাইট হাতে আর চাকরের সেই কথাগুলো মনে পড়তেই বুক টা কেমন যানি কেঁপে উঠছে। তাও যেন কোন এক আকর্ষণ শক্তি আমাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে রাজবাড়ির দিকে।
–
হাটতে হাটতে এসে গেলাম রাজবাড়ির মুল দরজায়। অনেক পুরোনো রাজ বাড়ি ১০ বছর হয় কেউ থাকে না। শুনেছিলাম কোন এক কারনে রাজা এই বাড়ি ছেড়ে অন্য যায়গায় রাজ প্রাসাদ বানিয়েছে। আমি যখন মুল দরজায় দাঁড়িয়ে এইসব ভাবছিলাম তখন কোন আওয়াজ আসছিল না। আমি আস্তে আস্তে দরজার
ভেতরে ঢুকলাম কিছুদুর এগিয়ে যেতেই আবার সেই আওয়াজ।আওয়াজ টা ছিল কেমন যানি অদ্ভুত কান্নার আওয়াজ আবার কখনো বা অদ্ভুত ভাবে কবিতা আবৃতি করার আওয়াজ। রাজবাড়ি ৩ তলা। আমি ২ তলার উপরে উঠার জন্য সিড়িতে উঠলাম খুব আস্তে আস্তে যাচ্ছি, খুব ভয় লাগতেছে তাও ফিরে আসতে
পারছি না কে যেন আমাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে এই রকম মনে হচ্ছে। অর্ধেক সিড়িতে উঠার সাথে সাথে আমার হাতের লাইট টা মেঝেতে পড়ে ভেংগে গেল। এখন কি করব বুজতে পারতেছি না। আমার সাথে আর কোন প্রকার লাইট ই নেই যে। ফিরে আসব কিন্তু এতদুর এসে ফিরে যেতে কিছুতেই পারি না। চারপাশে অন্ধকার ঝাপসা আলোতে এগিয়ে চললাম। ২ তলায় উঠার সাথে সাথে আওয়াজটা আরো বেড়ে গেল। বুজতে পারলাম যা অনুমান করেছিলাম ঠিক তাই, রাজবাড়ির এক কক্ষ থেকে আওয়াজ টা আসতেছে। আমি অন্ধকারেই এগিয়ে চললাম ঐ কক্ষের দিকে। কক্ষের দরজা খুলে ভেতরে ঢুকতেই দরজা বন্ধ হয়ে গেল। আমি চিৎকার করলাম কিছু মুখ থেকে ১ টা ও আওয়াজ বের হলো না।
–
সামনের দিকে তাকিয়ে দেখি বিশাল ছুড়ি নিয়ে ২ জন দাড়িয়ে আছে আর তাদের ১ জনের গলা নেই গলার উপরের অংশ কাটা, আরেক জনের চোখ নেই। আমি সাথে সাথে মাটিতে পড়ে গেলাম।
–
যখন চোখ খুললাম তখন দেখি আমি বিছানায় শুয়ে আছি আর আমার মাথা দিয়ে রক্ত পরতেছে আর মাথা ব্যান্ডেজ করা এবং হাতে ব্যান্ডেজ করা।
–
চাকর “তোতা মিয়া ” আমাকে বলল। সাহেব আপনি রাজবাড়িতে গেলেন ক্যামনে। আমি সকাল এ উঠে আপনাকে খুজে পাই না অনেক খোজার পর রাজবাড়ির মুল দরজায় সামনে পড়ে থাকতে দেখি আপনার মাথা দিয়ে রক্ত পরছিল আমরা কয়েকজন মিলে আপনাকে নিয়ে আসি। আমি ডাক্তার ডেকে এনেছিলাম, ডাক্তার এই ঔষধ লিখে দিয়েছে।
–
তারপর আমি সব ঘটনা খুলে বললাম সবাই কে। সবাই বলল যে আপনি বেচে ফিরে এসেছেন এটাই ভাগ্য ভাল। -তারপর থেকে ভয় টা খুব কাজ করত আমার ভেতরে। আমি ঐদিন ই ব্যাগ গুছিয়ে শহরে চলে আসি। কিন্তু ঐ রাতে যা হয়েছিল আমার সাথে ঐ ভয় টা আমার পিছু ছাড়ছিল না।
"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভানুধ্যায়ী এবং সম্মানিত অবদানকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।